Advertisement
E-Paper

স্বাস্থ্য জেলায় চোখ রাঙাচ্ছে ম্যালেরিয়া

গত তিন বছরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তাদের এই দাবি বীরভূমবাসীর কাছে স্বস্তির খবর সন্দেহ নেই। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ে চিন্তার কারণও রয়েছে। কেননা, তাঁদের তথ্যই বলছে বিগত কয়েক বছর ধরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

অপূর্ব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৬ ০০:৩৫

গত তিন বছরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় কারও মৃত্যু হয়নি। স্বাস্থ্যকর্তাদের এই দাবি বীরভূমবাসীর কাছে স্বস্তির খবর সন্দেহ নেই। তবে ম্যালেরিয়া নিয়ে চিন্তার কারণও রয়েছে। কেননা, তাঁদের তথ্যই বলছে বিগত কয়েক বছর ধরে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ২০১৩ সালে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪০। তার দু’বছরের মধ্যেই ২০১৬ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দ্বিগুনেরও বেশি, ৩১৬!

সোমবার ছিল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, বীরভূমে গত তিন বছরে পৃথক ভাবে নতুন একটি স্বাস্থ্য জেলা (রামপুরহাট) গঠিত হলেও জেলায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দফতরের কর্তাদের মত, এর প্রধান কারণ সচেতনতার অভাব। পরের কারণ অবশ্যই ম্যালেরিয়ার জন্যে দায়ী প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামের বাড়বাড়ন্ত।

রাজ্যের মধ্যে এ বার পশ্চিম মেদিনীপুরেই ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বেশি। গত দু’মাসে জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। জানা গিয়েছে, জেলায় বছরে গড়ে ৪,০৬,৮৮৯ জন মানুষের রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে গড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ১,৩৬১। এর মধ্যে আবার প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামে আক্রান্ত প্রায় ২৩৩।

সাধারণত বর্ষা শুরুর আগে, বর্ষার সময় এবং বর্ষার পরে জুন মাস থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ম্যালেরিয়ার প্রকোপ দেখা যায়। ২০১৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত জেলায় ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা ৩৮ জন। এঁদের মধ্যে ৩১ জন প্লাজমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স এবং ৭ জন প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরামে আক্রান্ত। রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার ডেপুটি সিএমওএইচ (২) স্বপন ওঝা জানাচ্ছেন, রামপুরহাট ২, মুরারই ২ ব্লক এলাকায় প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম রোগীর সংখ্যা বেশি।

কেন?

রামপুরহাট ২ ব্লক মেডিক্যাল অফিসার অভিজিৎ রায় চৌধুরীর মত, ব্লকের মাড়গ্রাম এলাকায় অনেকে রাজমিস্ত্রির কাজে রাজ্যের বাইরে থাকেন। ওই সমস্ত শ্রমিকদের কাছ থেকে প্রতি মাসে গড়ে অন্তত দু’জনের দেহে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম জীবাণু পাওয়া যায়। অভিজিৎবাবুর দাবি, ঠিক সময়ে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে এঁদের চিকিৎসা করা হয় বলেই প্রাণহানি এড়ানো গিয়েছে। এই এলাকায় দিকে বিশেষ, নজর রাখা হচ্ছে বলেও দাবি করেছেন তিনি।

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস উপলক্ষে গুচ্ছ কর্মসূচির কথা শুনিয়েছেন জেলার স্বাস্থ্য কর্তারা। তাঁরা সতর্ক করছেন এই বলে— জ্বরই ম্যালেরিয়ার উপসর্গ। সঙ্গে মাথা-গা-হাত-পা ব্যথা, খিদে কমে যাওয়ার মতো লক্ষণ। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তার পরামর্শ, ‘‘জ্বর হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা আশাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত। রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ও পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর ম্যালেরিয়া হওয়ার ঝুঁকি বেশি। সব সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ও হাসপাতালে ম্যালেরিয়া রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা বিনামূল্যে করা হয়।’’

স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার কামড়ে ম্যালেরিয়া ছড়ায়। এই মশার জন্মস্থান মূলত জমা জল। তাই বাড়ির আশপাশের ছোট ছোট গর্ত বুজিয়ে দিতে হবে। ফেলে রাখা পুরনো টায়ার, ফুলের টবে, ডাবের খোলা, পরিত্যক্ত ড্রাম, অব্যবহৃত পাত্রে জল জমতে দেওয়া যাবে না। একই সঙ্গে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক, চৌবাচ্চা, জলের পাত্র সর্বদা ঢেকে রাখতে হবে। এবং অবশ্যই ঘুমোনোর সময় মশারি টাঙাতে হবে।

ম্যালেরিয়ার মোকাবিলায় ওই পরামর্শগুলিকে সামনে রেখে প্রচার চালানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু, রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার নিজস্ব ভবন না থাকায় নানা রকমের সমস্যা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন অনেকে। রক্তের নমুনা সংগ্রহ করার জন্য ‘স্লাইড’ এবং ওষুধ মজুত করার স্টোর রুম এখনও তৈরি করা হয়নি। এ ব্যাপারে সহায় সিউড়ি। সেখানকার রিজার্ভ স্টোরের উপরেই নির্ভর করতে হয় রামপুরহাট স্বাস্থ্যজেলাকে। এই রামপুরহাট স্বাস্থ্য জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ব্রজেশ্বর মজুমদার জানান, সমস্যা সমাধানে ঘর ভাড়া নেওয়ার চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্রে খবর, অল্প ক্ষেত্রে হলেও ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে ‘মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট’ গড়ে উঠছে। এখন ম্যালেরিয়ায় যে ওষুধ দেওয়া হয়, সেটি এসিটি বা আর্টিমিসিনিন থেরাপি। কোনও কোনও ক্ষেত্রে এই এসিটি কাজ করছে না বলে জানা যাচ্ছে। ক্লোরোকুইন আগেই প্রতিরোধ হয়ে গিয়েছিল। পরে এসিটি চালু হয়। দেখা যাচ্ছে, এখন বেশ কিছু ক্ষেত্রে এই আর্টিমিসিনিনও কাজ করছে না।

একটি সূত্রের দাবি, ম্যালেরিয়ার জীবাণুর মধ্যে মাল্টি ড্রাগ রেজিস্ট্যান্ট (এমডিআর-১) নামে যে জিনটি রয়েছে সেটিরও জিনগত পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। পুরনো জিনটির গঠন বদলে নতুন যে জিনটি তৈরি হয়েছে সেটি-সহ ওই পরজীবীর আরও কয়েক’টি জিনেরও গঠনগত পরিবর্তন হয়েছে। জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার কথায়, ‘‘ম্যালেরিয়ার জীবাণু নিজেকে বাঁচাতে জিনের পরিবর্তন ঘটিয়ে ফেলছে। কিন্তু এখনও ওষুধের কম্বিনেশনের বদল হয়নি।’’ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে ওষুধের পরিবর্তন ঘটালে পারলে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর মোকাবিলা করা সহজ হবে বলে মনে করছেন তিনি।

malaria birbhum doctor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy