Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩

পড়ে খালি যন্ত্র, মেলে না সুবিধা

সম্প্রতি মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল খালি মেশিন পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মাস খানেকেরও বেশি সময় ধরে এই অবস্থা চলছে। একই দশা বলরামপুরের বাঁশগড় গ্রামীণ হাসপাতালের যন্ত্রটির।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মানবাজার শেষ আপডেট: ২৪ জুন ২০১৭ ০২:২৪
Share: Save:

ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা ভেবে পুরুলিয়ার বিভিন্ন গ্রামেগঞ্জে বসানো হয়েছিল স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। কিন্তু তার মধ্যে অনেকগুলিতেই নতুন করে ন্যাপকিন ভরা হয়নি বলে অভিযোগ। ফলে হাতের কাছে যন্ত্র থাকলেও সেগুলি থেকে কোনও সুবিধাই পাচ্ছেন না বাসিন্দারা।

Advertisement

সম্প্রতি মানবাজার গ্রামীণ হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেল খালি মেশিন পড়ে রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, মাস খানেকেরও বেশি সময় ধরে এই অবস্থা চলছে। একই দশা বলরামপুরের বাঁশগড় গ্রামীণ হাসপাতালের যন্ত্রটির। দু’ মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই যন্ত্রে নতুন স্যানিটরি ন্যাপকিন ভরা হয়নি।

পুরুলিয়ার ডেপুটি সিএমওএইচ (৩) হিমাদ্রী হালদার জানান, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে মূলত বয়ঃসন্ধির কিশোরীদের ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতার কথা ভেবে এই যন্ত্রগুলি বসানো হয়েছিল। পাঁচ টাকার কয়েন দিয়ে ওই যন্ত্র থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন পাওয়া যায়।

জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, পুরুলিয়ার প্রায় সমস্ত ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কয়েকটি মেয়েদের স্কুল এবং কলেজে এই যন্ত্র বসেছে। যন্ত্রে স্যানিটরি ন্যাপকিন ভরার দায়িত্বে রয়েছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাঁদের ওই যন্ত্রে নতুন ন্যাপকিন ভরার কথা। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। হিমাদ্রীবাবু বলেন, ‘‘নিয়মিত ন্যাপকিন রিফিল না হওয়ায় আমরা ওই সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছি। চিঠিও দিয়েছি।’’

Advertisement

এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, ঋতুকালীন স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব থাকায় সংক্রমণ হয়ে গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের অনেকেই অসুখে পড়েন। সে ক্ষেত্রে যন্ত্রের মাধ্যমে জীবানুমুক্ত স্যানিটরি ন্যাপকিন সরবরাহ করার ব্যবস্থা খুবই জরুরি। কিন্তু নিয়মিত রিফিল না হওয়ায় সেই উদ্যোগের অনেকটাই মাঠে মারা যাচ্ছে। বিএমওএইচ (মানবাজার) কালীপদ সোরেন বলেন, ‘‘আমাদের এখানে প্রায় ছ’মাস আগে ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। তখন অনুষ্ঠান করে স্বাস্থ্যকর্মী এবং সাধারণ মহিলাদের এর উপযোগিতা বোঝানো হয়েছিল। কিন্তু সংস্থার পক্ষ থেকে পরে যন্ত্রে কেউ আর ন্যাপকিন ভরেছেন বলে মনে পড়ছে না। জেলায় এই ব্যাপারটা কয়েক বার জানিয়েছি।’’

বিএমওএইচ (পুঞ্চা) সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়ের অভিজ্ঞতাও প্রায় একই। তিনি বলেন, ‘‘যন্ত্র বসানোর পরে অনেকই সেখান থেকে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিচ্ছিলেন। কিন্তু এক বার শেষ হওয়ার পরে আর ন্যাপকিন ভরা হয়নি। জেলা কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা জানেন।’’ জেলার অনেক ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই ছবিটা প্রায় এক। এক ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, ‘‘ঘটা করে মা ও প্রসূতি বিভাগের সামনে ছ’-সাত মাস আগে যন্ত্রটা বসানো হল। রিফিল না করায় এখন আর কোনও কাজে আসছে না। অনেকেই এসে খোঁজ করেন। আমাদেরই খারাপ লাগে।’’

যন্ত্রগুলি দেখভালের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সেক্রেটারি পরিচয় দিয়ে কল্পনা কুইরি বলেন, ‘‘জেলার ২০টি ব্লক স্বাস্থ্য দফতর এবং মেয়েদের স্কুল ও কলেজ মিলিয়ে মোট ২৫টি যন্ত্র বসানো হয়েছে। কিছু সমস্যার জন্য ন্যাপকিন সরবরাহ ব্যহত হয়েছে। আমরা দ্রুত শুধরে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’’

জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে সংস্থার প্রতিনিধিদের সাথে বৈঠক হয়েছিল। আবার তাঁদের সঙ্গে কথা বলব।’’

বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলাশাসক অলকেশপ্রসাদ রায়ও।

পাশে কোল ইন্ডিয়া

জেলা ও মফস্সলের ছাত্রীদের জন্য স্কুলে স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসাচ্ছে কোল ইন্ডিয়া। সংস্থার সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি-র আওতায় জেলার ৪৯টি স্কুলে এই যন্ত্র বসানো হচ্ছে বলে জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা পরিষদের সহায়তায় মেয়েদের স্কুল ও কো-এডুকেশন স্কুলে যন্ত্রগুলি বসানো হবে।

জেলা পরিষদের শিক্ষা বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ সুষেণচন্দ্র মাঝি জানান, কোল ইন্ডিয়ার এই উদ্যোগের ফলে গ্রাম ও মফস্সলের ছাত্রীরা উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ‘‘গ্রাম বা মফস্সলে ছাত্রীরা স্যানিটারি ন্যাপকিন কিনতে অনেক সময়ে সমস্যায় পড়ে। স্কুলে যন্ত্র থাকলে অল্প দামে তারা হাতের নাগালে তা পাবে।’’

বৃহস্পতিবার পুরুলিয়া জেলা পরিষদে এই প্রকল্পের সূচনা করেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতো। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অরিন্দম দত্ত। কোল ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে প্রকল্পটি দেখভালের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক অরূপ সেনগুপ্ত জানান, ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনের সঙ্গে ব্যবহৃত ন্যাপকিন বিনষ্ট করার যন্ত্রও বসানো হচ্ছে।

একটি সংস্থা ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিনগুলি নিয়মিত রিফিল করার কাজ করবে বলে তাঁর আশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.