Advertisement
০৬ মে ২০২৪
ভিড়ে ফাঁসল বিষ্ণুপুর

সিসিটিভি লাগিয়ে, ছককষে ভিড় ঠেকাল পুলিশ

সরু পথ। সেই রাস্তাতেই নামল প্রচুর যানবাহন। এর জেরে পুজোর ক’দিন বিষ্ণুপুরে বিভিন্ন জায়গায় যানজটে হিমশিম খেতে হল দর্শনার্থীদের। সামাল দিতে পুলিশের অবস্থাও তথৈবচ।

পুজোয় পুরুলিয়ার পথে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র

পুজোয় পুরুলিয়ার পথে পুলিশ।—নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৬ ০১:০০
Share: Save:

সরু পথ। সেই রাস্তাতেই নামল প্রচুর যানবাহন। এর জেরে পুজোর ক’দিন বিষ্ণুপুরে বিভিন্ন জায়গায় যানজটে হিমশিম খেতে হল দর্শনার্থীদের। সামাল দিতে পুলিশের অবস্থাও তথৈবচ। তবে পুলিশের পরিকল্পনা মাফিক যান নিয়ন্ত্রণে ভিন্ন চিত্র দেখা গেল বাঁকুড়া, পুরুলিয়া শহরে। রঘুনাথপুর মহকুমার বড় মণ্ডপগুলিতেও ভিড় হলেও পথে সে ভাবে ভোগান্তির শিকার হতে হয়নি দর্শনার্থীদের। বাসিন্দাদের মতে, মোটরবাইক আরোহী ও সাইকেল আরোহীদের প্রতি পুলিশের কড়া মনোভাবেই এই তিন এলাকায় যানজট এড়ানো গিয়েছে অনেকটা। তাতে স্বস্তি পেয়েছেন দর্শনার্থীরা।

সপ্তমীর সন্ধ্যা থেকেই বিষ্ণুপুরের হাইস্কুলমোড় এলাকায় পুজো দেখতে বের হওয়া মানুষজনের ভালই ভিড় চোখে পড়ে। দর্শনার্থীদের অনেকেই টোটো, অটো, ছোট গাড়ি, মোটরবাইক ভাড়া করে প্রতিমা দেখতে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু হাইস্কুল মোড়ের রাস্তা যা চওড়া, তাতে গাড়ির ঢল সামাল দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক বেশি পরিমাণে যানবাহন একসঙ্গে পথে নেমে পড়ায় শুরু হয় ব্যাপক যানজট। মোড়েই দেখা যায়, মোতায়েন বেশ কয়েকজন সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশ কর্মী। যানজট সামলাতে গিয়ে নাজেহাল হন তাঁরা।

একই দৃশ্য দেখা যায় অষ্টমীতেও। বিষ্ণুপুরের মল্লরাজাদের আমল থেকে চলে আসা তোপ দেগে সন্ধিপুজোর রীতি দেখতে প্রতি বছরই হাজার-হাজার মানুষের ভিড় জমে দরবার এলাকায়। সন্ধি পুজোর তোপ দাগা হয়ে যাওয়ার পরে ঘরমুখো মানুষের ভিড়ে দরবার এলাকার সংকীর্ণ রাস্তা কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে যায়। মোটরবাইক ও টোটোও ওই যানজটের মধ্যে আটকে পড়ে। এমনকী পায়ে হেঁটে যেতেও হিমশিম খেতে হয় মানুযজনকে।

যানজট কাটাতে বিষ্ণুপুরের এসডিপিও লাল্টু হালদারকে পুলিশ কর্মীদের নিয়ে পথে নামতে হয়। তাতেও পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘণ্টাখানেক সময় লেগে যায়। বাসিন্দাদের মতে, পুলিশ আগেই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করলে অত যানজট পাকাত না।

তবে নবমীর রাত থেকে ভিড় সামলাতে পুলিশের অতিসক্রিয়তা চোখে পড়ে। হাইস্কুল মোড় এলাকায় ব্যাপক সংখ্যায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ছোট গাড়িগুলিকে পুজো মণ্ডপের কয়েকশো মিটার দূরেই থামিয়ে দেওয়া হয়। ভিড় সামলাতে ছিন্নমস্তা সর্বজনীনসহ আরও বেশ কয়েকটি পুজো মণ্ডপ ও শহরের ব্যস্ততম মোড়গুলিতেও ব্যাপক পুলিশ নামিয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পুলিশের তৎপরতায় নবমীর রাত থেকে যানজটও কাটে।

অন্যদিকে পুজোর চারদিনই বাঁকুড়া শহর জুড়ে ব্যাপক পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা ছিল। ‘নো-এন্ট্রি জোনে’ পুলিশ ছোট গাড়ি নয়ই, মোটরবাইক বা সাইকেল নিয়েও মানুষকে ঢুকতে দেয়নি। এ জন্য পুলিশের প্রতি কোথাও কোথাও ক্ষোভ উগরে দিতেও দেখা গিয়েছে সাধারণ মানুষকে। তবে পুলিশের কড়া মনোভাবের জেরেই শেষ পর্যন্ত শহরের পুজো মণ্ডপগুলির সামনে যানজট আটকানো গিয়েছে। জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা স্বীকার করেন, “পুজোয় যানজট এড়াতে কিছু কিছু জায়গায় আমাদের বাড়তি সক্রিয়তা দরকার। আগামী বার পুজোয় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি সক্রিয় হব আমরা।”

পুরুলিয়াতেও পুলিশের মধ্যে এই সক্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। রাস্তার গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ আধিকারিকদের ময়দানে নেমে ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গিয়েছে। পথে বেরোনো মানুষজন তাই ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচে’র ট্রফি পুলিশের হাতেই তুলে দিচ্ছেন। শুধু দর্শকেরাই নন, পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদেরও একই মত।

রাস্তায় টহল, স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুজো মণ্ডপে ভিড় সামলানো, গাড়ি পার্কিং সব মিলিয়ে পুজো দেখতে পথে বেরোনো মানুষজনকে অনেকটাই নিশ্চিন্ত করেছে পুলিশ। বেশ কয়েক বছর ধরেই আসানসোল লাগোয়া নিতুড়িয়ার বেশ কয়েকটি বড় বাজেটের পুজো প্রচুর দর্শক টানছে। এই থানা এলাকার ভামুরিয়া বাথানেশ্বর শিবমন্দির সর্বজনীনের সম্পাদক হীরালাল মাজির কথায়, ‘‘আমাদের প্যান্ডেলে এত ভিড় হয় যে স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। পুলিশের সাহায্য নিতেই হয়। গাড়ি পার্কিংয়ের ক্ষেত্রেও পুলিশ খুব সাহায্য করেছে।’’

রেলশহর আদ্রার অন্যতম বিগ বাজেটের পুজো আদ্রা বাঙালি সমিতির কর্মকর্তা দেবাশিস দে জানালেন, মণ্ডপের পথে আসা গাড়ি কোন রাস্তা দিয়ে ঢুকবে, বের হবে— সবই সুন্দর ভাবে পুলিশ সামলেছে। পুরুলিয়া শহরের নামোপাড়া রথতলা পুজো কমিটির উদ্যোক্তা শ্রীমন সরকারেরও একই প্রতিক্রিয়া। তাঁর কথায়, ‘‘শহরের রাস্তাঘাট দিন দিন সংকীর্ণ হয়ে পড়ছে। তবে পুজোর সময়ে পুলিশ বেশ কিছু রাস্তায় নো-এন্ট্রি করে এবং শহরের বিশেষ কয়েকটি স্থানে পার্কিং জোন করে ভিড়ের ব্যাপারটা খুবই ভাল সামলেছে। দর্শকদের মণ্ডপ থেকে মণ্ডপে ঘোরার অসুবিধো খুব একটা হয়নি।’’

কী বলছেন দর্শনার্থীরা? আদ্রার বাসিন্দা সুনয়না মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়ির সবাই মিলে পুজো দেখতে বেরিয়েছিলাম। রাস্তায় খুব ভাল পুলিশি ব্যবস্থা চোখে পড়েছে।’’ হুড়ার আলোকডি গ্রামের বাসিন্দা রাজকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘আমি আদ্রা, রঘুনাথপুর, নিতুড়িয়াতে ঠাকুর দেখতে গিয়েছি। অনেক রাত করে ফিরেছি। রাস্তায় যথেষ্ট পুলিশি টহল চোখে পড়েছে।’’ একই প্রতিক্রিয়া ঝালদার বাসিন্দা বসন্ত কুমার দত্ত বা পুঞ্চার বাসিন্দা সরোজ গড়াইদেরও।

জেলা পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার অবশ্য বলছেন, ‘‘এটা পুলিশের কাজ। তবে এ বার আমরা প্রতিটি এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আগে বৈঠক করে পরিকল্পনা ছকে ফেলেছিলাম। পুরুলিয়া শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতেও সিসিটিভি লাগানো হয়েছিল। আড়াই হাজার পুলিশ কর্মী ও তিন হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার পুজোয় রাস্তায় ছিলেন। মানুষকে বিশেষ অসুবিধায় পড়তে দেননি তাঁরা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Police Puja crowd CCTV
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE