Advertisement
E-Paper

দেড় দশক আগের ক্ষতিপূরণেই সায়

ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁরা টাকা নেননি। এ বার নিলেন। তা-ও সেই তৎকালীন নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের হারেই।বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই ছবি দেখা গেল প্রশাসনের উদ্যোগে শিবপুর মৌজায় ক্ষতিপূরণ সংগ্রহের শিবিরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৩৯
মন্ত্রীর উপস্থিতিতে খামে চেক গ্রহণ। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

মন্ত্রীর উপস্থিতিতে খামে চেক গ্রহণ। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

ন্যায্য ক্ষতিপূরণের দাবিতে গত প্রায় ১৫ বছর ধরে তাঁরা টাকা নেননি। এ বার নিলেন। তা-ও সেই তৎকালীন নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের হারেই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে এমনই ছবি দেখা গেল প্রশাসনের উদ্যোগে শিবপুর মৌজায় ক্ষতিপূরণ সংগ্রহের শিবিরে। যেখানে ক্ষতিপূরণ প্রাপক প্রায় হাজার জনের মধ্যে প্রথম দিন চেক নিলেন ৮১ জন কৃষিজীবী। যদিও স্থানীয় রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েতে এ দিনের ওই শিবিরে ক্ষতিপূরণ নিতে আসতে দেখা যায়নি জমি আন্দোলনকারীদের কাউকেই।

শিবিরে উপস্থিত ছিলেন শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন উন্নয়ন পর্ষদের সভাপতি তথা রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘পর্ষদের তহবিল থেকে তৎকালীন বকেয়া বাবদ বিঘে পিছু ২০ হাজার টাকা দরে চেক দেওয়ার প্রক্রিয়া আমরা শুরু করেছি। এ দিন কাশীপুর, নুরপুর ও সাবিরগঞ্জ এলাকার শতাধিক জমিমালিক, বর্গাদার এবং পাট্টাদাররা হাজির হন। প্রয়োজনীয় নথি খতিয়ে দেখে তাঁদের হাতে চেক দেওয়া হয়েছে।”

শিবপুরে শিল্পতালুক হবে জানিয়ে ২০০১ সালে প্রায় ৩০০ একর জমি নেয় সরকার। বাম জমানায় অধিগৃহীত ওই জমির জন্য বিঘে পিছু ৬৮ হাজার টাকা ধার্য হলেও ৪৮ হাজার টাকা মিলেছিল বলে অভিযোগ। অনেকেই আবার ক্ষতিপূরণের চেক নেননি। এত বছরেও শিল্প আসেনি। পড়ে থাকা সেই জমিতেই তৃণমূল সরকার ১৩১ একরে ‘গীতবিতান’ আবাসন, ২০ একর জমিতে বিশ্ববাংলা বিশ্ববিদ্যালয়, ৫০ একরে ‘বিশ্ব ক্ষুদ্র বাজার’ (কুটির শিল্পের জন্য) ও ১০ একরে আইটি-হাবও গড়ছে সরকার। যদিও শিল্পের জন্য অধিগৃহীত জমিতে আবাসন নয়, গড়তে হবে শিল্পই— এই দাবিতে অনড় ক্ষতিগ্রস্ত জমিদাতাদের একাংশ। সুপ্রিম কোর্টে সিঙ্গুর মামলার রায়ের পরে গত সেপ্টেম্বর থেকে লাগাতার ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তাঁরা। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে একাধিক বার প্রকল্প এলাকায় ভাঙচুর চালিয়ে কাজ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে। এমনকী, জমি ফেরত চেয়ে হাইকোর্টে মামলাও হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। গত শনিবারই শিবপুরে এসে প্রতিবাদ সভা করে চাষিদের আইনি লড়াইয়ে সব রকম সাহায্য করার আশ্বাস দেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও। আন্দোলনকারীদের দাবি, চতুর্দিক থেকে চাপে পড়েই ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদল ও স্থানীয় প্রশাসন। যদিও অতীতে লক্ষ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ (রাস্তা লাগোয়া জমির ক্ষেত্রে ৯ লক্ষ এবং বাকি ক্ষেত্রে ৮ লক্ষ টাকা) দেওয়ার যে আশ্বাস পার্থ চট্টোপাধ্যায়রা দিয়েছিলেন, তা থেকে কার্যত ১৮০ ডিগ্রি অবস্থান ঘুরিয়ে নিয়েছে বর্তমান তৃণমূল সরকার। যাকে সরাসরি এলাকার কৃষিজীবীদের সঙ্গে ‘প্রতারণা’ বলে আগেই অভিযোগ করেছেন ওই আন্দোলনকারীরা।

খামে মিলল টাকা। ছবি:বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।

এলাকায় এত দিন মাইকে প্রচার চলেছিল। সেই মতো এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ পঞ্চায়েত দফতরে ক্ষতিগ্রস্তেরা জড়ো হতে শুরু করেন। চন্দ্রনাথ, জেলার সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, এসএসডিএ-র কর্তা, ব্লক ভুমি ও ভুমি সংস্কার আধিকারিক, পঞ্চায়েত প্রধান প্রীতিকণা দাস, নুরপুর ও কাশীপুরের দুই পঞ্চায়েত সদস্য সুবল পাল এবং জামাল খান, তৎকালীন শ্রীনিকেতন-শান্তিনিকেতন কৃষিজমি বাঁচাও কমিটির সভাপতি তথা তৃণমূল নেতা মোজাম্মেল হকের উপস্থিতিতে শুরু হয় শিবির। তবে দোতলার একটি ঘরে আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু চাষিকে বন্ধ খাম দেওয়ার পরে সংবাদমাধ্যমকে বের করে দেওয়া হয়। দরজা বন্ধ করেই চলে বাকি প্রক্রিয়া। পরে একে একে খাম হাতে ক্ষতিগ্রস্তদের বের হতে দেখা যায়। মন্ত্রী বললেও কারও হাতে চেক দেখা যায়নি। বরং খাম থেকে অনেককে বড় অঙ্কের টাকা বের করতে দেখা গিয়েছে। কেন, তার সদুত্তর না দিয়ে প্রীতিকণাদেবী বলেন, “পঞ্চায়েত কার্যালয় থেকে বকেয়া বিঘে পিছু ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কর্মসূচি শুরু হয়েছে। এ দিন সাবিরগঞ্জ, নুরপুর, কাশীপুরের ১১০ জনকে চেক দেওয়ার জন্য ধার্য করা হয়েছিল। ৮১ জনকে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৯ জনের নথিতে সমস্যা থাকায় প্রয়োজনীয় কাগজ চাওয়া হয়েছে।” পঞ্চায়েত সূত্রের দাবি, প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১০৪৯ জনকে বকেয়া ক্ষতিপূরণের মেটানো হবে। এলাকা ভিত্তিক তালিকা ধরে ধরে অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত শিবির চলবে।

এ দিকে, আন্দোলনকারীদের দাবি, শাসকদলের হুমকির মুখে ওই কৃষিজীবীরা ক্ষতিপূরণ নিয়েছেন। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘আগের সরকারও ওই পরিমাণ টাকাই দিচ্ছিল। এত দিন কেউ সেই টাকা নিলেন না। অথচ এখন একই পরিমাণ টাকা নিতে চলে গেলেন। এটা কি খুব স্বাভাবিক ঘটনা?’’ হুমকির অভিযোগ অবশ্য চন্দ্রনাথ উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে, এ দিন যাঁরা টাকা নিলেন, সেই সুপুরের জমিমালিক অষ্টবালা বসাক, কাশীপুরের পাট্টাদার আনসার খান, রহমান খান, ডাঙাপাড়ার বদরুন বিবিরা বললেন, ‘‘এই টাকাটুকুও যদি আর না পাই? টাকাটা তাই নিতেই হতো।’’

Compensation
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy