Advertisement
E-Paper

পরিকাঠামো নিয়েই কি শুধু সমস্যা? চাপানউতোর চলছে

বছর শেষের পরীক্ষা ব্যবস্থায় যে গতিতে কাজ হত, সেটা এখন অনেক দ্রুত হয়ে গিয়েছে। এখন সেমেস্টার পরীক্ষার খাতাও কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উজিয়ে গিয়ে দেখতে হচ্ছে শিক্ষকদের। সেই ভাবে সেমেস্টারের রেজাল্ট উতরে যাচ্ছে। কিন্তু বাকি সময়ের পড়াশোনাটা কী ভাবে চলবে, সেটা নিজের দায়িত্বে সামলাতে হচ্ছে কলেজকেই।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৮ ০০:০০
বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর পাশাপাশি অন্য সমস্যাও রয়েছে।

বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকাঠামোর পাশাপাশি অন্য সমস্যাও রয়েছে।

চয়েস বেসড ক্রেডিট সিস্টেম (সিবিসিএস) চালু হওয়ার পরে বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরের দু’টি সেমেস্টার হয়ে গিয়েছে। কিছু কলেজের পড়ুয়াদের একাংশ অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার নম্বর সংক্রান্ত জটিলতায় পরীক্ষায় বসতে পারেননি। কলেজগুলির অভিযোগ মূলত পরিকাঠামোর অভাব নিয়ে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, সীমিত পরিকাঠামোর মধ্যেই বাকি কলেজগুলি এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত হতে পারছে। ফলে সমস্যাটা শুধুই পরিকাঠামোর বলে মানতে
নারাজ তাঁরা।

এই পদ্ধতিতে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা হয় তিন বছরে মোট ছ’টি সেমেস্টারে। প্রতিটি পেপারে ছ’মাসে মোট ৫০ নম্বরের পরীক্ষা হয়। তার মধ্যে সেমেস্টারের পরীক্ষায় বরাদ্দ থাকে ৪০ নম্বর। যে সমস্ত বিষয়ে প্র্যাক্টিকাল রয়েছে, সেখানে ওই ৪০ নম্বরের মধ্যে ২৫ নম্বর লিখিত পরীক্ষার জন্য থাকে। বাকি ১৫ নম্বর প্র্যাক্টিকাল পরীক্ষা হয়।

৫০ নম্বরের পেপারে ১০ নম্বর বরাদ্দ থাকে কলেজের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষায়। ১০ নম্বরের পরীক্ষাটি না দিলে বাকি ৪০ নম্বরের পরীক্ষাও দেওয়া যায় না। নিয়ম হল, ১০-এর মধ্যে পড়ুয়া কত নম্বর পাচ্ছেন, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের পোর্টালে অনলাইনে আপলোড করবে কলেজ। বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকদের দাবি,কর্মীর অভাবে এই কাজে বিস্তর সমস্যা হয়।

তাঁরা জানাচ্ছেন, বছর শেষের পরীক্ষা ব্যবস্থায় যে গতিতে কাজ হত, সেটা এখন অনেক দ্রুত হয়ে গিয়েছে। এখন সেমেস্টার পরীক্ষার খাতাও কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উজিয়ে গিয়ে দেখতে হচ্ছে শিক্ষকদের। সেই ভাবে সেমেস্টারের রেজাল্ট উতরে যাচ্ছে। কিন্তু বাকি সময়ের পড়াশোনাটা কী ভাবে চলবে, সেটা নিজের দায়িত্বে সামলাতে হচ্ছে কলেজকেই। সীমিত পরিকাঠামোয় সেটাই সমস্যার হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সিবিসিএস-এ প্রতিটি বিষয়ের থিয়োরি ও প্র্যাক্টিক্যালের আলাদা ভাবে নির্দিষ্ট ‘ক্রেডিট’ রয়েছে। থিয়োরির ক্ষেত্রে যে বিষয়ের যত ক্রেডিট, সপ্তাহে সেই বিষয়ে ক্লাসও নিতে হবে তত ঘণ্টা করে। প্র্যাক্টিক্যালের ক্ষেত্রে এক একটি ক্রেডিট পিছু সপ্তাহে ক্লাস নিতে হবে দু’ঘণ্টা করে। স্নাতক স্তরে অনার্স কোর্সে মোট ১৪২ ও প্রোগ্রাম কোর্সে মোট ১২২ ক্রেডিট থাকবে। সেমেস্টার পিছু ক্রেডিট থাকবে ২০ থেকে ২৪। সে ক্ষেত্রে সপ্তাহে প্রতি কোর্সের জন্য ক্লাস নিতে হবে ২০ থেকে ২৪ ঘণ্টা।

আগে ক্লাস হত ৪৫ মিনিটের। এখন হচ্ছে এক ঘণ্টার। কলেজ-শিক্ষকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ক্লাসের সময় বাড়িয়ে দেওয়ায় ক্লাসের সংখ্যা কমাতে হচ্ছে। প্র্যাক্টিক্যালের ক্ষেত্রে বেশি সংখ্যক পড়ুয়াকে সুযোগ দেওয়া সমস্যার হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে অনেকেই দাবি করছেন, জেলার বিভিন্ন কলেজে অনেক শিক্ষকপদ শূন্য রয়েছে। আংশিক সময়ের ও অতিথি শিক্ষক দিয়ে পড়াশোনা সামাল দেওয়া হয়। সিবিসিএস-এ পঠনপাঠনের জন্য যত জন শিক্ষক এবং যতগুলি ক্লাসঘর দরকার, সেটাই অধিকাংশ কলেজে নেই। পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে সিবিসিএস চালুর আগে আরও সময় নেওয়া দরকার ছিল বলে মনে করছেন কিছু অধ্যক্ষ।

বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালের উপাচার্য দেবনারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলছেন, “সিবিসিএস চালু করার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কেউ নয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি আয়োগ ও রাজ্য সরকারই এই সিদ্ধান্ত নেয়। তা ছাড়া আমাদের আগেই রাজ্যের আরও দু’টি বিশ্ববিদ্যালয় সিবিসিএস চালু করে দিয়েছিল। সেই দিক দিয়ে আমরা অনেক পরেই শুরু করেছি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাদের একাংশের দাবি, সিবিসিএস চালুর আগে কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করা হয়েছে। সবার মতামত নিয়েই এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। প্রত্যেকটি কলেজের থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে তাঁদের সমস্যার কথা। কলেজের বিভাগ ধরে ধরে অধ্যাপকদের কোর্সের ব্যাপারে বোঝানো হয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, সমস্যা থাকলে কলেজগুলি প্রথমেই কেন তা বিশ্ববিদ্যালয়ের নজরে আনেনি?

তা হলে এ বার কী? বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, সিবিসিএস নিয়ে ধারণা স্বচ্ছ্ব করতে কলেজে কলেজে শিবির করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক আধিকারিক বলেন, “আমরা চাই কলেজগুলি সিবিসিএস নিয়ে কী সমস্যায় পড়ছে তা আমাদের জানাক। সমস্যাগুলি ধরে ধরে আমরা সমাধানের বিষয়েও সচেষ্ট হব।”

Bankura University CBCS
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy