Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Kanyashree

Duarey Sarkar: ভিড়ে ঠাসা শিবিরে ‘কন্যাশ্রী’রা, বিতর্ক

শিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, করোনা-টিকা পাওয়া ছাত্রীরা শিবিরে গেলে তাতে আপত্তির কোনও কারণ নেই।

নিগমনগরের শিবিরে।

নিগমনগরের শিবিরে। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা 
রঘুনাথপুর ও বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৬:২৬
Share: Save:

‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের ফর্ম পূরণে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে আসা মহিলাদের সাহায্য করতে ‘কন্যাশ্রী’ ছাত্রীদের কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। এই করোনা পরিস্থিতিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে একাধিক শিক্ষক সংগঠন।

প্রশাসন সূত্রে খবর, সম্প্রতি পুরুলিয়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শককে লেখা এক চিঠিতে জেলার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) মুফতি শামিম সওকত জানান, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পে প্রচুর মহিলা আবেদন করতে আসছেন। অনেকে ফর্ম পূরণ করতে সমস্যায় পড়ছেন। সে কাজে সহায়তা করতে স্কুলগুলির ‘কন্যাশ্রী ক্লাব’-এর সদস্যদের দুয়ারে সরকার শিবিরে পাঠাতে হবে’। ইতিমধ্যেই কয়েকটি শিবিরে ওই কাজ করতে দেখা গিয়েছে ‘কন্যাশ্রী’দের। সম্প্রতি, রঘুনাথপুর ১ ব্লকের নিগমনগর এনএস হাইস্কুলের শিবিরে জনা দশেক কন্যাশ্রী ছাত্রীকে ভিড় সামলানোর পাশাপাশি মাস্ক পরার অনুরোধও জানাতে দেখা যায়।

সূত্রের খবর, গত ২৬ অগস্ট ওই চিঠি পেয়ে পরেই বিষয়টি জেলার সব স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানিয়ে দেয় জেলা শিক্ষা দফতর। তবে কী ভাবে ‘কন্যাশ্রী’দের শিবিরগুলিতে পাঠানো হবে, তা নিয়ে ‘ধন্দে’ পড়েছেন বহু শিক্ষক। ‘মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি’র পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক কাজলকুমার রায়ের মতে, “করোনা-পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের সুরক্ষার জন্য স্কুল বন্ধ রাখা হচ্ছে। অথচ দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতে কয়েক হাজার লোকের ভিড়ে করোনার টিকা না পাওয়া ছাত্রীদের কোন যুক্তিতে পাঠানো হচ্ছে?’’

‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেস’-এর পুরুলিয়া জেলা সভাপতি স্বপন সাউ বলেন, ‘‘দুয়ারে সরকার একটি সরকারি কর্মসূচি। সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের সরকারি নির্দেশ মানতেই হবে। কিন্তু তা করতে গেলে ছাত্রীদের সুরক্ষা প্রশ্নের মুখে পড়বে। ফলে, শিক্ষকেরা পড়েছেন সমস্যায়।’’ অনেক অভিভাবক তাঁদের মেয়েদের ‘দুয়ারে সরকার’-এর শিবিরে পাঠাতে রাজি হচ্ছেন না বলেও দাবি করেছে ওই সংগঠন। এবিটিএ-র জেলা সম্পাদক ব্যোমকেশ দাস বলেন, ‘‘এটা অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত। ছাত্রীদের বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়ার শামিল।’’

রঘুনাথপুর ১ ব্লকের শাঁকড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অভিষেক মিশ্র বলেন, ‘‘কন্যাশ্রীদের দুয়ারে সরকারের শিবিরে পাঠানোর কথা বলার পরেই অভিভাবকদের একাংশ আপত্তি তুলতে শুরু করছেন।’’ তবে ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র জেলা সভাপতি সত্যকিঙ্কর মাহাতো মনে করেন, ‘‘ছাত্রীদের বিপদে ফেলার কোনও অভিপ্রায় প্রশাসনের নেই। প্রশাসন চাইছে, করোনা-বিধি মেনেই কন্যাশ্রীরা ওই কাজ করুক। এতে আপত্তির কিছু থাকতে পারে না।’’

অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) বলেন, ‘‘যাঁরা কন্যাশ্রী পেয়েছেন, তাঁদের পরিবারের মা-কাকিমারাই লক্ষ্ণীর ভান্ডারে আবেদন করছেন। তাঁদের সাহায্যের জন্য স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যাচ্ছে কন্যাশ্রী ছাত্রীরা।’’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) গৌতমচন্দ্র মাল বলেন, ‘‘এটা জেলা প্রশাসনের নির্দেশ। আমি তা স্কুলগুলিতে পাঠিয়েছি। আমাদের করণীয় কিছু নেই।’’ কয়েকটি শিক্ষক সংগঠনের প্রস্তাব, ‘কন্যাশ্রী’দের পরিবর্তে যে সমস্ত শিক্ষক ইতিমধ্যেই করোনা-টিকার দু’টি ডোজ় পেয়েছেন, তাঁদের শিবিরে পাঠানো হোক।

পুরুলিয়ার মতো একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনও। শিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, করোনা-টিকা পাওয়া ছাত্রীরা শিবিরে গেলে তাতে আপত্তির কোনও কারণ নেই। ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরে আসা মানুষজনকে আবেদনপত্র পূরণের কাজে সাহায্য করছে করোনা-টিকা নেওয়া বাঁকুড়ার খাতড়ার গোড়াবাড়ি পঞ্চায়েতের বাসিন্দা পূজা দুলে, শ্রেয়া বাগদি, শিল্পা সাহুর মতো ‘কন্যাশ্রী’ ছাত্রীরা। মহকুমাশাসক (খাতড়া) মৈত্রী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘শিবিরে যেতে ইচ্ছুক, এমন কন্যাশ্রী ছাত্রীদের নেওয়া হচ্ছে। ব্লক ও শিক্ষা দফতর সমন্বয় রেখে সে কাজ করছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kanyashree Duarey Sarkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE