Advertisement
০৭ মে ২০২৪

স্পঞ্জ আয়রন কারখানার ধোঁয়ায় বিষ, আক্রান্ত ছাগল-ভেড়াও

কেবল ঘর-গেরস্থালি বা পরিবেশই নয়, দূষণের শিকার ছাগল-ভেড়াও। বলরামপুরের দাঁতিয়ায় স্পঞ্জ আয়রন কারখানা লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের এমনই অভিযোগ। তাঁদের দাবি, স্পঞ্জ আয়রান কারখানার ধোঁয়ায় মিশে উড়ে আসা কার্বনের গুঁড়োর স্তর জমছে গাছের পাতায় এবং সেই পাতা খেয়ে রোগের শিকার হচ্ছে গৃহপালিত ছাগল-ভেড়া।

কালো গুড়োয় ঢাকা পাতা খেয়ে আক্রান্ত পশু। নিজস্ব চিত্র

কালো গুড়োয় ঢাকা পাতা খেয়ে আক্রান্ত পশু। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা 
বলরামপুর শেষ আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:০২
Share: Save:

কেবল ঘর-গেরস্থালি বা পরিবেশই নয়, দূষণের শিকার ছাগল-ভেড়াও। বলরামপুরের দাঁতিয়ায় স্পঞ্জ আয়রন কারখানা লাগোয়া গ্রামগুলির বাসিন্দাদের এমনই অভিযোগ। তাঁদের দাবি, স্পঞ্জ আয়রন কারখানার ধোঁয়ায় মিশে উড়ে আসা কার্বনের গুঁড়োর স্তর জমছে গাছের পাতায় এবং সেই পাতা খেয়ে রোগের শিকার হচ্ছে গৃহপালিত ছাগল-ভেড়া। এই সমস্যা থেকে মুক্তি চেয়ে অবিলম্বে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন, দাঁতিয়া, আমটাঁড়, বিরামডি, মালতি, বহড়াডি, ভালুবাসা-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, দাঁতিয়া গ্রামে চারটি স্পঞ্জ আয়রন কারখানা চলছে। কিন্তু বিদ্যুতের খরচ বাঁচাতে কারখানাগুলি দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র (ইলেক্ট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটর) ব্যবহার করছে না। তার খেসারত দিতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। স্থানীয় বাসিন্দা মধুসূদন কুমার, প্রশান্ত কুমার, রবীন্দ্র সোরেনদের অভিযোগ, ‘‘ওই স্পঞ্জ আয়রন কারখানার দূষণে এলাকার গ্রামগুলির নাভিশ্বাস উঠছে। কালো রঙের গুঁড়োর চাদরে ঢাকা পড়ছে ঘরবাড়ি। গাছের সবুজ পাতা, শাক-আনাজের উপরেও কালো আস্তরণ পড়ছে। ছাগল-ভেড়া মাঠে চরতে গিয়ে কালো আস্তরণ পড়ে যাওয়া গাছপালা খাচ্ছে। ওই দূষিত পাতা খাওয়ায় ছাগল ও ভেড়ার মুখে ঘা হচ্ছে।’’

দাঁতিয়া গ্রামের বাসিন্দা প্রফুল্ল কুমারের অভিযোগ, ‘‘গৃহপালিত পশুগুলোও এখন আর ডালপালা খেতে চায় না। ভাল করে জলে ধুয়ে দিলে তবেই খায়।’’ তাঁর ছেলে মধুসূদন কুমার বাড়ির ছাগলগুলোকে দেখিয়ে বলেন, ‘‘ওদের মুখে ঘা বেরিয়েছে। আগে অল্প ছিল। এখন বাড়ছে। স্পঞ্জ আয়রন কারখানা চালু হওয়ার আগে এ সব রোগ হত না।’’

দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় দূষণের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দাঁতিয়া-সহ আশপাশের গ্রামগুলির বাসিন্দারা সম্মিলিত ভাবে গড়ে তুলেছেন একটি সংগঠন। সেই সংগঠনের আহ্বায়ক সীতারাম হাঁসদা বলেন, ‘‘প্রকৃতিকে ঘিরেই গ্রামের মানুষ-সহ সমস্ত প্রাণী বেঁচে থাকে। পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়ার প্রভাব তাই মানুষের সঙ্গে পশুদের উপরেও পড়ছে। রোগে আক্রান্ত হচ্ছে ছাগল, ভেড়াও। প্রশাসনকে এ বার সক্রিয় হতে হবে।’’

গ্রামবাসীর এই আন্দোলনে সঙ্গী হয়েছে ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’ও। সংগঠনের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গ্রামবাসীর আহ্বানে আমরা তাঁদের আন্দোলনে পাশে রয়েছি। আমাদের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি দাঁতিয়া এলাকা সরজমিনে পরিদর্শন করে এসেছে। স্পঞ্জ আয়রন কারখানাগুলির দূষণের জেরে সেখানে ভয়ানক অবস্থা।’’ সংগঠনের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মানুষের পাশাপাশি, ওখানে এখন ছাগল-ভেড়াও আক্রান্ত হচ্ছে।’’

নয়নবাবু পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘‘ওই এলাকায় যে কালো আস্তরণ উড়ছে তাতে মূলত সিলিকা, কার্বন ও নাইট্রোজেন মিশে রয়েছে। নিঃশ্বাসের সঙ্গে মিশে সিলিকা, কার্বন ইত্যাদি মানুষের শরীরে ঢুকছে। এর জেরে ফুসফুসের স্বাভাবিক কাজ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে, সেখানে শ্বাসকষ্টের সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। বিশেষত শিশুরাও এই সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছে। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চললে যক্ষায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।’’

দাঁতিয়া গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের এক কর্মী কল্পনা মাহাতো জানাচ্ছেন, ইতিমধ্যেই এলাকার শিশুদের একাংশের মধ্যে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

দূষণের অভিযোগ মানতে নারাজ স্পঞ্জ আয়রন কারখানা কর্তৃপক্ষ। একটি কারখানার ম্যানেজার অমিতকুমার সিংহের দাবি, ‘‘আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকেরাও পরিদর্শন করতে আসেন। কারখানা থেকে দূষণের অভিযোগ ঠিক নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Air Pollution Sheep Goat Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE