Advertisement
০৫ মে ২০২৪

জমানো টাকা নিয়েই হোম ছাড়ল সামাদ

প্ল্যাটফর্মে উদ্ধার হওয়া কিশোরটি বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছিল একটি কৌটো। কী আছে তাতে জানতে চাওয়ায় কচি গলা জানায়, ইদে আনন্দ করবে বলে সারা বছর ধরে ওই কৌটোয় টাকা জমিয়ে রেখেছে সে। শুনেই চমকে উঠেছিলেন চাইল্ড লাইনের কর্মীরা।

বাবার সঙ্গে বাড়ির পথে। ছবি: শুভ্র মিত্র

বাবার সঙ্গে বাড়ির পথে। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৬ ০১:৩২
Share: Save:

প্ল্যাটফর্মে উদ্ধার হওয়া কিশোরটি বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কর্মীদের হাতে তুলে দিয়েছিল একটি কৌটো। কী আছে তাতে জানতে চাওয়ায় কচি গলা জানায়, ইদে আনন্দ করবে বলে সারা বছর ধরে ওই কৌটোয় টাকা জমিয়ে রেখেছে সে। শুনেই চমকে উঠেছিলেন চাইল্ড লাইনের কর্মীরা। হোমের ঘেরাটোপের মধ্যে নয়, যে ভাবেই হোক ইদের আগে তাকে বাড়ি ফেরাতে তৎপর হয়ে ওঠেন চাইল্ড লাইনের কর্মীরা। তাঁদের চেষ্টায় ফল মিলেছে। ইদের দু’দিন আগেই বাড়ি ফিরল বাড়ির ছেলে।

সোমবার বিষ্ণুপুরের শিশুকল্যাণ কমিটির কাছ থেকে হারানো ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেন মুর্শিদাবাদ জেলার ফারাক্কার দক্ষিণ মহাদেবপুরের বাসিন্দা রফিক শেখ। গত বৃহস্পতিবার বৃহস্পতিবার বিষ্ণুপুর স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম থেকে আরপিএফ উদ্ধার করে রফিকের ছেলে, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সামাদ শেখকে। ওই রাতে তাকে তুলে দেওয়া হয় বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের হাতে। রাতেই ওই কিশোরের পরিচয় জানতে পেরে মুর্শিদাবাদ চাইল্ড লাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত তার পরিবারের লোকজনের সন্ধান করতে বলা হয়। শুক্রবার মুর্শিদাবাদ চাইল্ড লাইন রফিক শেখের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর ছেলে বাঁকুড়ায় আছে বলে জানায়। বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করে বিষ্ণুপুরের সুমঙ্গলম হোমের ফোনের নম্বর নিয়ে ছেলের সঙ্গে কথা বলেন রফিক ও তাঁর স্ত্রী মঞ্জিরা বিবি। এ দিন সকালেই ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হাজির হন বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের দফতরে। দুপুরে সুমঙ্গলম হোমে শিশুকল্যাণ কমিটির তত্ত্বাবধানে সরকারি ভাবে চাইল্ড লাইন তাঁর হাতে ছেলেকে তুলে দেন।

রফিক শেখ জানান, বুধবার রাতে সামাদ বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। তিনি বলেন, “অনেক রাত পর্যন্ত বন্ধুদের সঙ্গে খেলায় মত্ত থাকে। পড়াশোনা করে না। তাই একটু বকেছিলাম। তার জন্য ছেলে এমন কাণ্ড ঘটাবে, বুঝতে পারিনি।’’ বুধবার রাত দশটার পরেও ছেলেকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে গোটা পরিবারে উৎকন্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। সামাদের দুই দাদা ও এক দিদি রয়েছে। রমজান মাস চলছে। ক’টা দিন পরেই ইদ। রফিকের কথায়, “ছেলের কোনও খবর না পেয়ে কী ভাবে যে আমরা দুদিন কাটিয়েছি, তা আমরাই জানি। সারা দিন হন্যে হয়ে চারিদিকে ওকে খুঁজেছি। পুলিশ নিখোঁজ ডায়েরি করেছি। আল্লার কাছে ছেলেকে ফিরে পাওয়ার দোয়া করে গিয়েছি সমানে।’’

ছেলেকে হারিয়ে যে উদ্বেগের মেঘ ঘনিয়েছিল পরিবারে, যায়। শুক্রবার চাইল্ড লাইনের কাছে ছেলে ভাল আছে শুনে তা এক লহমায় কেটে যায়। বাঁকুড়া চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর সজল শীল বলেন, “ইদের জন্য সামাদ সারা বছর ধরে একটি কৌটোয় টাকা জমিয়ে রাখছিল। সেই ইদই যদি ওকে হোমে কাটাতে হয়, এর চেয়ে দুঃখের আর কিছু হতে পারে না।’’ চাইল্ড লাইনের কর্মী সব্যসাচী তিওয়ারি ও শুভ্র শীট বলছিলেন, “ইদের আগেই ওকে পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে আমরাও নিশ্চিন্ত হয়েছি।’’এ দিন বাড়ি ফিরে যাওয়ার আগে চাইল্ড লাইনের কাকুদের কাছ থেকে টাকা ভর্তি কৌটোটি নিয়ে গিয়েছে সামাদ। বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়াক অ অভিজ্ঞতা যে মোটেও ভাল হয়নি, তা-ও জানিয়েছে সে । বলেছে, “রাগ করে বাড়ি ছেড়ে ছিলাম। কিন্তু কোথায় যাচ্ছি কিছুই জানতাম না। বাড়ি থেকে ট্রেন ধরে অনেক দূর চলে এসে অচেনা মানুষের ভিড়ে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’

আর কখনও এমন করবে? সামাদের উত্তর, “না। বাবা-মা যতই বকুক, আর বাড়ি থেকে পালাব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pocket Money Samad Leaves Home Bankura
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE