Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Poppy Seed

চাষ শুরু হলে পোস্তর দাম কমার আশা

রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রের কাছে আমরা নিয়ন্ত্রিত ভাবে পোস্ত চাষের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছি। দেশের কয়েকটি রাজ্যে এই চাষের অনুমতি রয়েছে। ’’

পোস্তোর চাষে উন্নতি।

পোস্তোর চাষে উন্নতি। — ফাইল চিত্র।

রাজদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৩ ০৮:০৮
Share: Save:

রাজ্যকে পোস্ত চাষে অনুমতি দেওয়া হোক, সম্প্রতি বিধানসভায় দাবি তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে, রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে নিয়ন্ত্রিত ভাবে পোস্ত চাষ করতে চেয়ে আবেদন জানানো হয়েছে। সরকারি সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্র অনুমতি দিলে নিয়ন্ত্রিত ভাবে সরকারি খামারগুলিতে পোস্ত চাষ করা হবে। সে ক্ষেত্রে বাঁকুড়ার কৃষি খামারগুলিও পোস্ত চাষের সম্ভাব্য জায়গা হতে পারে, মত সংশ্লিষ্ট মহলের।

রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কেন্দ্রের কাছে আমরা নিয়ন্ত্রিত ভাবে পোস্ত চাষের অনুমতি চেয়ে আবেদন জানিয়েছি। দেশের কয়েকটি রাজ্যে এই চাষের অনুমতি রয়েছে। তবে দেশে পোস্তর চাহিদা সব চেয়ে বেশি বাংলাতেই। এখানে পোস্ত চাষের অনুমতি দিলে তার সুফল পাবেন সাধারণ মানুষ।” তাঁর বক্তব্য, “পোস্ত চাষের বিধি-নিষেধের কথা ভেবে আমরা কেবল রাজ্যের সরকারি কৃষি খামারগুলিতে চাষ করতে অনুমতি চেয়েছি। সেখানে যথাযথ নিরাপত্তায় চাষ করা হবে।” কেন্দ্রের তরফে অনুমতি মিললেই চাষ শুরু করতে পদক্ষেপ হবে, জানান তিনি।

পোস্ত থেকে মাদক তৈরির রমরমা রুখতে সরকারি অনুমতি ছাড়া দেশে পোস্ত চাষকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি রাজ্যে সরকারি নজরদারিতে চাষ হয়। যদিও লুকিয়ে-চুরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রায় পোস্ত চাষের অভিযোগ ওঠে। বাঁকুড়ার দামোদর নদের মানাচরগুলিতে পোস্ত চাষ নষ্ট করতে ফি বছর জেলা প্রশাসন, আবগারি দফতর ও পুলিশ যৌথ ভাবে অভিযান চালায়। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ২০২০-২১ অর্থবর্ষে বাঁকুড়ায় ৪৫৪ বিঘা, ২০২১-২২ অর্থবর্ষে ৯৫০ বিঘা ও ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ১,৪২০ বিঘা অবৈধ জমির পোস্ত চাষ নষ্ট করা হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) প্রলয় রায়চৌধুরী বলেন, “অবৈধ পোস্ত চাষের বিরুদ্ধে অভিযান নিয়মিত চালানো হচ্ছে। পুলিশ, প্রশাসন, আবগারি দফতর যৌথ ভাবে সে কাজ করছে। পঞ্চায়েত সমিতি, পঞ্চায়েতগুলিরও ভূমিকা থাকে।”

চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় পোস্তর দাম সাম্প্রতিক কয়েক বছরে আকাশ ছুঁয়েছে। বাঁকুড়ার বাজারে পোস্তর দর কম-বেশি ১,৪০০-১,৬০০ টাকা প্রতি কেজি। বাঁকুড়ার সমবায় বিপণির চেয়ারম্যান বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “প্রতি মাসে ৪ কুইন্টালের মতো পোস্ত বিক্রি হয়। চড়া দরের জন্য মানুষ পরিমাণে কম পোস্ত কিনছেন।” বাঁকুড়ার লালবাজারের ব্যবসায়ী রাজেশ বাজোরিয়াও জানান, পোস্তর চাহিদা ব্যাপক। দর যদি একটু নিয়ন্ত্রণে আসে, তা হলে বিক্রি আরও কয়েক গুণ বাড়বে। দাম কমার আশায় রয়েছেন ক্রেতারাও। বাঁকুড়ার পাঠকপাড়ার প্রবীণ বাসিন্দা অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ছোট বয়সে এমন কোনও দিন ছিল না যে দিন পাতে পোস্ত পড়ত না। তবে এখন এতটাই দাম বেড়েছে যে মন ভরে পোস্ত খাওয়ার উপায় নেই।”

তবে রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি খামারগুলিতে পোস্ত চাষ শুরু হলে দাম সাধারণের আয়ত্তে আসতে পারে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। বাঁকুড়া জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় ১০টি খামারে প্রায় ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। এর অনেকটা অংশেই পোস্ত চাষ করা যেতে পারে। তা হলে পোস্তর জোগান বৃদ্ধির সঙ্গে আর্থিক ভাবেও লাভ হবে। বাঁকুড়ার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ সরকারের বক্তব্য, রাজ্য যদি নিয়ন্ত্রিত ভাবে যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে পোস্ত চাষ সুনিশ্চিত করতে পারে, তা হলে কেন্দ্র সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে অনুমতি দেওয়ার পক্ষে আলোচনা করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Poppy Seed bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE