বিসর্জন: প্রতিমা নিয়ে পথে। —নিজস্ব চিত্র।
ধড়মড় করে ঘুম থেকে উঠে বসলেন কেউ কেউ। আর কিছু না। গভীর রাতেও স-গর্জনে মাইক বাজছে যে!
রাত একটা। গাঁধীপুকুর লাগোয়া রামপুরহাট ধূলাডাঙা রোডের বস্তিবাসী এবং অন্য বাসিন্দারা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। কিন্তু, ওই রাতেও ধূলাডাঙা রোডে তিনটি ঠাকুরের বিসর্জনের শোভাযাত্রার উচ্চস্বরের বক্সের আওয়াজ, ঢাকের আওয়াজ, আর এক সঙ্গে পাঁচটা জেনারেটরের মিলিত আওয়াজে ঘুম ভাঙল এলাকাবাসীর। অনেকেই জানলা খুলে দেখলেন, এক দল যুবক বাজনার তালে তখনও নেচে চলেছে। রাত একটা পনেরো নাগাদ গাঁধীপুকুরের ঘাটে পৌঁছয় প্রতিমা। তখন বক্সের বুক কাঁপানো শব্দ বন্ধ হল বটে। কিন্তু, আকাশ আলোয় ঝলমল করে উঠল। দেদার ফাটল নিষিদ্ধ বাজি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ বছরের শোভাযাত্রা যেন সব কিছু ছাপিয়ে গিয়েছে। রাত দু’টোর সময়েও সশব্দে মাইক বাজলেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয়নি। অভিযোগ, শুধু সোমবার রাত নয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকেই নিরঞ্জনের শোভাযাত্রা গিয়েছে কানফাটানো আওয়াজে। পুলিশ ও প্রশাসন অবশ্য দাবি করেছে, কেউ কোনও অভিযোগ জানায়নি।
অভিযোগ জমা না পড়লেও এলাকাবাসীর অনেকেই বলছেন, ‘‘রাত দশটার পরে তো বক্স বাজানো নিষিদ্ধ। তবুও না হয় পালা-পার্বনে আরও কিছু সময় বাজল। তাই বলে গভীর রাত পেরিয়েও বক্স বাজবে? নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটবে।’’ শহরের বাসিন্দা বছর সত্তরের এক প্রবীনের কথায়, ‘‘পুলিশে অভিযোগ করলে অনেক ঝক্কি। আবার পুলিশ বলবে অভিযোগ না করলে কিছু করা যাবে না। আমরা যাই কোথায় বলুন তো?’’
স্থানীয়ের জানালেন, গত বছর মহকুমাশাসকের বাংলোর পাশ দিয়ে কোনও একটি পুজোর প্রতিমা নিরঞ্জনের সময় উচ্চশব্দের বক্সের আওয়াজ পেয়ে পুলিশ, প্রশাসন একটি পুজো কমিটির বক্স বাজেয়াপ্ত করেছিল। এক জনকে আটকও করা হয়। এ বছর সেটুকুও করা হয়নি।
কী বলছে পুলিশ?
রামপুরহাটের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট তপনকুমার ঘোষাল জানান, পুজো মণ্ডপে ও বিসর্জনের শোভাযাত্রায় উচ্চশব্দে বক্স ব্যবহার করা নিয়ে নিষেধাজ্ঞার কথা পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের জানানো হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘সেই নির্দেশ না মেনে একটা দু’টো পুজো কমিটি জোরে বক্স ব্যবহার করেছে বলে শুনেছি। সেই পুজো কমিটিকে চিহ্নিত করতে পুজোর বিচারকমণ্ডলীদের বলা হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এলাকাবাসীর অবস্থা অবশ্য ঘর পোড়া গরুর মতো। তাঁরা বলছেন, ‘‘না আঁচালে পুলিশের কথায় বিশ্বাস কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy