Advertisement
০১ মে ২০২৪

হুলে ন’জন বিদ্ধ, আতঙ্ক

গত ১৭ নভেম্বর রেলশহর আদ্রায় মৌমাছির হুলে জখম হয়ে এক প্রৌঢ়া রেলকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে আদ্রার ধোবিবাঁধের কাছে মৌমাছির ঝাঁক ঘিরে ধরেছিল বছর বাহান্নর সুখিয়া হাঁড়িকে।

হুলে আহত ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

হুলে আহত ভর্তি রয়েছেন হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:১৩
Share: Save:

শহর থেকে হেঁটে একাই বাড়ি ফিরছিলেন শালকা গ্রামের প্রৌঢ়া ভাদু বাউড়ি। রবিবার বেলা সাড়ে তিনটে। পথে হঠাৎ এক ঝাঁক মৌমাছি ঘিরে ধরে হুলে বিদ্ধ করে তাঁকে। জখম ভাদুদেবী এখন রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি। তার পরে ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়া অনেকেই মৌমাছির হুলে আক্রান্ত হয়েছেন। সূত্রের খবর, রবিবার বিকেল থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত মৌমাছি জখম করেছে ন’জনকে। তাঁদের মধ্যে পাঁচ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। অন্য চার জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে।

গত ১৭ নভেম্বর রেলশহর আদ্রায় মৌমাছির হুলে জখম হয়ে এক প্রৌঢ়া রেলকর্মীর মৃত্যু হয়েছিল। কাজে যোগ দেওয়ার সময়ে আদ্রার ধোবিবাঁধের কাছে মৌমাছির ঝাঁক ঘিরে ধরেছিল বছর বাহান্নর সুখিয়া হাঁড়িকে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তার পরে আবার মৌমাছির বড়সড় উপদ্রবের খবর মিলল। পুরুলিয়া-বরাকর রাজ্য সড়ক থেকে একটি রাস্তা সাঁওতালডিহির দিকে বেঁকে যাচ্ছে। সেই বাঁকের জায়গাতেই দু’দিন ধরে উৎপাত করছে মৌমাছির ঝাঁক। রবিবার ভাদুদেবীর কিছু ক্ষণ পরেই ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন শালকা গ্রামের তিন দিনমজুর— রামু মেট্যা, লক্ষ্মণ মেট্যা ও মধু মেট্যা। একই ভাবে মৌমাছির দল ঘিরে ধরে জখম করে তাঁকে। তিন জন ভর্তি রয়েছেন সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে। একই ভাবে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে আদ্রার বাসিন্দা রঘুনাথপুরের একটি মিষ্টির দোকানের কর্মচারী ভিকি কুমারকে।

হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন রামু, লক্ষ্মণ, মধুরা। তিন জন সাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন। বাঁকের কিছুটা দূরে হঠাৎ মৌমাছির ঝাঁক আক্রমণ করে। রামুর কথায়, ‘‘মনে হচ্ছিল একসঙ্গে একশো খানা সুচ শরীরে বিঁধিয়ে দিয়েছে কেউ। কোনও মতে সাইকেল ফেলে পালাতে পেরেছিলাম।” ওই মোড়ের কাছেই মিষ্টির দোকানে কাজ করেন ভিকি। এ দিন সকালে মোড়ের অদূরে নলকূপ থেকে জল আনতে গিয়েছিল। মৌমাছি আক্রমণ করে তাঁকে। কোনও মতে রক্ষা পান ভিকি। তিনি বলেন, ‘‘শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা আর জ্বালা হচ্ছে।”

এই সমস্ত ঘটনার পরে আতঙ্কে এলাকার অনেকেই। ওই মোড়ের কাছে মিষ্টির দোকান রয়েছে। মণিহারি দোকান রয়েছে। সাইকেল মেরামতির দোকান রয়েছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে মিলন মাজি, সুজিত বাউড়িরা বলেন, ‘‘পর পর মৌমাছির আক্রমণে লোকজন জখম হচ্ছে। আমরা সবাই আতঙ্কে রয়েছি।’’ পুরনো রঘুনাথপুর মহকুমা হাসপাতালের পাশেই জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের এলাকার একটি নিমগাছের চাক থেকেই মৌমাছির দল বেরিয়ে এসে এ সব করছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের। এ দিন সেই দফতরে গিয়ে দেখা গেল, গাছের একটা ডালে ঝুলে রয়েছে চাক। অন্তত পাঁচ ফুট লম্বা। দফতরের কর্মীদের মধ্যে কয়েক জন জানান, আগে চাকটি ছোট ছিল। দিনে দিনে কলেবরে বেড়েছে। দফতরের সহকারী বাস্তুকার সব্যসাচী ভুইঁয়া জানান, মৌমাছি পর পর লোকজনকে জখম করায় কর্মীদের অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু চাকটি ভেঙে ফেলা তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন তিনি।

এ দিন দমকল ও বনদফতরে ফোন করে সমস্যার কথা জানিয়েছেন সব্যসাচীবাবু। চাকটিকে ভেঙে ফেলার জন্য আবেদন করেছেন। কিন্তু কোনও তরফেই আশ্বাস মেলেনি বলে দাবি তাঁর। রঘুনাথপুর রেঞ্জ আধিকারিক বিবেক ওঝা বলেন, ‘‘মৌমাছির চাক সরানোর কাজ সচারচর বনদফতর করে না। এই বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মীও বনদফতরের নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Injury Bee Sting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE