খাবারের খোঁজে মনোহারি জিনিসপত্রের দোকানের দরজা ভাঙার চেষ্টা চালায় একটি দাঁতাল।—নিজস্ব চিত্র
সাধারণ মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য গত এক মাসে বেলিয়াতোড়ের জঙ্গলে দু’টি ‘গুণ্ডা’ হাতিকে গুলি করে মেরেছে বনদফতর। ধরা হয়েছে তাদের আরও এক সঙ্গীকে। কিন্তু তার পরেও হাতির হানা থেকে নিস্তার পাচ্ছে না জঙ্গল লাগোয়া লোকালয়গুলি। বুধবার রাতে বেলিয়াতোড়ের বৃন্দাবনপুর বিটের বেশ কিছু দোকান এবং ঘরবাড়ি ভেঙেছে দাঁতালের দল। তছনছ করেছে সব্জি খেত।
সোম এবং মঙ্গলবার সোনামুখীর মানিকবাজারে হামলা চালিয়েছিল একটি হাতি। মঙ্গলবার গভীর রাতে হাতিটি একটি বাড়ির মাটির দেওয়াল ভেঙে ফেললে চাপা পড়ে দু’বছরের এক শিশুকন্যার মৃত্যু হয়। তার মা-ও গুরুতর জখম অবস্থায় বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এ দিনের ঘটনায় নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, গুলি করে দু’টি হাতিকে মেরে ফেলা আদৌ এই সমস্যার সমাধানে কতটা কার্যকর হল?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত প্রায় ১২টা নাগাদ কয়েকটি দাঁতাল জঙ্গল থেকে বেরিয়ে বৃন্দাবনপুর মোড়ে ঢুকে পড়ে। দু’টি স্টেশনারি দোকানের লোহার শাটার ভেঙে জিনসপত্র তছনছ করে হাতিগুলি। ওই মোড়ে দু’টি ধান এবং গম পেষাই করার মিল রয়েছে। সেগুলিরও দরজা ভেঙে ফেলে। ওই এলাকার বাসিন্দা ভোঁদা লোহার জানান, ওই রাতে সন্তানদের নিয়ে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী ঘুমিয়েছিলেন। সেই সময় হানা দেয় হাতিগুলি। মাটির বাড়ির দরজায় বেশ কয়েকবার আঘাত করে ভেঙে ফেলে একটি হাতি। তিনি বলেন, ‘‘আওয়াজ শুনে ভয়ে সবাই কোনে গিয়ে সিঁটিয়ে ছিলাম। তবে কিছুক্ষণ পরেই হাতিটি চলে যায়। ধড়ে প্রাণ আসে।’’ দাঁতাল বাহিনী এলাকার সব্জি খেতেও নেমে তাণ্ডব চালায় বলে গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা ক্ষতিপূরণের দাবিতে সোনামুখী-বেলিয়াতোড় রাস্তা অবরোধ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা রামপদ তুং এবং কৃষ্ণ তুং-এর দাবি, হাতি দোকান ভেঙে তাঁদের বেশ কয়েক হাজার টাকার লোকসান করেছে। বৃন্দাবনপুর সংলগ্ন শালবনি এলাকার শান্তিময় তুং-এর দাবি, তাঁর এক বিঘা জমির শসা হাতির পায়ের চাপে নষ্ট হয়েছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবি তুলেছেন তাঁরা। গ্রামবাসীদের সঙ্গে এ দিনের অবরোধে সামিল হন সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য সুজয় চৌধুরী এবং বৃন্দাবনপুর লোকাল কমিটির সদস্য সুভাষ তুং। সুজয়বাবু বলেন, ‘‘এলাকার দুটি হাতিকে মেরেও বনদফতর যে সমস্যার সমাধান করতে পারল না এই ঘটনাতেই তা পরিষ্কার হয়ে গেল।”
ডিএফও (বাঁকুড়া উত্তর) পিনাকী মিত্র জানান, বৃন্দাবনপুর বিটের জঙ্গলে এখন দলমার হাতির একটি দল রয়েছে। ওই দলের হাতিগুলিই বুধবার রাতে হামলা চালিয়েছে। পিনাকীবাবু জানান, দলটি উপর নজর রাখছে বনদফতর। সরকারি নিয়ম মাফিক ক্ষতিপূরণেরও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy