ফসল বিমা করিয়েছেন এক কৃষক। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মাটির অনুর্বরতা কিংবা অন্য কোনও কারণে প্রত্যাশিত ফলন তিনি পেলেন না। ফসলের ক্ষতির জন্য ঠিক কতটা ক্ষতিপূরণ পাবেন, সেটা কে ঠিক করবেন? ধান, গম, সর্ষে, সূর্যমূখী বা, বাদামের মতো অন্য তৈলবীজ অথবা আখ-পাটের উৎপাদন ঠিক কেমন হয়েছে এ বার? উৎপাদনের হার আগের বারের থেকে কম না বেশি। সেটা কে ঠিক করবেন? রাজ্যে মোট ২০টি মূল ফসলের মধ্যে একমাত্র আলু ছাড়া সব ক’টি ফসলের এই উৎপাদন, বিজ্ঞানসম্মত সমীক্ষার মাধ্যমে করে থাকে রাজ্য পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ দফতর। ঠিক কী ভাবে এই সমীক্ষার কাজ করে তারা, বুধবার সিউড়ির জেলা প্রশাসনিক ভবনের পাশে সংখ্যালঘু ভবনের কনফারেন্স হলে একটি কর্মশালায় বিদেশি শিক্ষানবিশ প্রতিনিধিদের নিয়ে ইন্টারঅ্যাকশন সেশনে সে কথাই বোঝাল দফতর।
ইথিওপিয়া, ঘানা, আফগানিস্থান, ফিজি, মোঙ্গলিয়া, সাউথ সুদান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা জাম্বিয়ার মতো ১৫টি দেশের ২৮ জন প্রতিনিধি ছিলেন। তবে শুধু বিদেশি শিক্ষানবিশ প্রতিনিধিদের নিয়ে প্রশ্নোত্তর-পর্বই শুধু নয়, এ দিনই প্রথম কলকাতার বাইরে বীরভূমে ও বর্ধমান জেলার বিভিন্ন তথ্য পরিসংখ্যান সম্বলিত পরিসংখ্যান হ্যান্ডবুক দুটি প্রকাশিত হল। বিদেশি শিক্ষানবিশদের উপস্থিতিতে বিভাগীয় মন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায় সেগুলি প্রকাশ করেন।
দফতর সূত্রে খবর, বিভিন্ন ধরনের সমীক্ষার কাজ করা এবং সরকারের বিভিন্ন দফতর যেখানেই পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ হয় সেখান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ত্রুটি বিচ্যুতি আছে কিনা তা যাচাই করে আপডেটেট তথ্য পরিসংখ্যান তুলে ধরাই পরিকল্পনা পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ দফতরের কাজ। যে পরিসংখ্যন দেখে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নেওয়া সহজতর। কিন্তু জেলা থেকে সমস্ত তথ্য পরিসংখ্যান সম্বলিত সেই হ্যাণ্ডবুক কলকাতায় ছাপা হতে সময় চলে যেত প্রায় দেড়-দু’বছর। অহেতুক দেরি আটকাতে জেলাতেই পরিসংখ্যান হ্যান্ডবুক প্রকাশের ভাবনা নেন মন্ত্রী। আশিসবাবু বলেন, সহজেই হাতের নাগালে এমন একটি বই থাকলে পরিকল্পনা করেত যেমন সুবিধা হবে। তেমনই তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে কেউ জানতে চাইলে তিনিও উপকৃত হবেন। এ ছাড়াও হ্যান্ডবুকটা দেওয়া থাকছে বিভাগীয় ওয়েবসাইটেও।
বিদেশি ওই শিক্ষানবিশ প্রতিনিধিরা কেন হঠাৎ এ জেলায়? আধিকারিকেরা জানান, জেলার সংশ্লিষ্ট দফতরে আলাপ-আলোচনার জন্য রাজ্য পরিসংখ্যান সংস্থার কাছে আগেই আর্জি জানিয়েছিলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউট পরিচালিত আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান শিক্ষাকেন্দ্রের সম্পাদক অধ্যাপক অয়নেন্দ্রনাথ বসু। সেই সূত্রেই ওঁরা বীরভূমে। যোগদানকারী শিক্ষানবিশ ও অধিকারিকেরা বলছেন, ‘‘দু’জন নোবেল জয়ী এই জেলা থেকে। দেশের রাষ্ট্রপতিও। এত ঐতিহ্য সমৃদ্ধ জেলায় সংশ্লিষ্ট দফতরের কাজকর্ম দেখাটাও যথেষ্ট আগ্রহের। সর্বপরি সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রীও এই জেলার বাসিন্দা। প্রশ্নোত্তর এই প্রসঙ্গগুলোও ছুঁয়ে গেলেন প্রতিনিধিরা।’’
সিউড়ি লাগোয়া মাঠে নিয়ে গিয়ে কী ভাবে ফসলের পরিমাপ করা হয়, জেলা দফতরের আধিকারিকরা দেখান শিক্ষানবিশদের। ঘটনা হল, যে বিষয়ের উপর চর্চা, তার জন্য এই সময়টা আদর্শ নয়। কারণ সর্ষে ইতিমধ্যেই প্রায় উঠে গিয়েছে। বোরো ধান এখন মাঠে। তাই থিওরিকেই অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও বুঝতে কোনও অসুবিধা হয়নি বলেই জানাচ্ছেন ওই বিদেশিরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy