Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্লাস নিয়েও চাকরি গেল

নিয়োগপত্র নিয়েই ওঁরা শিক্ষকপদে যোগ গিয়েছিলেন। দিন পনেরো ক্লাসও নিয়ে ফেলেছেন। তার পরে হঠাৎ-ই ৪৪ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করে দিল প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ!

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০১:৩৫
Share: Save:

নিয়োগপত্র নিয়েই ওঁরা শিক্ষকপদে যোগ গিয়েছিলেন। দিন পনেরো ক্লাসও নিয়ে ফেলেছেন। তার পরে হঠাৎ-ই ৪৪ জন শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করে দিল প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ!

বৃহস্পতিবার এমন ঘটনায় মাথায় হাত পড়েছে ওই শিক্ষকদের। উল্টে দিকে প্রাথমিকের নিয়োগ নিয়ে ফের প্রশ্নের মুখে সংসদ। তাঁদের সঙ্গে কেন এমন করা হল, তার জবাব চাইতে এ দিনই সিউড়িতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে কথা বলতে আসেন বাতিল শিক্ষকদের কয়েক জন। সংসদ থেকে অবশ্য তাঁদের বলে দেওয়া হয়, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। কোনও অভিযোগ থাকলে রাজ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। অবশ্য এমন ঘটনা প্রথম নয়। দু’দিন আগেই একই অভিজ্ঞতা হয়েছে নদিয়া জেলার কয়েক জনের ক্ষেত্রেও। নিয়োগপত্র পেয়ে স্কুলে বেশ কয়েক দিন ক্লাস নেওয়ার পরে তাঁদের কাছে সংসদের একটি চিঠি আসে। তাতে বলা হয়, ‘ভুল’ করে নিয়োগ করা হয়েছিল!

এ দিন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সামনে নাজ পারভিন, দীপান্বিতা গড়াই, প্রদীপ সাহা, আরাধনা চৌধুরীরা দাবি করেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁদের কাউন্সেলিং হয়। ১৪ তারিখ তাঁরা নিয়োগপত্র পান। এক দিন পরেই প্রত্যেকে নির্দিষ্ট স্কুলে যোগও দেন। ২০ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা সংসদ থেকে তাঁদের কাছে একটি ফোন আসে। তাতে বলা হয়, তাঁদের নথিপত্র আবার যাচাইয়ের প্রয়োজন। সংসদের নির্দেশ মতো প্রদীপরা ২২ ফেব্রুয়ারি সংসদে পৌঁছন। তাঁদের দাবি, ‘‘ওই দিন আমাদের দিয়ে একটি আবেদন করিয়ে নেওয়া হয় যে, আমরা কেউ-ই প্যারাটিচার নই। এ দিন দুপুরে হঠাৎ প্রত্যেকের বাড়িতে নিয়োগপত্র বাতিলের চিঠি আসে।’’ মেমো নম্বর অনুযায়ী, মোট ৪৪ জনের কাছে এমন চিঠি পৌঁছেছে। বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে— ‘প্যারাটিচার’ বিভাগে যোগ দিলেও তার সাপেক্ষে নথি দেখাতে পারেননি।

কেন এমন হল?

সংসদের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা, আবেদনপত্রে নির্দিষ্ট জায়গায় ‘টিক’ দিয়ে উল্লেখ করতে বলা হয়েছিল, প্রার্থী আগে পার্শ্বশিক্ষক ছিলেন কি না। উচ্চ প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের কিছু পার্শ্বশিক্ষক ফর্মে প্রাথমিকের পার্শ্বশিক্ষক হিসেবে টিক দিয়েছিলেন। অনেকে পার্শ্বশিক্ষক না হয়েও টিক দিয়েছিলেন। এই সবই ধরা পড়ার পরে নিয়োগ বাতিল হয়ে গিয়েছে।

যদিও নাজ, প্রদীপদের দাবি, ‘‘আমরা কেউ-ই প্যারাটিচাই নই। আবেদনপত্রেও তার উল্লেখ ছিল না। এমনকী, আমাদের কাছে যে অ্যাডমিড কার্ড রয়েছে, সেখানেও তার উল্লেখ নেই।’’ রাতারাতি সেই তাঁরা কী করে ‘প্যারাটিচার ক্যাটেগরি’র জন্য বিবেচিত হয়ে গেলেন, তার ব্যাখ্যা পাচ্ছেন না প্রদীপরা। প্রশ্ন উঠছে, অনলাইনে ফর্ম পূরণের পরে এতগুলি ধাপ পেরিয়ে প্রত্যেকে নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু, চাকরি দেওয়ার আগে পর্যন্ত কোনও ধাপেই কেন ওই আবেদনকারীদের এমন ‘ভুল’ সংসদের নজরে পড়ল না? তার দায়ই বা কে নেবে? ফোন করা হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি রাজা ঘোষ বলেন, ‘‘মিটিংয়ে এ ব্যস্ত। পরে করুন।’’ পরে তিনি আর ফোন ধরেননি।

বিষয়টি নিয়ে যোগাযোগ করা হলে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘সংরক্ষণের সুবিধা নেবে, নথি দেখাতে পারবে না। তা কী করে হয়? ওঁদের দাবি ভিত্তিহীন।’’

পারভিনদের প্রস্ন, ‘‘নথি না দেখেই চাকরি দিয়ে দিলেন? সংসদ কি আমাদের সঙ্গে মস্করা করছে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Primary Education Board recruitments Cancelled
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE