Advertisement
E-Paper

পিস্তলের কারবার চলছিল, দাবি করলেন পুলিশ কর্তা

আগে খোদ রঘুনাথপুর শহরের ভিতরেই মিলেছিল আস্ত অস্ত্র কারখানা। এ বার শহরের বাইরে বেড়োর জগন্নাথডি থেকে মিলেছে পিস্তল। সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ। তবে কি রঘুনাথপুরকে অস্ত্র কারবারিরা ‘নিরাপদ আস্তানা’ হিসেবে গড়ে তুলছে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৫
উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্র।—নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার করা আগ্নেয়াস্ত্র।—নিজস্ব চিত্র

আগে খোদ রঘুনাথপুর শহরের ভিতরেই মিলেছিল আস্ত অস্ত্র কারখানা। এ বার শহরের বাইরে বেড়োর জগন্নাথডি থেকে মিলেছে পিস্তল। সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির যন্ত্রাংশ। তবে কি রঘুনাথপুরকে অস্ত্র কারবারিরা ‘নিরাপদ আস্তানা’ হিসেবে গড়ে তুলছে?

বছরখানেকের মধ্যে পরপর দু’টি ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশকে।

আগেরবার পুলিশি অভিযানে উদ্ধার হয়েছিল প্রচুর সংখ্যায় আধুনিক রিভলভারের খোল সমেত কার্তুজ। এ বারও যে তিনটে পিস্তল মিলেছে, তাও হালআমলের। তবে পুলিশকে যা ভাবাচ্ছে, তা হল ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া পিস্তল তৈরির সরঞ্জাম। ওই সমস্ত যন্ত্রপাতি দিয়ে পিস্তল তৈরি হতো বলে দাবি করছেন পুলিশ আধিকারিকরা।

তা ছাড়া ধৃতেরা তিনজনই বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা। বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র তৈরির দুনিয়ায় মুঙ্গেরের নাম মাহাত্ম্যও আছে। ফলে এই ঘটনাকে মোটেই সহজ ভাবে নিতে পারছেন না পুলিশ আধিকারিকরা।

পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারের মন্তব্য, ‘‘খুব সম্প্রতি ওই তিনজন জগন্নাথডিতে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে ঘাঁটি গেড়েছিল। ওরা আগ্নেয়াস্ত্র তৈরি করছিল। বিশেষ সূত্রে খবর পেয়ে অভিযান চালিয়ে তাদের ধরা হয়েছে। তবে এখনও অধরা ওই বাড়ির মালিক পেশায় লোহার কারবারি শেখ ইমতিয়াজ।’’

বৃহস্পতিবার রাতে রঘুনাথপুর শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে বেড়ো গ্রামের জগন্নাথডিতে অভিযান চালায় রঘুনাথপুর থানার পুলিশ। ওই বাড়ি থেকে ধরা পড়ে মুঙ্গেরের বাসিন্দা মহম্মদ বদরুদ্দিন, মহম্মদ ফিরোজ ও মহম্মদ বাজির। তাদের কাছ থেকে ম্যাগাজিন সমেত আধুনিক ৭.৬৫ এমএমের তিনটে পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়াও মিলেছে উকো, হাতুড়ি, ড্রিল করার মেশিন-সহ কিছু যন্ত্রপাতি।

পুলিশের দাবি, ওই যন্ত্রগুলি পিস্তল তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। বদরুদ্দিন ও ফিরোজের কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য পুলিশ তাদের পাঁচদিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে।

প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, ধৃতেরা সম্প্রতি বেড়ো গ্রামের বাসিন্দা লোহার ব্যবসায়ী শেখ ইমতিয়াজের বাড়িটি ভাড়া নিয়ে সেখানে পিস্তল তৈরির কাজ শুরু করেছিল। তবে রঘুনাথপুর শহরে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র তৈরির কারখানার সঙ্গে এখানকার কারবারের কিছুটা তফাত রয়েছে। জেলা পুলিশের এক আধিকারিকের দাবি, ‘‘আগে দেখা গিয়েছিল, রিভলভারে খোল তৈরি করে পাচার করা হতো বিহারের মুঙ্গেরে। এক্ষেত্রে খোল সমেত পিস্তলের প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি করে জগন্নাথডিতে আনা হয়েছিল। এই বাগানবাড়িতে বসে পিস্তল তৈরির শেষ পর্যায়ের কাজ করছিল ওরা। তবে ধৃতদের দাগী দুষ্কৃতী বলতে চাইছে না পুলিশ। প্রাথমিক ভাবে যা তথ্য পাওয়া গিয়েছে, এরা মূলত মিস্ত্রি। এই কারবারের মাস্টার মাইন্ড আড়ালে রয়েছে।

তবে ঘটনা হল ফের ম্যাগাজিন সমেত ৭.৬৫ এমএমের অস্ত্র উদ্ধারের কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। আর সেই বিষয়গুলি ভাবাচ্ছে পুলিশকে। প্রথমত, লোহার ব্যবসায়ী হলেও শেখ ইমতিয়াজের ভাবমূর্তি খুব একটা স্বচ্ছ নয় পুলিশের কাছে। ফলে বিহারের মুঙ্গেরের বাসিন্দা ওই তিনজনের সঙ্গে ইমতিয়াজের যোগাযোগ কী ভাবে হল? দ্বিতীয়ত, অস্ত্র তৈরি করার পরে সেগুলি কোথায় বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল? কারা কিনতো এই আগ্নেয়াস্ত্র? এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজছে পুলিশ।

জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘কিছু না জেনেই ইমতিয়াজ ওই তিনজনকে বাড়িটি ভাড়া দিয়েছিল এটা বিশ্বাস করা যথেষ্ঠ কঠিন। কারণ ইমতিয়াজ নিজে লোহার ব্যবসায়ী বলেও ওর ব্যবসার পুরোটাই সহজ, সরল ভাবে চলে এমনটা নয়। ফলে ইমতিয়াজের সঙ্গে মুঙ্গেরের যোগাযোগ চিন্তার বিষয়।”

ওই কর্তার দাবি, তৈরি করার পরে আধুনিক ৭.৬৫ এমএমের পিস্তল কাদের কাছে বিক্রি করার কথা সেটা জানা প্রয়োজন। পেশায় মিস্ত্রি ওই তিনজনের পক্ষে মুঙ্গের থেকে এসে স্থানীয় বিক্রেতা খোঁজা সম্ভব নয়। স্থানীয় কোনও ব্যক্তির মাধ্যমে অস্ত্রগুলি বিক্রি করার পরিকল্পনা ছিল কি না তা ভাবাচ্ছে। ওই কর্তার কথায়, ‘‘পুরো ঘটনার বিশদ জানতে ইমতিয়াজকে পাওয়া জরুরি। কিন্তু আপাতত সে পলাতক।’’

পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘ওই আগ্নেয়াস্ত্রের ক্রেতাদের ব্যাপারে কয়েকটি নাম পাওয়া গিয়েছে। তবে তারা কেউই স্থানীয় বাসিন্দা নয়। তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেওয়া চলছে। আরও কিছু তথ্য পেয়েছি আমরা। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে তা এখনই প্রকাশ্যে আনা সম্ভব নয়।”

Pistol Police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy