Advertisement
০৫ মে ২০২৪

কাল পৌষমেলা, ছ’দিনই অনুষ্ঠান

এ বারই প্রথম পৌষমেলা বেড়ে হয়েছে ছ’দিনের। বিশ্বভারতীর প্রদর্শনী ও বিনোদন মঞ্চে অনুষ্ঠান থাকছে প্রতিদিনই। এত কাল প্রথম চার দিনই প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পেতেন পর্যটকেরা।

আনন্দে: পৌষমেলা শুরুর আগেই মেলার মাঠে। বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

আনন্দে: পৌষমেলা শুরুর আগেই মেলার মাঠে। বৃহস্পতিবার শান্তিনিকেতনে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী

দেবস্মিতা চট্টোপাধ্যায়
শান্তিনিকেতন শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:৫৭
Share: Save:

রাত পোহালেই পৌষমেলা। মেলা ঘিরে একাধিক অনুষ্ঠানে সাজছে শান্তিনিকেতন। মেলার প্রস্তুতিও একেবারে শেষলগ্নে।

এ বারই প্রথম পৌষমেলা বেড়ে হয়েছে ছ’দিনের। বিশ্বভারতীর প্রদর্শনী ও বিনোদন মঞ্চে অনুষ্ঠান থাকছে প্রতিদিনই। এত কাল প্রথম চার দিনই প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠান দেখার সুযোগ পেতেন পর্যটকেরা।

মেলা ঘিরে সাজো সাজো রব এখন শান্তিনিকেতনের চারদিকে। বিশ্ববাসীকে আপ্যায়নের জন্য প্রস্তুত শান্তিনিকেতনও। কুয়াশায় ঢাকা বৃহস্পতিবার সকালেও তাই ব্রহ্মমন্দিরে উপাসনা সমাপ্তির পরে আশ্রম এলাকায় চলে ফুলের টব সাজানো থেকে শুরু করে শতাধিক প্রাচীন গাছের পরিচর্যা। চারপাশ কাদা মাটি লেপন করে, গাছের গোড়ায় আলকাতরা দেওয়ার কাজ হয়। এরই মাঝে বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা ব্যস্ত ছিল ছাতিমতলা, আম্রকুঞ্জে আলপনা দিতে। সব মিলিয়ে পৌষমেলার প্রস্তুতি তুঙ্গে। স্টল তৈরির কাজও প্রায় ৮০ শতাংশ শেষ হয়েছে। বুধবার বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য স্বপনকুমার দত্ত মেলার মাঠ পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, ‘‘মেলা কমিটির কাজে সন্তুষ্ট। কম সময়ের মধ্যে খুব ভাল কাজ হয়েছে।’’

বিনোদন মঞ্চেও এ বার থাকছে অনুষ্ঠানের বহর। ৬ পৌষ অর্থাৎ ২২ ডিসেম্বর রাত ৯টায় বৈতালিকের মধ্যে দিয়ে শুরু হবে পৌষ উৎসব। শান্তিনিকেতন গৃহ থেকে মাঙ্গলিক সানাই বাজবে রাত ৯টা ৩০ থেকে। এরপর মেলার ছ’দিনই সকাল ৬টা থেকে সানাই বাজবে শান্তিনিকেতন গৃহ থেকে। পৌষমেলার অনুষ্ঠানগুলির বিশেষত্ব হল এখানে হারিয়ে যাওয়া বা অবলুপ্তপ্রায় অনুষ্ঠানগুলিই মঞ্চস্থ হয়। প্রতিদিনের একঘেয়েমি জীবন থেকে বেরিয়ে এসে শতাব্দী প্রাচীন এই অনুষ্ঠান দেখতে দূরদূরান্ত থেকে লোক এসে ভিড় জমান। মেলা ছ’দিনের হলেও ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে না গিয়ে সেই বাউলগান, মনসামঙ্গল পাঠ, কবিগান, ফকিরদের গান, দং নৃত্য, কাঠি নৃত্য, ছৌ নৃত্য, যাত্রাভিনয়, সত্যপীরের পাঁচালী, কীর্তন গান, লোকনৃত্য, সাঁওতালি নৃত্য ও গান, রামায়ণ গান, লোকসংস্কৃতির আসর, রণপা নৃত্য, রায়বেঁশে, মুখোশ নৃত্য, ঝুমুর ও আলকাপের আসর বসে বিনোদন মঞ্চে।

এ বারের মেলায় আকর্ষণের কেন্দ্রে সানাই শিল্পী সন্তোষ ধাড়া। সন্তোষবাবু এত দিন শান্তিনিকেতন গৃহ থেকে সানাই বাজাতেন। এত দিন তাঁকে কেউই সামনে থেকে দেখতে পাননি। এ বারই প্রথম মঞ্চে এসে সানাই বাজাবেন। এ ছাড়াও শিলচর থেকে একটি দল আসবে, যাঁরা বিনোদন মঞ্চে তাঁদের লুপ্তপ্রায় সংস্কৃতিকে তুলে ধরবেন। পৌষমেলার সাংস্কৃতিক সমিতির আহ্বায়ক, বিশ্বভারতীর কর্মী পরিষদের সম্পাদক অমর্ত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মেলা ছ’দিনের হওয়ায় দায়িত্ব বেড়েছে। তবে এ বারে অনেক শিল্পীকে তুলে ধরতে পারব। এত দিন সময়ের অভাবে যাঁদের তুলে ধরা যায়নি। এ বার সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরাও।’’

এই সেই বিনোদন মঞ্চ, যার পাশে দীর্ঘ সময় বসে থাকতেন শান্তিদেব ঘোষ, মঞ্চের লোকসংস্কৃতির সব অনুষ্ঠান সামলাতেন। বাউলদের আখড়ায় সারা রাত ধরে চলত সনাতন দাস বাউলের গান, ‘ও মন মাছ ধরতে বাসনা, ফেললে জাল জড়িয়ে পড়ে, ছড়িয়ে পড়ে না।’ অনেক পরিবর্তনের মধ্যেও যে সব কিছু পরিবর্তিত হয় না বা হারিয়ে যায় না তারই সাক্ষী শান্তিনিকেতন পৌষমেলার বিনোদন মঞ্চ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poush Mela Shantiniketan 2017 পৌষমেলা
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE