Advertisement
E-Paper

ভক্তেরা ভোগান্তির শিকার তারাপীঠে

পূর্ত (সড়ক) দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, শনিবার রাতের মধ্যেই তারাপীঠে দ্বারকা সেতু সংস্কারের কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ শেষ হতে গড়িয়ে গেল রবিবার দুপুর। ফলে এ দিন সকাল থেকে মন্দিরমুখী দর্শনার্থীদের দিনভর চরম ভোগান্তির শিকার হতে হল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ০১:০৫
সেতুতে ভক্তের মিছিল।

সেতুতে ভক্তের মিছিল।

পূর্ত (সড়ক) দফতরের আধিকারিকরা জানিয়েছিলেন, শনিবার রাতের মধ্যেই তারাপীঠে দ্বারকা সেতু সংস্কারের কাজ শেষ হবে। কিন্তু কাজ শেষ হতে গড়িয়ে গেল রবিবার দুপুর। ফলে এ দিন সকাল থেকে মন্দিরমুখী দর্শনার্থীদের দিনভর চরম ভোগান্তির শিকার হতে হল। সমান নাকাল হলেন তারাপীঠের উপর দিয়ে যাওয়া রামপুরহাট–সাঁইথিয়া, রামপুরহাট–বুধিগ্রাম, রামপুরহাট–কান্দি ভায়া হাজিপুর রুট-সহ মুর্শিদাবাদ জেলার সঙ্গে সংযোগকারী অন্যান্য রুটের বাসিন্দারাও।

পূর্ত (সড়ক) বিভাগের বীরভূমের নির্বাহী বাস্তুকার আজফার আলি বলেন, ‘‘নদীতে জল বাড়া-কমার উপর নির্ভর করে কাজ করতে হয়েছে। সে কারণেই শনিবার রাতের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়নি। তবে কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করেছেন।’’ এ দিকে তারাপীঠের দ্বারকা সেতুর বেহাল দশায় দ্বারকা নদীর উপর আর একটি বিকল্প সেতু নির্মাণ (কেবলমাত্র পথচারী এবং ছোট যানবাহন চলাচল করবে) করতে উদ্যোগী হল প্রশাসন। সে জন্য পূর্ত (সড়ক) দফতরকে বিস্তারিত প্রোজেক্ট রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দিলেন তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তারাপীঠে দ্বারকা সেতুর সুরক্ষার জন্য স্থায়ী ভাবে সেতু সংলগ্ন নদী বাঁধ ঢালাইয়ের জন্য পূর্ত (সড়ক) দফতরকে নির্দেশ দেন আশিসবাবু। তবে পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রির্পোট ইতিমধ্যেই দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারের কাছে জমা করা হয়েছে। ওই সেতুর সঙ্গেই মুনসবা থেকে তারাপীঠ পর্যন্ত রাস্তাটি আরও চওড়া করারও পরিকল্পনা রয়েছে দফতরের।

শনিবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তারাপীঠের দ্বারকা সেতুর সঙ্গে সংযোগকারী অংশের মাটি জলের তোড়ে ধুয়ে যাওয়ার খবর জানাজানি হয়। প্রশাসনও এরপর নড়েচড়ে বসে। দুপুরের দিকে মেরামতির কাজও শুরু হয়। রাস্তা কেটে দেওয়ার জন্য সেতুর উপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ভোগান্তির মধ্যে পড়েন তারাপীঠে আসা ভক্তেরা। শনিবার রাতের মধ্যে মেরামতির কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছিলেন পূর্ত (সড়ক) বিভাগের আধিকারিকরা। কিন্তু রবিবার দুপুর ২টো পর্যন্ত দেখা যায় তখনও সেতু মেরামতির কাজ চলছে। পরে দুপুর ৩টে নাগাদ সেতু সংস্কারের কাজ শেষ হয়। তারপরেই সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচলও শুরু হয়।

সেতুর উপর পথজুড়ে চলছে রাস্তা সংস্কার।

মন্ত্রী তথা তারাপীঠ-রামপুরহাট উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান এ দিন সকালে তারাপীঠে গিয়ে পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং মেরামতির কাজ দ্রুত শেষ করার জন্য তদারকি করেন। আশিসবাবু তখন বলেছিলেন, ‘‘আশা করছি দুপুর ১টার মধ্যে তারাপীঠ সেতুর উপর দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে যান চলাচল শুরু করা যাবে। দ্বারকা নদীতে আরও একটি বিকল্প সেতু তৈরির ভাবনা চলছে। সে জন্যে পূর্ত দতরের বিভাগীয় বাস্তুকারদের সঙ্গে কথাও হয়েছে। এ ছাড়া সেতু সংলগ্ন নদীবাঁধ সুরক্ষিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

কিন্তু দুপুর ১টার পর তারাপীঠে গিয়ে দেখা যায়, তখনও সেতু মেরামতি করার জন্য কেটে দেওয়া রাস্তার গর্তে বালি, পাথর ইত্যাদি ফেলার কাজ চলছে। সেতু দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। তাই পায়ে হেঁটে হাজার-হাজার ভক্তকে তারা মা দর্শন করতে যেতে হয়। এ দিকে, সেতু মেরামতির জন্য দ্বারকা নদীর অনেক আগে থেকেই গাড়ি আটকে দেওয়া হয়। ফলে বিশেষত বয়স্কদের ভিড়ে ঠেলাঠেলি করে যাতায়াত করতে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। প্রত্যেককেই অটো বা ট্রেকার ধরতে তারাপীঠ সেতু থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরের আটলা মোড় পর্যন্ত হেঁটে যেতে হয়।

উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত থেকে জনস্বাস্থ্য কারিগরি বিভাগের কর্মী তমাল দাস সপরিবারে ১২ জনকে নিয়ে শুক্রবার তারাপীঠ এসেছিলেন। শুক্রবার থেকেই টানা বৃষ্টিতে দ্বারকা নদের জল বেড়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখেছেন তাঁরা। সেই সঙ্গে দ্বারকা সেতুর সংযোগকারী অংশের জলের তোড়ে মাটি সরে যাওয়ার ঘটনাও নিজের চোখে এসে দেখেছেন। তমালবাবু বলেন, ‘‘এ সব ক্ষেত্রে প্রশাসন আরও বেশি তৎপরতার সঙ্গে কাজ করা উচিত ছিল। তাহলে এত মানুষের ভোগান্তি হত না।’’ অন্য দিকে, এ দিনই দুপুরে পরিবারের ছয় সদস্যকে নিয়ে হুগলি জেলার কামারকুণ্ডু থেকে তারাপীঠে দর্শনে এসে এই ভাবে ভোগান্তির মধ্যে পড়বেন ভাবতে পারেননি সুশীল হালদার। তাঁর অভিজ্ঞতা, ‘‘অটো এমন জায়গায় নামিয়ে দিল প্রথমে তো তারাপীঠ কী ভাবে পৌঁছব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। তারপর ছোট ছোট ছেলেমেয়ে বয়স্কদের নিয়ে প্রায় ১০ মিনিট হাঁটার পর সেতুর উপর পৌঁছে বুঝতে পারলাম তারাপীঠ এলাম।’’

কিন্তু ফের যদি সেতুর ক্ষতি হয় সেই আশঙ্কায় তারাপীঠের বাসিন্দারা ও ভক্তেরা। তাঁদের দাবি, সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণে প্রশাসনের আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। তবে পূর্ত দফতরের আশ্বাস, তাঁরা সেতু নিয়ে সজাগ। সেতু সংলগ্ন নদীর পাড়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন্যও তাঁরা সচেষ্ট।

—নিজস্ব চিত্র।

Tarapith Pilgrims Bridge rampurhat kamarkundu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy