Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কালপাথরে মেলার দুঃখ ঘুচিয়ে দিয়েছে উৎসব

 আক্ষেপ ঘুচেছে বাসিন্দাদের। এত দিন গ্রামে মেলা হতো না। বছর দশেকের বেশি সময় ধরে রামকৃষ্ণ মিশনের কল্পতরু উৎসব এখন রীতিমতো মেলার চেহারা নিয়েছে। তাই বাঁকুড়া ১ ব্লকের কালপাথরের বাসিন্দারাই শুধু নয়, এই উৎসব দেখতে ভিড় করেন আশপাশের গাঁ-গঞ্জের লোকজনও।

ভোজ: চলছে নরনারায়ণ সেবা। নিজস্ব চিত্র

ভোজ: চলছে নরনারায়ণ সেবা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৯
Share: Save:

আক্ষেপ ঘুচেছে বাসিন্দাদের। এত দিন গ্রামে মেলা হতো না। বছর দশেকের বেশি সময় ধরে রামকৃষ্ণ মিশনের কল্পতরু উৎসব এখন রীতিমতো মেলার চেহারা নিয়েছে। তাই বাঁকুড়া ১ ব্লকের কালপাথরের বাসিন্দারাই শুধু নয়, এই উৎসব দেখতে ভিড় করেন আশপাশের গাঁ-গঞ্জের লোকজনও। বৃহস্পতিবার মেলার শেষ দিনের ভিড় সে কথাই প্রমাণ করে দিল।

সোমবার থেকে কালপাথরে শুরু হওয়া এই উৎসবে কী ছিল না? পালাকীর্তন থেকে যাত্রাপালা, পুতুল নাচ, বাউল গানের আকর্ষণ তো ছিলই। সেই সঙ্গে নাগরদোলা থেকে মনোহরি জিনিসপত্রের দোকানও বসেছিল। ফলে সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই মেলায় ভিড়ের ঠেলায় কেউ হারালেন টুপি, কেউ বা মাফলার। কালপাথরের বাসিন্দা বিমা কর্মী রজত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই তল্লাটে মেলাই ছিল না। সবার পক্ষে তো বিষ্ণুপুর মেলা বা জেলার অন্য কোনও মেলায় যাওয়া সম্ভব হয় না। তবে এখন সেই আক্ষেপ পুষিয়ে দিয়েছে এই উৎসব।”

উৎসবের ব্যবস্থাপক বাঁকুড়া রামকৃষ্ণ মঠের স্বামী অভয়াত্মানন্দ জানান, শেষ দিন নরনারায়ণ সেবায় উপস্থিত ছিলেন কুড়ি হাজারেরও বেশি মানুষ। প্রতি দিনই সকাল থেকে শুরু হতো নানা অনুষ্ঠান। রাতে পালাকীর্তন, যাত্রাপালা, কবিগান, পুতুল নাচ দেখতে শীতের পরোয়া না করেই ভিড় জমিয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।

কালপাথরে রামকৃষ্ণ মিশনের এই কল্পতরু উৎসব এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে। এলাকার প্রবীণ বাসিন্দা লক্ষ্মণ মণ্ডল বলেন, “যাত্রা, পালাকীর্তনের টানে আগে কত দূরে দূরে ছুটে যেতাম আমরা। এখন এই মেলার জন্য আর বাইরে যেতে হয় না। সারা বছর আমরা এই মেলার অপেক্ষায় থাকি।”

কেবল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গ্রামবাসীদের স্বাদ মেটানোই নয়, রামকৃষ্ণ মিশনের এই উৎসব ব্যবসায়ীদের কাছেও বড় পাওনা। উৎসবে মনোহারী জিনিসপত্রের সম্ভার নিয়ে বসেছিলেন ছাতনার ভগবানপুরের বাসিন্দা কানন বাউরি, বাঁকুড়ার কেশড়ার বাসিন্দা উদয় বাউরি। তাঁরা বলেন, “এই উৎসবে গ্রাম উজাড় করে লোকজন আসেন। তাই বেচাকেনাও জমে যায়। প্রতি বছরই এই উৎসবে আমরা আসি।’’

মেলায় জিলিপির দোকান করেছিলেন বাঁকুড়ার কেঞ্জাকুড়ার বাসিন্দা গোপাল মোদক। ক্রেতাদের হাতে গরম জিলিপি ভর্তি প্লেট তুলে দিতে দিতেই গোপালবাবু বলেন, “এই মেলায় বহু বছর ধরেই আসছি। তাই অনেকেই আমাকে চিনে গিয়েছেন। মেলায় আসবেন আর আমার দোকানের জিলিপি খাবেন না, এমন মানুষ সত্যি বলতে কমই রয়েছেন।”

মেলায় জমাটি ভিড় ‘সপরিবার কুপন’-এর দোকানে। সেখানে ১০ টাকার কুপন কিনলেই থালা, বাটি, গ্লাস, গামলা, প্রেশার কুকারের মতো পুরস্কারের সুযোগ রয়েছে। তাই ভাগ্য পরীক্ষা করার সুযোগ ছাড়তে নারাজ কালপাথর সংলগ্ন কুস্তোড়ের বাসিন্দা গদাধর রক্ষিত, পোয়াবাগানের বাসিন্দা গোপাল লক্ষণেরা। তাঁরা কুপন কিনেই নম্বর দেখতে হামলে পড়ছিলেন।

বুধবার রাতে নাগরদোলায় চড়তে গিয়ে ভিড়ের ঠেলায় মাথার টুপি খুইয়েছেন গণেশ বাউরির চার বছরের ছেলে পল্টু। এ দিন নরনারায়ণ সেবায় প্রসাদ নিতে এসেও নাগরদোলার সামনে ছেলের ফেলে যাওয়া টুপির একপ্রস্থ খোঁজ করলেন তিনি। শেষে ব্যাজার মুখে বলেন, ‘‘যা ভিড়, টুপি কি আর পড়ে থাকে!’’

বাঁকুড়া রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী কৃত্তিবাসানন্দ বলেন, “কালপাথরের কল্পতরু উৎসব এখন মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে। চার দিন ধরেই ভিড়ের চাপে গমগম করেছে আশ্রম।” উৎসবের শেষ দিন ধর্মসভায় উপস্থিত ছিলেন কামারপুকুর রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী লোকোত্তরানন্দ, পটনা রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রমের স্বামী সুখানন্দ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Festival People
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE