Advertisement
০২ মে ২০২৪

ভোটে সাফল্যে কেন্দ্রের স্বীকৃতি এল পুরুলিয়ায়

একদা মাওবাদী অধ্যুষিত পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত যাওয়ার আগে অনেকেই একাধিক বার ভাবতেন। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন না নির্ভয়ে।

রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন জেলাশাসক। —নিজস্ব চিত্র।

রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পুরস্কার নিচ্ছেন জেলাশাসক। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:২১
Share: Save:

একদা মাওবাদী অধ্যুষিত পুরুলিয়ার বিভিন্ন এলাকায় ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত যাওয়ার আগে অনেকেই একাধিক বার ভাবতেন। গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারতেন না নির্ভয়ে। বুধবার মাওবাদী নেতা রঞ্জিত পাল যখন আত্মসমর্পণ করছেন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকাঠামোর কাছে, পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের হাতে সেই দিনই রাষ্ট্রপতি তুলে দিলেন একটি স্বীকৃতি। ভোটদানের সচেতনতা বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনের থেকে পুরস্কার পেল পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন। বুধবার দিল্লির জোরাভার প্রেক্ষাগৃহে পুরুলিয়া জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তীর হাতে এই সম্মান তুলে দেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছিলেন দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার নাসিম জাইদি।

ভোটারদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে পুরুলিয়া ছাড়া আরও দু’টি জেলা পুরস্কৃত হয়েছে। সেগুলি হল তামিলনাড়ুর মাদুরাই ও অসমের টিটাবাড়। পুরুলিয়া জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে ভোটাধিকার সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচার ও নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে একাধিক পদক্ষেপ করা হয়েছিল। একদা মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকা অযোধ্যা পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে বা জঙ্গলঘেরা বান্দোয়ানের বিভিন্ন গ্রামে পুলিশ সুপারকে সঙ্গে নিয়ে বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছেন জেলাশাসক। নিজে গ্রামের বাসিন্দাদের অসুবিধার কথা শুনে ছক সাজিয়েছেন— যাতে তাঁরা নির্ভয়ে ভোট দিয়ে আসতে পারেন। প্রত্যন্ত এলাকায় রুটমার্চ করেছে আধাসামরিক বাহিনী। অযোধ্যা পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রাম জিলিঙসেরেঙ-এ হয়েছে নতুন ভোটকেন্দ্র।

পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের নির্বাচনের নিজস্ব ম্যাসকট ভোটেশ্বর ভোটের আগে ঘুরে বেড়িয়েছে জেলার ১৭০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও তিনটি পুর-এলাকায়। সচেতনতার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে জেলার নিজস্ব ছৌ, নাটুয়া, নাচনি নাচ। পুরুলিয়ার ভাষায় তৈরি হয়েছে ভোটের থিম সং— ‘‘.আইসেছে ভোট, আইসেছে ভোটে, নিজের ভোটটা নিজেই দেব করতে উন্নয়ন।’’ ভোটের আগে মোবাইলে মোবাইলে সেই গান ছড়িয়ে পড়েছে বান্দোয়ান থেকে বাঘমুণ্ডি, কাশীপুর থেকে বলরামপুর সর্বত্র। পৌঁছে গিয়েছে পড়শি রাজ্যেও।

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ছৌ নাচের মাধ্যমে প্রচার, ভিডিও ক্লিপিং, পথ নাটক, ভোটেশ্বরের মুখোশ, ছবি দেওয়া জলের বোতল দিয়ে প্রচার চলানো হয়েছিল পুরোদমে। আশাকর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের দিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচার চালানো হয়েছে।’’

জেলার পাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের সংখ্যালঘু অধ্যুষিত একটি কেন্দ্রে মহিলারা বুথমুখো হতেন না। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রে মহিলাদের ভোট পড়লেও ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনে তার হার এক লাফে বেশ কিছুটা বাড়ানোর পিছনেও সাফল্যই দেখছে জেলা প্রশাসন। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী এ দিন বলেন, ‘‘এই সম্মান গোটা জেলার সম্মান। বুথ এলাকায় যাঁরা নিরলস ভাবে কাজ করেছেন তাঁদের সবার অবদান রয়েছে এই সাফল্যে।’’

এ দিন জেলা প্রশাসনিক ভবন চত্বরে জাতীয় ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে বিধানসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ রাজ্য নির্বাচন কমিশনও সম্মান তুলে দেয়। নির্বাচন আধিকারিক শিলাদিত্য চক্রবর্তী জানান, ভোটদানে পুরুষ-নারীর অনুপাত বাড়াতে বলরামপুর বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন আধিকারিক অরণ্য বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ ভোটারদের উৎসাহিত করার জন্য মানবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন আধিকারিক দেবাশিস চৌধুরী ও নির্ভুল ভাবে ভোটদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে কাশীপুর বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচন আধিকারিক নীলাঞ্জন ভট্টাচার্যকে সম্মানিত করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia District Magistrate Vote
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE