বাঁকুড়ার পথে তৃণমূল। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তোলা নিজস্ব চিত্র।
পেটের রোগে এক মহিলার মৃত্যু ও আরও কয়েকজনের অসুস্থ হয়ে পড়ায় পুরসভার সরবরাহ করা জল দূষিত কি না সেই প্রশ্ন তুলেছিলেন বাসিন্দারা। কিন্তু সে সবকে পিছনে ফেলে পুরভবনে হামলা চলল এবং সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাঁকুড়া শহরের রাজনৈতিক নেতারা নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনে নেমে পড়লেন। বৃহস্পতিবার জেলা তৃণমূলের এক নেতা সরাসরি পথসভার মঞ্চ থেকে সিপিএম-কংগ্রেসকে ধোলাই, পেটাই করারও হুমকি দিলেন।
পুরসভার পাইপলাইনের জল দূষিত হয়ে এলাকায় ডায়েরিয়া ছড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার পথ অবরোধে নেমেছিলেন ইদগা মহল্লার বাসিন্দারা। তাঁদেরই বেশ কয়েকজন পুরভবনে ঢুকে ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। ওই ঘটনায় সিপিএমের স্থানীয় কাউন্সিলর ও এক জেলা নেতা-সহ মোট ২১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল পরিচালিত এই পুরসভা। পরে ইদগা মহল্লার এক বাসিন্দাও গ্রেফতার হয়।
কিন্তু ওই ঘটনাকে ঘিরে রাজনীতির জল গড়িয়েছে অনেকখানি। প্রথম থেকেই এই ঘটনায় রাজনৈতিক রং লেগে যায়। তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হয়, সিপিএমের প্ররোচনাতেই ছক কষে এই হামলা হয়েছে। এই অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবি করে বুধবার বাঁকুড়ায় প্রতিবাদ মিছিল করে পথসভা করে সিপিএম ও কংগ্রেস জোট। পরে বাঁকুড়া সদর থানায় গিয়ে জোটের নেতারা বিক্ষোভও দেখান। আর তারই পাল্টা হিসেবে বৃহস্পতিবার পুরসভায় হামলার প্রতিবাদে ধিক্কার মিছিল বের করল তৃণমূল।
মিছিল শেষে মাচানতলার মোড়ের পথসভা হয়। সেখানেই বিরোধীদের দেখে নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জয়দীপ চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘সিপিএম-কংগ্রেস জেনে রেখো, বাঁকুড়াকে অশান্ত করতে চাইলে ধোলাই হবে, পেটাই হবে।’’ এখানেই থেমে না থেকে তিনি আরও বলেন, ‘‘আজকে যা দেখছেন তা ট্রেলার। এরপরে আমরা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে বুঝে নেবো। ১৯ মে-র পরে চড়াম চড়াম করে ঢাক বাজবে।’’ এর প্রেক্ষিতকে সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রতীপ মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, ‘‘ভোটের ফলাফল খারাপ হবে টের পেয়েই তৃণমূলের কর্মীরা মুষড়ে পড়েছেন। আর তাই সন্ত্রাস চালানোর হুমকি দিয়ে দলের কর্মীদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করছে দলের নেতারা। এটাই ওদের সংস্কৃতি।’’
ওই মঞ্চে সিপিএমকে একহাত নিয়ে বাঁকুড়ার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত বলেন, “পরীক্ষায় এটা প্রমাণিত হয়েছে, পুরসভার পাইপলাইনের জলে কোনও জীবাণু নেই। তারপরেও সিপিএম সাধারণ মানুষকে উস্কে দিয়ে বিশৃঙ্খলা পাকাতে পুরসভার জল দূষিত জল বলে রটাচ্ছে।’’ তাঁর দাবি, এই ঘটনার পরে পুরসভার বিরোধী কাউন্সিলরা কেউ একবারও তাঁর কাছে খোঁজখবর নেননি। এ থেকেই তাঁর কাছে পরিষ্কার, ভাঙচুরের ঘটনায় বিরোধী যোগ রয়েছে।
পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান শম্পা দরিপা বর্তমানে কাউন্সিলর। তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন। এ দিন তিনি বলেন, “পুরসভায় হামলার ঘটনা কোনও ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। জোটের তরফে আগেই তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। পারিবারিক কাজে আমি কলকাতায় রয়েছি। তাই পুরসভায় যেতে পারিনি।”
এ দিকে ইদগা মহল্লা এলাকায় এ দিনও স্বাস্থ্য শিবির চলেছে। এলাকার কয়েকটি পুকুরের জল পরিশোধন করা হয়। নতুন করে ডায়েরিয়ায় অসুস্থ হওয়ার খবর নেই বলেই জানিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy