—প্রতীকী চিত্র।
২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। একে ঘিরে জেলায় নানা কর্মসূচি নিয়েছে গেরুয়া শিবির। ঠিক সে দিনই কলকাতায় সংহতি মিছিলের ডাক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। একই কর্মসূচি পালন করতে হবে জেলাও। এ মর্মে তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীর লিখিত নির্দেশিকা জেলায় পৌঁছে গিয়েছে। তৃণমূল সূত্রে খবর, এই সিদ্ধান্ত নিয়ে জেলায় দলের অন্দরে প্রশ্ন রয়েছে। যা নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি।
তৃণমূলের কোর কমিটির আহ্বায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘রাজ্য সভাপতির নির্দেশ অনুযায়ী সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা নিয়ে জেলার প্রতিটি শহর ও ব্লকে একটি করে সংহতি মিছিল হবে।’’ বিকাশের সংযোজন, ‘‘কোর কমিটির সদস্য, সাংসদ, বিধায়ক, ব্লক সভাপতি, শাখা সংগঠনের নেতারা প্রত্যেকে নিজের নিজের এলাকায় থাকবেন। নিজেদের এলাকায় সোমবার বেলা তিনটের সময়ে সংহতি মিছিলের আয়োজন করবেন।’’
রাজ্য সভাপতির ওই লিখিতবার্তায় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, “মিছিলে সব ধর্মের মানুষের যোগদান বাঞ্ছনীয় এবং মিছিলের সামনের সারিতে ধর্মগুরুদের রাখতে হবে। যে রাস্তা দিয়ে মিছিল যাবে সেই পথ ঠিক করবেন স্থানীয় নেতারা। যেখানে মিছিল শেষ হবে, সেখানেই একটি মঞ্চ থেকে সমন্বয়ের উপরে ধর্মগুরুদের বক্তৃতার আয়োজন করতে হবে। গোটা পথ সুন্দর ভাবে সাজাতে হবে পতাকা ফেস্টুন দিয়ে।’’ রামমন্দির উদ্বোধন আদতে রাজনৈতিক অঙ্ক কষে হয়েছে বলে সরব তৃণমূল। নির্দেশে সংহতি মিছিলে এবং সভায় ধর্মগুরুদের সামনের সারিতে রাখার কথা বলে হয়েছে। বিজেপির মন্দির-রাজনীতিকে সামনে আনতে তৃণমূলের এই সিদ্ধান্ত বলে মত রাজনৈতিক মহলে।
লিখিত বার্তায় রাজ্য সভাপতি আরও বলেছেন, ‘‘ফেস্টুন, ব্যানার, ব্যাকড্রপের ডিজাইন পাঠানো হচ্ছে।’’ জেলা তৃণমূল সূত্রে খবর, এগুলি শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত না পৌঁছলেও প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন দলের নেতা, কর্মীরা। কিন্তু সংহতি মিছিলকে কেন্দ্র করে বছর কয়েক আগের রামনবমী পালনের পুনরাবৃত্তি হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের অন্দরেই।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা তৃণমূলের নেতাদের একাংশ বলেন, ‘‘প্রকাশ্যে কেউ রামমন্দিরের বিরোধিতা করবেন না। জেলায় রামমন্দিরের উদ্বোধনকে ঘিরে গেরুয়া শিবিরের নানা কর্মসূচি রয়েছে। সেটা কোনও রাজনৈতিক ব্যানারে হচ্ছে না। যেখানে সাধারণ মানুষকে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে। তার পরে একই দিনে সংহতি মিছিলে হাঁটার লোক পাওয়া যাবে কি?’’
যেমন, দুবরাজপুরে রামমন্দির উদ্বোধনে শোভাযাত্রা করবে গেরুয়া শিবির। মিছিল হবে শহরের রামসীতা মন্দির থেকে। সঙ্ঘের তরফে সাধারণ মানুষকে সেখানে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সে দিনই শহরের কার্যত পাল্টা সংহতি মিছিল করা উচিত কি না তা নিয়ে ধন্দে শহরের নেতৃত্ব। তাঁরা মনে করিয়ে দিয়েছেন, বছর কয়েক আগে রামনবমী পালনের কথা। সে বার শহরের রামসীতা মন্দির থেকে দু’টি রাম নবমীর মিছিল বের হয়।
একটি হয় রামনবমী উদ্যাপন কমিটির (গেরুয়া শিবির) তরফে। অন্যটি, শাসকদলের তরফে। জমায়েতে অনেক এগিয়ে ছিল গেরুয়া শিবির, এমনই আড়ালে জানাচ্ছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। লোকসভা নির্বাচনের আগে একই রকম অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রে খবর। দুবরাজপুর শহর নেতৃত্বের ভাবনা, সংহতি মিছিল যদি পিছিয়ে ২৬ জানুয়ারি করা যায়। তবে প্রকাশ্যে মন্তব্য এড়িয়েছেন নেতারা।
জেলার নেতাদের অন্য অংশের কেউ কেউ মনে করছেন, ‘জোর’ করে চাপিয়ে দেওয়া কর্মসূচি সফল করা সমস্যার। এ ক্ষেত্রে ঝুঁকিও রয়েছে। কেউ যদি বেফাঁস কিছু বলে ফেলেন তা তে আখেরে লাভ হবে বিজেপির। এ নিয়ে বিজেপির বীরভূম সাংগঠিনক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহার কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূল আতঙ্কিত। ভাবছে যে সনাতনী সমাজের মানুষ তৃণমূল থেকে সরে গেল। আসলে যে সংখ্যালঘু ভাইদের সন্তুষ্ট করতে এই সিদ্ধান্ত, তাঁরাও তৃণমূল থেকে সরে গিয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy