Advertisement
E-Paper

নামেই গ্রামীণ হাসপাতাল, পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন সাঁইথিয়ায়

খাতায় কলমে গ্রামীণ হাসপাতাল। আদতে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও অধম! সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর। অথচ জেলার যে ক’টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গ্রামীণ হাসপাতালে রূপান্তিত করা হয়, তার মধ্যে পরিকাঠামো গত দিক থেকে সাঁইথিয়াই ছিল সব থেকে বড়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০১:১৮
হাসপাতাল চত্বরেই চড়ে বেড়াচ্ছে শুয়োর। কেউ নেই দেখার। সাঁইথিয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

হাসপাতাল চত্বরেই চড়ে বেড়াচ্ছে শুয়োর। কেউ নেই দেখার। সাঁইথিয়ায় তোলা নিজস্ব চিত্র।

খাতায় কলমে গ্রামীণ হাসপাতাল। আদতে ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরও অধম!

সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালের বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে এমনই অভিযোগ এলাকাবাসীর।

অথচ জেলার যে ক’টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে গ্রামীণ হাসপাতালে রূপান্তিত করা হয়, তার মধ্যে পরিকাঠামো গত দিক থেকে সাঁইথিয়াই ছিল সব থেকে বড়। ১৯৫১–’৫২ সালে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পথচলা শুরু। পরে শয্যা বেড়ে হয় ৬০। কিন্তু কর্মী থেকে বাকি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি রয়েই যায়। তারই মধ্যে ধুঁকতে থাকা এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের কোনও রকম উন্নয়ন না করেই ১৯৯১ সালে সাঁইথিয়াকে গ্রামীণ হাসপাতালের মর্যাদা দেওয়া হয়। তার কয়েক বছর পরে প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮ সালে নতুন অন্তর্বিভাগ ও বহির্বিভাগ নির্মাণ করা হয়। কিন্তু, বাম জমানা শেষে এই তৃণমূল জমানাতেও ওই হাসপাতালের পরিকাঠামোগত প্রয়োজন মেটানো হয়নি বলেই অভিযোগ। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবার হালও রয়ে গিয়েছে একই রকম।

হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসক, নার্স-সহ সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্য কর্মীর অভাব রয়েছে। কিন্তু রোগীর চাপ প্রচুর। অন্তঃবিভাগের যত্রতত্র নোংরা পড়ে থাকে, বাথরুমেও দুর্গন্ধ। অনেক সময়ই একই শয্যায় দু’জন করে রোগী রাখতে হয়। অথচ সাইঁথিয়া, সংলগ্ন ছ’টি পঞ্চায়েত এলাকা এবং ময়ূরেশ্বর ও লাভপুরের একাংশের মানুষ এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। গড়ে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ রোগী আসেন বহির্বিভাগে। অথচ বিএমওএইচ-কে নিয়ে চিকিৎসক আছেন মাত্র পাঁচ জন। বিএমওএইচ-কে আবার সকাল থেকেই প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকতে হয়। এক জন চিকিৎসক ২৪ ঘণ্টা জরুরি বিভাগে ডিউটি করেন। তাঁর পক্ষেও আর বহির্বিভাগে আসা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ফলে কার্যত তিন জন চিকিৎসককে বহির্বিভাগের ওই ৫০০-৬০০ রোগীকে দেখতে হয়। তা-ও দু’ থেকে আড়াই ঘণ্টায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগীর ক্ষোভ, ‘‘অতটুকু সময়ে কি আর ঠিক ভাবে চিকিৎসা করা যায়। আমরা গরিব মানুষ। তাই এখানেই আসতে হয়।’’

হাসপাতাল ঘুরেও দেখা গেল, বহির্বিভাগ বা জরুরি বিভাগে অবাধে কুকুর-বিড়াল ঘুরে বেরাচ্ছে। বহির্বিভাগ থেকে অন্তঃবিভাগ যাওয়ার পথে, পাশের পানীয় জলাধারের পাড় থেকে হাসপাতালের সর্বত্রই শুয়োরের অবাধ বিচরণ। সর্বত্র নোংরা আবর্জনার স্তুপ। মূল দরজার সামনে প্রায় সময়ই নোংরা জল জমে থাকে। নিকাশি ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। হাসপাতালে নেই সীমানা প্রাচীরও। পরিত্যক্ত পুরনো অন্তবিভাগ, নার্স ও চিকিৎসকদের কোয়ার্টারগুলির একাংশেরই দরজা-জানালাও নেই। ওই সব কোয়ার্টারগুলিতে অসামাজিক কাজ কর্ম হয় বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। কিন্তু, সিজার পর্যন্ত করা যায় না। গ্রামীণ হাসপাতাল হওয়া সত্ত্বেও সুপারিন্টেন্ডেন্ট, ওয়ার্ড মাস্টার, এমনকী কোনও প্রহরীও নেই। স্থানীয় হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অরুণ দাস, নাট্যকর্মী দুর্গা দাসদের ক্ষোভ, ‘‘কিছু হলেই রোগীদের সিউড়ি রেফার করে দেওয়া হয়। চারদিকে শুয়োর কুকুর বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছে। অবিলম্বে এই হাসপাতালের পরিষেবার উন্নয়ন হওয়া প্রয়োজন।’’ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে সাঁইথিয়াকে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল করা হোক বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দা বাদল ভকত, সুব্রত মুখোপাধ্যায়দের।

নিজেদের অসহায়তার কথা মেনে নিয়েছেন বিএমওএইচ আশিস চন্দ্র। তিনি বলেন, ‘‘গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো এখানে নেই। চিকিৎসক থেকে সমস্ত স্তরের স্বাস্থ্যকর্মীই কম। রোগীর চাপও অনেক বেশি। তবু ঠিকমতো পরিষেবা দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা আমরা করি।’’ এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানান, গোটা জেলাতেই দীর্ঘ দিন ধরে চিকিৎসক-সহ সমস্ত স্তরের কর্মীর ঘাটতি আছে। তবে, সীমানা প্রাচীর ও নিকাশি ব্যবস্থা ঢেলে সাজার জন্য শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

Rural Hospital Sainthia Poor Infrastructure
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy