ক্ষোভ: পুরুলিয়া জেলাশাসকের অফিসের বাইরে পাথর খাদানের মালিক ও শ্রমিকদের অবস্থান। নিজস্ব চিত্র।
পাথর খাদানে লিজ দেওয়ায় স্বচ্ছতা আনতে রাজ্য সরকার ‘ই-অকশন’ চালু করলেও তারই প্রতিবাদে পথে নামলেন শাসকদলের নেতারা। বুধবার পুরুলিয়ায় ‘ই-অকশন’-এর প্রতিবাদে পথে নামে জেলা পাথর শ্রমিক ও পাথর ব্যবসায়ী যৌথ কমিটি। তাঁদের সঙ্গে সামিল হন জেলা তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। তাঁরা শহরে মিছিল করে জেলাশাসকের কাছে দাবিপত্র তুলে দেন। সেখানে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন তৃণমূলের জেলা সম্পাদক নবেন্দু মাহালিও। কিন্তু রাজ্য সরকার যেখানে স্বচ্ছতার স্বার্থে ই-অকশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেখানে এর প্রতিবাদে কেন শাসকদলের নেতারাই সরব হয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যদিও শাসকদলের নেতারা দাবি করেছেন, দলীয় ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েই তাঁরা আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।
যৌথ কমিটির মুখপাত্র বিশ্বরূপ পতি জানান, পুরুলিয়া জেলায় মোট ১৬৫টি পাথর খাদান রয়েছে। সেখানে ৪০-৪৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাঁর দাবি, ‘‘জেলায় বিড়ি শিল্পের পরেই পাথর শিল্পেই সব থেকে বেশি কর্মসংস্থান রয়েছে। কিন্তু সরকার পাথর খাদানগুলি ‘ই-অকশন’ করলে তা বহিরাগতদের হাতে চলে যাবে। কাজ হারাবেন হাজার হাজার শ্রমিক।’’
এমন আশঙ্কার কারণ কী? বিশ্বরূপবাবুর অভিযোগ, ‘‘ইতিমধ্যে জেলার বালি ঘাটগুলির ই-অকশন হয়েছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, বালি তোলার জন্য সরকারকে নামমাত্র রাজস্ব দিয়ে বেশ কয়েক গুণ দাম হাঁকিয়ে ঘাট থেকে বালি তোলার সরকারি ছাড়পত্র (রয়্যালটি) দিয়ে কালোবাজারি হচ্ছে। তাতে বালির দাম অনেক বেড়ে গিয়েছে। পাথরের ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। জেলাশাসককে উদাহরণ দিয়ে বাস্তব অবস্থাটা বুঝিয়েছি।’’
তাঁদের দাবি, এতদিন যাঁরা জেলায় পাথর শিল্পে যুক্ত, তাঁদেরই সরকার লিজ দিক। এতে স্থানীয় শ্রমিকেরা বাঁচবেন, রক্ষা পাবে জেলার শিল্পও। জেলাশাসকের কাছে কমিটির হয়ে দাবিপত্র জমা দিতে যান তৃণমূলের জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মাণিকমণি মুখোপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘‘জেলার শিল্পের স্বার্থে জেলাশাসককে বাস্তব পরিস্থিতিটা জানালাম।’’
প্রতিবাদ সভায় দলের জেলা সম্পাদক নবেন্দুবাবু বলেন, ‘‘এই শিল্পে জেলার হাজার হাজার মানুষের রুটি-রুজি জড়িয়ে। এটা আমাদের দলেরও রাজনৈতিক আন্দোলন।’’ তিনি জানান, ৩ জুলাই যুব তৃণমূল সভাপতি তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ায় সভা করতে আসছেন। তাঁর কাছেও এই সমস্যার কথা নবেন্দুবাবুরা তুলে ধরবেন। দলের শ্রমিক সংগঠনের জেলা সভাপতি প্রফুল্ল মাহাতোর আবার দাবি, ‘‘পাথর খাদান নিয়ে ই-অকশনের সিদ্ধান্তের আমরা বিরোধী। যদি তা করতেই হয়, তাহলে জেলায় যাঁরা এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত, তাঁদেরই দিতে হবে। কারণ নতুন ভাবে বাইরের যাঁরা লিজ পাবেন, তাঁরা শ্রমিকদের বাদ দিয়ে মেশিনে পাথর তুলবেন। দলীয় ভাবেই সিদ্ধান্ত নিয়ে এই আন্দোলনে নামা হয়েছে।’’
জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায় বলেন, ‘‘ওঁদের দাবিপত্র রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’’ তবে ঘাটের বালি তোলার ছাড়পত্র নিয়ে কালোবাজারির যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে জেলাশাসক বলেন, ‘‘ওঁরা মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রশাসন বিষয়টি দেখবে।’’
চেষ্টা করেও এ দিন বালির লিজ প্রাপকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
বিজেপির জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার মানুষের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। তাই ভোট রক্ষা করতে ওই সিদ্ধান্ত ঠেকাতে তৃণমূলকে পথে নামতে হচ্ছে। এটা নাটক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy