Advertisement
E-Paper

বিদ্যুতের বেড়ায় হাতি রুখতে হিতে বিপরীত

ঠিক যেন মহাভারতের চক্রব্যূহ। সেই ব্যুহে কী ভাবে ঢুকতে হয় তা জানতেন অভিমন্যু। জানতেন না বেরোতে হয় কী করে। ঝালদার হেঁসলা পাহাড় এলাকার গ্রামগুলিতে অভিমন্যুর দশা হয়েছে হাতির দলের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
হাতির হানায় ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া। চলছে মেরামতির কাজ। —নিজস্ব চিত্র

হাতির হানায় ভেঙে পড়েছে বিদ্যুৎবাহী তারের বেড়া। চলছে মেরামতির কাজ। —নিজস্ব চিত্র

ঠিক যেন মহাভারতের চক্রব্যূহ। সেই ব্যুহে কী ভাবে ঢুকতে হয় তা জানতেন অভিমন্যু। জানতেন না বেরোতে হয় কী করে। ঝালদার হেঁসলা পাহাড় এলাকার গ্রামগুলিতে অভিমন্যুর দশা হয়েছে হাতির দলের। বিদ্যুতের তারের বেড়া ফাঁক গলে তারা ঢুকে পড়ছে এলাকায়। কিন্তু বেরোনোর সময় পথ হারিয়ে ফিরে ফিরে হামলা চালাচ্ছে গ্রামে। বেড়া দিয়ে হিতে বিপরীত হচ্ছে দেখে বাধ্য হয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন করে দিচ্ছে বন দফতর। তারের বেড়ার দফারফা করে বেরিয়ে যাচ্ছে হাতিগুলি।

সম্প্রতি এই পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে হেঁসলা পাহাড় এলাকার গ্রামগুলিতে। হাতির গতিবিধি ঠেকাতে চলতি বছর বন দফতর পাহাড়ের পাদদেশে কর্মাডি থেকে পুস্তি পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার বৈদ্যুতিক তারের বেড়া দিয়েছিল। বন দফতর সূত্রের খবর, সম্প্রতি ১৫টি হাতি হেঁসলা পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে রয়েছে। শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে আরও ৯টি হাতি সুবর্ণরেখা পার করে চলে এসেছে। বৈদ্যুতিক তারের বেড়া থাকায় হাতিগুলি ঢুকতে পারছিল না। এক বনকর্মীর দাবি, পুস্তির যেখানে বেড়া শেষ হয়েছে সেটি খুঁজে পেয়ে হাতিগুলি ঢুকতে শুরু করে।

এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, শনি ও রবিবার, কয়েকটি হাতি পাহাড় থেকে নেমে তারের পাশ ধরে এসে পুস্তি এলাকা দিয়ে লোকালয়ে ঢুকে পড়ে। নিমডি, কনকপুর, হেঁসলা ও লাগোয়া গ্রামগুলিতে ফসলের খেত তছনছ করে। কিন্তু পরিচিত রুটে পাহাড়ে যেতে গিয়ে আটকে যায়। হুলাপার্টির এক সদস্য জানান, বাধা পেয়ে ফের গ্রামে ফিরে হামলা শুরু করে হাতিগুলি। গ্রামবাসীরা বনদফতরে খবর দিয়ে তড়িঘরি তারে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করান। পাহাড়ের দিকে খেদিয়ে দেওয়া হয় হাতিগুলিকে। দু’দিনই ফেরার পথে তারের বেড়া ভেঙে দিয়ে যায় তারা।

মঙ্গলবার ভোরে বাঘমুণ্ডির পিড়রগড়িয়া গ্রামের কাছে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত একটি হাতির দেহ উদ্ধার হয়। বন দফতরের আধিকারিকেরা জানান, ওই হাতিটি হেঁসলা পাহাড়ে ঘাঁটি গেড়ে থাকা দলে ছিল। বনকর্তাদের অনুমান, শুঁড়ে ধরে থাকা বাঁশ মাথার উপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুতের তারে লেগে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তবে সেই তার দিয়ে প্রায় এগারো হাজার ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে, বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, হাতি ঠেকানোর জন্য যে তারের বেড়া দেওয়া হয় তাতে বারো ভোল্টের বিদ্যুৎ থাকে। এর ফলে হাতির কোনও ক্ষতি হয় না।

হেঁসলা পাহাড় সংলগ্ন, জঙ্গল লাগোয়া গ্রামগুলিতে হাতির দলের উপদ্রব প্রায় সারা বছরই লেগে থাকে। খেতের ফসল নষ্ট, ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকেন বন দফতরের কর্মীরা। বাসিন্দারাও ক্রমাগত হাতির হানায় ক্ষুব্ধ হয়ে থাকেন। ওই এলাকায় সরজমিনে ক্ষয়ক্ষতির হিসেব করতে গিয়ে ঘেরাও হয়েছেন বনকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে হাতির হানা রুখতে বৈদ্যুতিক তারের বেড়া কতটা কার্যকরী তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আরও বেশি এলাকায় বেড়া লাগানো না হলে সুবিধার চেয়ে মুশকিলই বেশি হবে। এডিএফও (পুরুলিয়া) রাজু রায় বলেন, ‘‘হাতির হানা ঠেকাতেই বেড়া দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অন্য এলাকা দিয়ে হাতিগুলি ঢুকে আটকে পড়ছে। আরও বেশ কিছুটা এলাকা বেড়া দিয়ে ঘেরা যায় কি না তা নিয়ে দফতর ভাবনা চিন্তা করছে।’’

wrong process Restrict elephant problems
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy