কী কারণে রাঁচির ভাড়াবাড়িতে দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও মেয়েকে খুন করে আত্মহত্যা করলেন তাঁর ছেলে, সেটাই বুঝে পাচ্ছেন না পুরুলিয়া শহরের উদ্ভবচন্দ্র স্ট্রিটের বাসিন্দা ভজহরি গড়াই। তবে, ঘটনার কথা জেনে বিরাট ধাক্কা খেয়েছে ওই পরিবার।
সোমবার রাঁচির জগ্গনাথপুর থানা এলাকার হাতিয়ায় একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল বিনয়কৃষ্ণ গড়াই(৪০),তাঁর স্ত্রী সীমা (৩৫) এবং ওই দম্পতির ন’বছরের মেয়ে শ্বেতার দেহ। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, প্রথমে সীমাদেবীর হাতের শিরা কেটে তাকে খুন করেছিলেন বিনয়। পরে মেয়েকে গলা টিপে খুন করে নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেন। মেঝেয় পড়েছিল সীমাদেবীর দেহ। রাঁচির পুলিশ সুপার (শহর) কৌশল কুমার জানিয়েছেন, কী কারণে ওই খুন ও আত্মহত্যা, তা স্পষ্ট নয়। রাঁচিতে একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী বিনয়কৃষ্ণ হাতিয়া এলাকার ওই বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
ঘটনার দিন সকালে তাঁদের পরিচারিকা কাজ করতে এসে ঘর বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেলে পড়শিদের বিষয়টি জানান। পড়শিরা বন্ধ ঘরের একটি জানলা খুলে তিনটি দেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন।
পুলিশের মতোই ঘটনার বিষয়ে অন্ধকারে পুরুলিয়া শহরের বাসিন্দা দু’টি পরিবারই। বিনয়কৃষ্ণের বাবা ভজহরিবাবুর কাছে ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কিছুই বলতে চাননি তিনি। বুধবার শুধু বলেন, ‘‘ছেলে খুব কমই পুরুলিয়ার বাড়িতে আসত। কী হয়েছে, কেন হয়েছে কিছুই বলতে পারব না।” এমনকী, রাঁচিতে গিয়ে ছেলের দেহ নিয়ে সৎকার করবেন কিনা, সে বিষয়েও তাঁরা কোনও সিদ্ধান্ত নেননি। স্থানীয় সূত্রেও জানা যাচ্ছে, ছেলের সঙ্গে প্রায় কোনও সম্পর্ক ছিল না বাবার। তবে মাধেমধ্যে উদ্ভবচন্দ্র স্ট্রিটের বাড়িতে আসতেন বিনয়কৃষ্ণ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিনয়কৃষ্ণের দেহ এখনও মর্গেই পড়ে রয়েছে।
সীমাদেবীর বাপের বাড়ি পুরুলিয়া শহরের শরবাগান এলাকায়। বাবা জয়কৃষ্ণ দত্ত অবসপ্রাপ্ত রেলকর্মী। বুধবার শরবাগানে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কেউ নেই। ডাকাডাকি করলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন পরিচারিকা বুড়ি বাউরি। তিনি জানান, সম্প্রতি মেয়ে শ্বেতাকে নিয়ে পুরুলিয়াতে বাবার কাছে এসেছিলেন সীমাদেবী। রবিবার তিনি রাঁচিতে ফিরে যান। ঘটনার খবর পাওয়ার পরেই মেয়ে ও নাতনির দেহ আনতে রাঁচি গিয়েছেন জয়কৃষ্ণবাবু-সহ পরিবারের লোকজন। তবে সম্ভবত মেয়ে ও নাতনির দেহ রাঁচিতেই জয়কৃষ্ণবাবু দাহ করবেন বলে জানিয়েছেন তাঁর সঙ্গে রাঁচি যাওয়া এলাকার বাসিন্দা তথা পুরুলিয়ার বিজেপি নেতা বিনোদ তিওয়ারি।
স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, সীমাদেবী বিনয়কৃষ্ণের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী ছ’বছরের মেয়েকে নিয়ে উদ্ভবচন্দ্র স্ট্রিটে শ্বশুরবাড়িতেই থাকেন। ঘটনার বিষয়ে তিনিও শ্বশুর ভজহরিবাবুর মতো কিছু বলতে বা জানাতে চাননি। বিনয়কৃষ্ণ ও সীমাদেবীর পরিবারের পড়শিদের একাংশের ধারণা, বিভিন্ন বিষয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিবাদ তৈরি হয়েছিল। তারই জেরে হয়তো মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে। রাঁচির হাতিয়ার যে বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ওই দম্পতি, সেখানকার বাসিন্দাদের একাংশও জানিয়েছে, নানা কারণে প্রায়ই ওই দু’জনের মধ্যে ঝগড়া হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy