Advertisement
E-Paper

আলো আনতে গিয়ে হারিয়ে গেল সৌরভ

রাতে পড়ার ঘরের আলোটা নিভে গিয়েছিল। তাই রাস্তা টপকে বাবার মুদিখানা দোকান থেকে বাল্ব নিয়ে আসতে গিয়েছিল সৌরভ। কিন্তু সেই আলো জোগাড় করতে গিয়ে মেধাবী ছেলেটা চিরকালের জন্য বাড়ির সমস্ত আলো কেড়ে নিয়ে চলে যাবে ভাবতে পারেননি বাঁকুড়ার জয়পুরের পানখাউলি গ্রামের মণ্ডল বাড়ির কেউ।

স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৩১
শোকার্ত মা। ছবি:নিজস্ব চিত্র।

শোকার্ত মা। ছবি:নিজস্ব চিত্র।

রাতে পড়ার ঘরের আলোটা নিভে গিয়েছিল। তাই রাস্তা টপকে বাবার মুদিখানা দোকান থেকে বাল্ব নিয়ে আসতে গিয়েছিল সৌরভ। কিন্তু সেই আলো জোগাড় করতে গিয়ে মেধাবী ছেলেটা চিরকালের জন্য বাড়ির সমস্ত আলো কেড়ে নিয়ে চলে যাবে ভাবতে পারেননি বাঁকুড়ার জয়পুরের পানখাউলি গ্রামের মণ্ডল বাড়ির কেউ।

শুক্রবার রাতে একেবারে বাড়ির লাগোয়া রাস্তায় বালির ট্রাকের ধাক্কায় মৃত্যু হয় চণ্ডীপুর রামকৃষ্ণ ইনস্টিটিউটের নবম শ্রেণির ছাত্র সৌরভের। উত্তেজনায় জনতা কয়েকটি ট্রাকে আগুন দেন, ভাঙচুরও চলে। কিন্তু তার পর থেকে সৌরভের শোকে থম মেরে গিয়েছে গোটা এলাকা।

শনিবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, ট্রাক পোড়ার গন্ধ তখনও বাতাসে। অ্যাসবেস্টর্সের ছাউনি দেওয়া বাড়ির উঠোনে তখনও গড়াগড়ি দিচ্ছেন সৌরভের মা অন্নপূর্ণাদেবী। মাঝে মধ্যেই ছিটকে রাস্তায় চলে গিয়ে ছেলের ডাক নাম ধরে বলছেন— ‘‘আমার রাহুলকে ফিরিয়ে দাও।’’ প্রতিদিনই ওই রাস্তা দিয়ে সার সার বালি বোঝাই ট্রাক যায়। দুর্ঘটনার পর এ দিন আর বালির গাড়ি চলাচল করেনি। সেই ভাঙাচোরা রাস্তার দিকেই নির্বাক তাকিয়ে ঝিম মেরে বসে রয়েছেন মৃত ছাত্রের বাবা দেবীপ্রসাদ মণ্ডল। ভাইয়ের দু’ক্লাস উপরে পড়া দিদি পল্লবীও শোকে পাথর। জেঠিমা শ্যামলীদেবী তাকে আঁকড়ে রয়েছেন।

সৌরভ স্কুলে যেত খুড়তুতো দাদা সুরজিতের সঙ্গে। তার একটাই কথা— ‘‘বালির ট্রাক গিয়ে গিয়ে রাস্তা খারাপ হয়ে পড়েছে। সে জন্য খুব সাবধানে আমরা দু’ভাই সাইকেলে স্কুলে যেতাম। ভাইকে সেই ট্রাকই কেড়ে নিল!’’ সহপাঠীর মৃত্যুর খবর পেয়ে এসেছিল দোয়েল শ্যাম ও স্বাতী সেন। তারা বলে, ‘‘পড়াশোনায় সৌরভ খুব ভাল ছিল। ক্লাসে চতুর্থ হতো। কিন্তু সবার সঙ্গেই ওর সম্পর্ক ভাল ছিল। আমরা চাই এই পথে ট্রাক চলাচল বন্ধ হোক।’’

একই দাবি, এলাকাবাসীরও। অশোক সেন, মুরারী মণ্ডল, বংশীবদন মণ্ডলদের ক্ষোভ, ‘‘রাত-দিন বালির ট্রাক যাচ্ছে। রাস্তায় সাইকেল নিয়ে যেতেও ভয় লাগে। ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজে পাঠাতে ভয় লাগে। রাস্তা ফাঁকা না থাকায় মাঠের ফসলও গরুর গাড়ি বা ভ্যান রিকশায় তুলে আনার উপায় নেই।’’ বেলেখালি গ্রামের হারাধন পাল, কার্তিক পালদের অভিযোগ, তাঁদের আলুজমির উপর দিয়ে গাজোয়ারি করে ট্রাক নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে তাঁরা স্থানীয় হেতিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের এক সদস্যকেও জানিয়েছিলেন। কিন্তু লাভ হয়নি। কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি খাদান চালাচ্ছেন বলে গ্রামবাসীদের আপত্তি ধোপে টিকছে না বলে তাঁদের দাবি।

হেতিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান সুজাতা বিশ্বাসের বক্তব্য, কিছুদিন আগেই গ্রামবাসীর অভিযোগপত্র পেয়েছেন। কিন্তু হঠাৎই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে গেল। প্রশাসনকে এ বারে পদক্ষেপ করতে বলবেন। জয়পুরের বিডিও ধ্রুবপদ সান্ডিল্যও বলেন, ‘‘শীঘ্রই ওই গ্রামে গিয়ে বাসিন্দাদের সমস্যার কথা শুনে কী করা যায় দেখব।’’

কিন্তু বাসিন্দাদের আক্ষেপ কিছুতেই যাচ্ছে না। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘এতদিন কেউ কথা শোনেনি। এখন কে ফিরিয়ে দেবে আমাদের গ্রামের মিষ্টি ছেলেটাকে?’’

Sand Truck Student Died
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy