Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ছ’দিন বন্ধ স্কুল, ভাবাচ্ছে অপুষ্টি

সহদেব মাহাতো পেশায় দিনমজুর। নিজের বিশেষ লেখাপড়া শেখা হয়ে ওঠেনি। অনেক টানাটানির মধ্যেও মেয়েদের পড়াচ্ছেন। কিঙ্কর মাহাতোও দিনমজুরি করে মেয়েকে পড়াচ্ছেন। তাঁদের চিন্তা অনেকটা লাঘব করেছিল মিড-ডে মিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
আড়শা শেষ আপডেট: ০৯ মে ২০১৭ ০৮:৫০
Share: Save:

সহদেব মাহাতো পেশায় দিনমজুর। নিজের বিশেষ লেখাপড়া শেখা হয়ে ওঠেনি। অনেক টানাটানির মধ্যেও মেয়েদের পড়াচ্ছেন। কিঙ্কর মাহাতোও দিনমজুরি করে মেয়েকে পড়াচ্ছেন। তাঁদের চিন্তা অনেকটা লাঘব করেছিল মিড-ডে মিল। এক বেলার খাবারটা অন্তত বাচ্চাগুলো স্কুলে পেয়ে যেত। কিন্তু একশো দিনের কাজ নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির জেরে স্কুলে তালা পড়েছে। লেখাপড়া, খাবার— সমস্ত কিছুই বন্ধ।

একশো দিনের কাজের নয়া প্রকল্পে বহাল করা নিয়ে ভুল বোঝাবুঝিতে টানা ছ’দিন তালা ঝুলছে জঙ্গলমহলের ব্লক আড়শার শালুইডহর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রকল্প শুরু ঠিক পরের দিন থেকে ওই স্কুলের সদর দরজায় তালা পড়েছে। মি-ডে মিলের হাঁড়ি চড়ছে না। স্কুল চত্বরেই গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র। সেখানেও রান্নাবান্না বন্ধ।

সোমবার, সপ্তাহের প্রথম দিনেও সেই তালা খোলা নিয়ে বিশেষ কোনও উদ্যোগ দেখা যায়নি। স্কুলের গেটে গাছের ছায়ায় অপেক্ষা করে ফিরে গিয়েছেন শিক্ষক শিক্ষিকারা। আড়শা ব্লকের ওই স্কুলের ১৪৬ জন পড়ুয়ার অধিকাংশই মি়ড-ডে মিলের মুখ চেয়ে থাকে। তাদের অভিভাবকেরা কেউ দিনমজুর, কেউ কৃষি শ্রমিক। কিঙ্কর মাহাতো বলেন, ‘‘বুধবার থেকে স্কুলে তালা। এক বেলার খাবারটা অন্তত পেত বাচ্চাগুলো। সেটাও হচ্ছে না।’’

কিন্তু এত দিন ধরে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে?

ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জীব খাঁ বলেন, ‘‘অবর বিদ্যালয় পরিদর্শককে সবই জানিয়েছি।’’ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা রেখা দাস জানালেন, কেন্দ্র থেকে ৪০টি বাচ্চা খাবার পায়। তাদের মধ্যে অপুষ্টিতে ভোগা অনেকে রয়েছে। তালা পড়ায় তাদের একবেলার খাবারের ভরসাটুকুও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। হেঁশলা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য, ওই গ্রামেরই বাসিন্দা রাকেশ সহিস বলেন, ‘‘আমরা সবাইকে বোঝাচ্ছি, এটা দশটা পাঁচটার চাকরি না। একশো দিনের অন্য কাজের মতোই। কিন্তু সমস্যা মিটছে না।’’

পুরুলিয়া জেলা শাসক অলকেশপ্রসাদ রায়কে এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দিনের পর দিন এমনটা চলতে পারে না। ওই স্কুল খোলার ব্যবস্থা করছি।’’

এ দিকে, সোমবার অন্য অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্ন ভাবে একই রকমের বিক্ষোভ হয়েছে। পুরুলিয়া ২ ব্লকের মহাড়া, পুরুলিয়া ১ ব্লকের কুকুরগড়িয়া, হুড়া ব্লকের শ্যামনগর, আড়শার কুমিরডিহা প্রাথমিক স্কুলে তালা ঝোলানোর খবর পাওয়া গিয়েছে। আড়শার চাটুহাঁসা গ্রাম পঞ্চায়েতের সামনে। এলাকার স্কুলেগুলিতে একশো দিনের কাজে বহাল করা নিয়ে অসন্তোষের জেরে পাড়া ব্লকের নডিহা-সুরুলিয়া পঞ্চায়েতে তালা ঝুলিয়ে দেন এলাকার স্বনিভর দলের মহিলারা। নডিহা হাইস্কুলেও বিক্ষোভ দেখান তাঁরা। বাধার মুখে পড়ুয়াও শিক্ষকেরা স্কুলে ঢুকতে পারেননি। পাড়ারই ঝাপড়া-জবড়রা ২ পঞ্চায়েতের ফুসড়াবাইধ গ্রামের মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্রেও বিক্ষোভ হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Midday Meal school closed malnutrition Hungry
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE