Advertisement
E-Paper

খেটেও শিল্পীরা আঁধারে

মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। আমোদপুর সুকান্তপল্লিতে সুগার মিলের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে তাঁদের সাত সদস্যের অভাবের সংসার। শোলার কাজই রোজগারের একমাত্র পথ। মামা তন্ময় চিত্রকরের কাছে হাতেখড়ি হীরকবাবুর।

অর্ঘ্য ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:২২
মগ্ন: হীরক চিত্রকর। নিজস্ব চিত্র

মগ্ন: হীরক চিত্রকর। নিজস্ব চিত্র

বছরের পর বছর সম্প্রীতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে চলেছেন হীরক চিত্রকর। যে হাতে দেবীদুর্গাকে সাজাচ্ছেন, সেই হাতেই সাজিয়ে তুলছেন মহরমের তাজিয়া। তাঁর বাড়িতে একই ছাদের নীচে দেবীদুর্গার পাশাপাশি তৈরি হছে তাজিয়া সাজানোর উপকরণও। তবুও অভাব ঘোচে না পরিবারে। অর্থাভাবে সাজানো হয় না নিজের মাকে। অভাবের হাজারটা হাঁ-মুখ গ্রাস করে নেয় পুজোর আনন্দ।

মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই। আমোদপুর সুকান্তপল্লিতে সুগার মিলের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে তাঁদের সাত সদস্যের অভাবের সংসার। শোলার কাজই রোজগারের একমাত্র পথ। মামা তন্ময় চিত্রকরের কাছে হাতেখড়ি হীরকবাবুর। বছর দশেক আগে নিজে স্বাধীন ভাবে শোলার মূর্তি তৈরির কাজ শুরু করেন। প্রথমে তৈরি করেন গণেশ। তারপর থেকেই তৈরি করেন পূর্ণাঙ্গ দুর্গামূর্তি। গত বছর তাঁর তৈরি মূর্তি পাড়ি দিয়েছিল প্যারিস। এ বারে মূর্তি গড়েছেন ২০টি। সেগুলির অধিকাংশই ইতিমধ্যে চলে গিয়েছে দিল্লি-তমলুক। তবু দম ফেলার ফুরসত নেই চিত্রকর পরিবারের। কারণ, দুর্গার সাজ তৈরির পাশাপাশি চলছে মহরমের তাজিয়া নির্মাণের কাজ। হীরকবাবুর মা চন্দ্রাদেবী, স্ত্রী বিভাদেবী জানান, তাঁরা একই সঙ্গে তাজিয়া আর মায়ের সাজ তৈরি করছেন। হীরকবাবুদের হিসেবে, ২৯ /১৭ ইঞ্চির পূর্ণাঙ্গ দুর্গাপ্রতিমা গড়তে উপকরণ বাবদ খরচ পড়ে ৫/৬ হাজার টাকা। চার জন শিল্পীর গড়ে ১০ দিন সময় লাগে মূর্তি গড়তে। বিক্রি হয় ৭/৮ হাজার। সাজ সেট করতে খরচ পড়ে ১০ হাজার টাকা। তা তৈরি করতে এক জন শিল্পীর সময় লাগে ১২ দিন। মণ্ডপে গিয়ে সাজিয়ে দিয়ে এলে মেলে ২০ হাজার টাকা। অন্য দিকে, একটি তাজিয়া সাজিয়ে দিলে মজুরি মেলে ১০ হাজার টাকা। সময় লাগে ১০ দিন। হিসাব অনুযায়ী লাভের অঙ্কটা ভাল মনে হলেও শিল্পীর ভাগে কিন্তু সামান্যই জোটে। কারণ, উপকরণ কেনার জন্য চড়া সুদে ধার নিতে হয়। আবার তৈরি শিল্পসামগ্রী পুঁজির অভাবে ধরে রেখে নিজে বিক্রি করতেও পারেন না। পাইকারি দামে অন্যকে বিক্রি করে দিতে হয়। মেলেনি কোনও সরকারি ভর্তুকি কিংবা সাহায্য। হীরকবাবুর কথায়, ‘‘অধিকাংশ বছর তো পুজোয় নিজের মাকে একটা কাপড় পর্যন্ত কিনে দিতে পারি না। অথচ বহু মণ্ডপে গিয়ে মাটির মাকে অপরূপ সাজে সাজিয়ে দিয়ে আসি।’’

Poverty Artist
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy