প্রতীকী চিত্র।
রোগী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছনোর পথেই বিকল হয়ে পড়ছে অ্যাম্বুল্যান্স। সর্বত্র এমনটা না ঘটলেও বেশ কিছু ক্ষেত্রে এমনই অভিজ্ঞতার সাক্ষী রোগী ও তাঁদের পরিজনদের। তাঁদের অভিযোগ, পুরুলিয়া জেলাজুড়ে পুরনো অ্যাম্বুল্যান্স দিয়েই রোগী পরিবহণ করা হচ্ছে। তাই অনেক সময়েই পথে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তাঁরা।
এই জেলায় সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে নামমাত্র অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। বেশির ভাগ অ্যাম্বুল্যান্স চলে বিভিন্ন সংস্থা ও ক্লাবের হাতে। ফলে সে সব ক্ষেত্রে অ্যাম্বুল্যান্সগুলির নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয় কি না, তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে। এ প্রসঙ্গেই বিএমওএইচ (পুরুলিয়া ২) সুকুমার সোরেনের আক্ষেপ, ‘‘আমাদের ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিও অ্যাম্বুল্যান্স নেই। বিভিন্ন সংস্থা ও ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্সই রোগীদের ভরসা।’’
জেলায় কতগুলি অ্যাম্বুল্যান্স চলে? পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য দফতরের কাছেও। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিত অনিলকুমার দত্ত জানান, ‘‘জেলায় যে অ্যাম্বুল্যান্সগুলি চলে, তার বেশির ভাগই বিধায়ক অথবা সাংসদ তহবিল থেকে পাওয়া। দেখা গিয়েছে, কিছুদিন চলার পরে কিছু গাড়ি হঠাৎ তুলে নেওয়া হয়। এ কারণে পরিসংখ্যান মেলেনা। তবে খুবই পুরনো গাড়ি অ্যাম্বুল্যান্স হিসাবে ব্যবহৃত হলে, সংশ্লিষ্ট বিএমওএইচ ওই গাড়ি বসিয়ে রাখার নির্দেশ দিতে পারেন।’’
জঙ্গলমহল এলাকার এক বিএমওএইচ জানাচ্ছেন, ‘‘বিধায়ক বা সাংসদ বিএমওএইচ-এর নামে অ্যাম্বুল্যান্স দিলেও তা পরিচালনার দায়িত্ব পায় সেই রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ কোনও এনজিও কিংবা ক্লাব। তারপর সেই গাড়ি আদৌ অ্যাম্বুল্যান্স হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে, না কি অন্য কোনও কাজে চালানো হচ্ছে, তা নিয়ে বাস্তবে ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কিছু করার থাকে না। রক্ষণাবেক্ষণও হয় কি না, তাও নজরে রাখা যাচ্ছে না।’’ তাই কতগুলি অ্যাম্বুল্যান্স বাস্তবে ব্লক এলাকায় রোগী পরিবহণ করে, সেগুলি কী অবস্থায় রয়েছে, তার স্পষ্ট কোনও তথ্য ব্লক স্বাস্থ্য দফতরের কাছে থাকে না।
বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, নজরদারি নেই বলেই অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে পিকনিকে গিয়ে ধরা পড়ে জরিমানা দেওয়ার নজিরও রয়েছে। আবার অ্যাম্বুল্যান্সে চড়ে শ্রাদ্ধবাড়ির নিমন্ত্রণে যাওয়ার অভিযোগও রয়েছে। মানবাজার থানার ভালুবাসা গ্রামে একটি অ্যাম্বুল্যান্স ব্যবহার না করে খামার বাড়িতে ফেলে রাখার অভিযোগও উঠেছিল।
যদিও স্বাস্থ্য দফতর জানাচ্ছে, অ্যাম্বুল্যান্সের প্রধান এবং প্রাথমিক শর্তই হচ্ছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য রোগীকে পৌঁছে দেওয়া। সে জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের গাড়ি খুবই আরামদায়ক হওয়া প্রয়োজন। রাস্তায় ঝাঁকুনি যাতে না হয়, তাও দেখা দরকার। এ ছাড়া গাড়ির ভিতরে অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যালাইন স্ট্যান্ড, বেসিন এবং জলের ব্যবস্থা থাকা দরকার। রোগীকে শুইয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে বিছানার ব্যহস্থা থাকা দরকার। সঙ্গে একজন প্যারামেডিক্যাল কর্মী থাকা দরকার। যিনি রাস্তায় প্রয়োজনে অক্সিজেন ও স্যালাইন চালাতে পারেন। গাড়িটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হলে ভাল হয়।
জেলার এক স্বাস্থ্য কর্তার অভিজ্ঞতা, ‘‘পুরুলিয়ার বেশির ভাগ অ্যাম্বুল্যান্সে এই সব সুবিধা নেই। দেখা গিয়েছে, দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পরে ঝাঁকুনির চোটে রোগীর আত্মীয়ের হাতে থাকা স্যালাইনের পাউচ খুলে গিয়েছে। অথবা রোগীর হাতে বাঁধা চ্যানেলও খসে পড়েছে। গুরুতর জখম অথবা সঙ্কটজনক রোগীর ক্ষেত্রে সময় অনেক মূল্যবান।’’ তাঁর আক্ষেপ, অ্যাম্বুল্যান্সে নজরদারির জন্য জেলা বা ব্লক স্তরে কেউ দায়িত্বে নেই। অথচ জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন থেকে অ্যাম্বুল্যান্সে বহু লক্ষ টাকার বিল মেটানো হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy