রেলের বিদ্যুৎ, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল, টেলিকমের মতো বিভিন্ন দফতর ঘুরে সেই জৌলুস চোখে পড়েনি। গত বছরেও যে সব দফতর বিভিন্ন মডেল তৈরি করে বিদ্যুতের সাহায্যে তা চালিয়ে পৌরাণিক গল্প বা অন্যান বিষয় তুলে ধরত, সেই দফতরগুলি এ বার শুধু ছোটাখাটো মণ্ডপ তৈরি করেই পুজো সারছে।
বিশ্বকর্মা পুজো ঘিরে রেলের বিভিন্ন দফতরে চলে ভিড় টানার একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা। বিরাট মণ্ডপ, সেই সঙ্গে আলোর গেট তৈরি করে জমকালো পরিবেশ তৈরি করতেন উদ্যোক্তারা। এ বার সেই ছবিটা পুরোপুরি অনুপস্থিত। পুজো উপলক্ষে প্রচুর দোকান বসত মণ্ডপ লাগোয়া এলাকায়। কিন্তু শনিবার পুজোর আগের সন্ধ্যায় মণ্ডপগুলি ঘুরে চোখে পড়েনি সেই চেনা ব্যস্ততা।
কিন্তু কেন এই অবস্থা?
প্রতিবছরই বড়মাপের মণ্ডপ তৈরি করে ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরে পুজো করেন রেলকর্মী সংগঠনের নেতা রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। এ বার কার্যত নমো নমো করে পুজো করছেন তাঁরা। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘প্রতিটি দফতরের কর্মীরা নিজেরাই চাঁদা তুলে বিশ্বকর্মা পুজো করেন। কিন্তু এ বার বিশ্বকর্মা পুজো শেষ হওয়ার ক’দিনের মধ্যেই দুর্গাপুজো শুরু হয়ে যাওয়ায় দু’টো পুজোর খরচ সামলানো কর্মীদের পক্ষে সম্ভব নয় বলেই বেশিরভাগ দফতরেই ছোট মাপের পুজো হচ্ছে।” পুজোর পরে অন্তত তিন-চার দিন মণ্ডপে প্রতিমা থাকত। এ বারেও সেখানে ব্যতিক্রম। মহালয়ার দিনেই বেশির ভাগ দফতরের বিসর্জন হয়ে যাচ্ছে। উদ্যোক্তাদের কথায়, ‘‘বেশি দিন মণ্ডপে ঠাকুর রাখলে খরচও বাড়ে। তাই তাড়াতাড়ি বিসর্জন হবে।’’
তবে আদ্রার বিশ্বকর্মার জাঁকজমক কিছুটা হলেও এ বার রক্ষা করছে বাঙালি সমিতির মাঠে মিলনমেলা কমিটির ২৩ ফুটের বিশ্বকর্মা। গত পাঁচ বছর ধরে এই কমিটি বিশাল মাপের বিশ্বকর্মা মূর্তি গড়ে পুজো করছে। ফি বছরই উচ্চতা বাড়ছে প্রতিমার। এ বারও বসছে মেলা। তাই ভিড়ও রেকর্ড হবে বলে উদ্যোক্তাদের আশা।
অন্য দিকে, এই বছরেও অভিনব বিশ্বকর্মা গড়ে চমক দিয়েছেন সাঁওতালডিহি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাস্তুকার সুদীপ সরকার। বছর দশেক ধরে সাঁওতালডিহিতে পুজো শুরু করেছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মীরা। কলোনির মধ্যে শিশুতীর্থ সংলগ্ন মাঠে নিজেরাই চাঁদা দিয়ে পুজো করেন কর্মীরা। মূর্তি গড়ার দায়িত্ব থাকে সুদীপবাবুর উপরে। এ বছর দেশলাই কাঠি দিয়ে মূর্তি গড়েছেন তিনি। পঁচিশ হাজার দেশলাই কাঠি দিয়ে আড়াই মাস ধরে কেরলের কথাকলি নৃত্য শিল্পীদের আদলে মূর্তি গড়েছেন সুদীপবাবু। পুজোর দিনে এখানে পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া হয়। আশেপাশের গ্রাম থেকে দর্শনার্থীরা আসেন পুজো দেখতে।”