রাজপথে: সাইকেল র্যালিতে বিধায়ক, দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও পুলিশ সুপার। ছবি: সঙ্গীত নাগ
মহিলা, শিশু ও প্রবীণদের জন্য পুলিশের চারটি প্রকল্প শুরু হল পুরুলিয়ায়। শুক্রবার পুলিশই ‘সংযোগ মিছিল’-এর আয়োজন করেছিল। পরে আদ্রার বাঙালি সমিতির মাঠের একটি অনুষ্ঠান হয়। সেখানে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়, পুলিশ সুপার আকাশ মাঘারিয়া ও জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়। উপস্থিত ছিলেন কাশীপুরের বিধায়ক স্বপন বেলথরিয়া ও পাড়ার বিধায়ক উমাপদ বাউড়ি।
অল্প বয়সে বিয়ে, শিশু শ্রম, শিশু ও নারী পাচারের মত অপরাধ রুখতে রাজ্য সরকার আগেই শুরু করেছে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ প্রকল্প। স্কুল ও কলেজের পড়ুয়ারা এই বিষয়গুলি নিয়ে এলাকায় সচেতনতা প্রচার করবে। শুক্রবার প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিক ভাবে জেলায় শুরু হল। পুলিশের উদ্যোগে এ দিন থেকে রঘুনাথপুর মহকুমা এলাকায় শুরু হয়েছে ‘তেজস্বিনী’, ‘নিবেদন’ ও ‘হাসিখুশি’ নামের তিনটি প্রকল্প।
‘হাসিখুশি’-তে প্রবীণ বাসিন্দাদের বিনোদনের জন্য পার্ক তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে রঘুনাথপুর মহকুমা পুলিশ। আপাতত এটি শুরু হবে রেলশহর আদ্রায়। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই আদ্রার ডিআরএমের সঙ্গে কথা বলে জায়গা দেওয়ার জন্য রেলের কাছে আবেদন জানিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, আদ্রার রেলগেটের কাছে মোহরকুঞ্জ নামের একটি নতুন পার্ক তৈরি করেছে রেল। সেখানে বয়স্কদের জন্য পার্ক তৈরি করার অনুমতি চাওয়া হয়েছে।
মোহরকুঞ্জ না হলে আদ্রার পুলিশের ফাঁড়ির সামনে রেলের জায়গায় পার্ক তৈরির ভাবনা রয়েছে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) সত্যব্রত চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। রেল তাদের তৈরি করা একটি পার্ক এই কাজে দিতে রাজি হয়েছে। কোনও কারণে সেটি পাওয়া না গেলে অন্যত্র পার্ক হবে।” আপাতত স্থির হয়েছে, পার্কে প্রবীণদের জন্য চা-কফির ব্যবস্থা থাকবে। রাখা হবে সংবাদপত্র ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা।
মহিলাদের উপরে অত্যাচার বন্ধ করতে রঘুনাথপুর মহকুমায় শুরু হয়েছে ‘তেজস্বিনী’ নামের প্রকল্পটি। পুলিশ কর্তাদের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই অত্যাচারিত মহিলারা থানায় এসে অভিযোগ জানাতে পারেন না। অনেকেই থানায় আসতে ভয়ও পান। এই প্রকল্পে পুলিশই পৌঁছে যাবে তাঁদের কাছে। একটি নির্দিষ্ট ফোন নম্বর থাকবে। তাতে মেসেজ বা হোয়াটঅ্যাপ করে মহিলারা তাঁদের উপরে হওয়া অত্যাচার বা অন্য কোনও সমস্যার কথা জানাতে পারবেন। খতিয়ে দেখে পুলিশই যোগাযোগ করে অভিযোগ নথিবদ্ধ করবে।
‘নিবেদন’ প্রকল্পটিও বয়স্কদের কথা ভেবে। এসডিপিও (রঘুনাথপুর) জানান, অনেক সময়ে দেখা যায়, সন্তানেরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। বাড়িতে একাই থাকেন বয়স্ক দম্পতি। অসুখবিসুখ বা আপদেবিপদে অসহায় হয়ে পড়েন। ‘নিবেদন’ প্রকল্পে পুলিশ কর্মীরাই তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন। এ ক্ষেত্রেও কয়েকটি ফোন নম্বর দিয়ে প্রচার চালান হবে। সেই নম্বরে ফোন করে বয়স্ক মানুষজন সমস্যার কথা পুলিশকে জানাতে পারবেন।
‘নিবেদন’ প্রকল্পের ব্যাপারে পুলিশ কর্তারা ইতিমধ্যেই যোগাযোগ করেছেন আদ্রার পেনশন পাওয়া অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মীদের একটি সংগঠনের সঙ্গে। এ দিনের অনুষ্ঠানে ওই সংগঠনের সদস্যেরা উপস্থিত ছিলেন। জানা গিয়েছে, গ্রামাঞ্চলেও অসুস্থ হয়ে পড়া বয়স্ক মানুষজনের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারদের।
শুক্রবার তিনটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে কাজ শুরু হতে আরও কয়েক দিন লাগবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আশা করা হচ্ছে, এই ভাবে জনসংযোগ আরও নিবিড় হবে। এ দিন প্রকল্পগুলির প্রশংসা করে সভাধিপতি সুজয়বাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী পুলিশকে সব সময়ে আরও মানবিক হয়ে অসহায়, অশক্ত মানুষজনের পাশে দাঁড়াতে বলছেন। পুলিশ যত বেশি এই ধরনের কাজ করবে, সুস্থ সমাজ তৈরির ব্যাপারে সেটা তত ভাল হবে।’’
শুক্রবার সকালে আনাড়া থেকে শুরু হয়েছিল পুলিশের ‘সংযোগ মিছিল’। ছিলেন পুলিশ কর্মী, আধিকারিক, এলাকার মানুষজন। ১৭ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে আসা হয় আদ্রায়। সাইকেল চালান খোদ পুলিশসুপার ও অন্য পুলিশ আধিকারিকেরা। সাইকেল চালাতে দেখা গিয়েছে পাড়ার তৃণমূল বিধায়ক উমাপদ বাউড়িকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy