Advertisement
০৫ মে ২০২৪

সংস্কৃত পড়ানো হবে না কেন, স্কুলে বিক্ষোভ

স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষক নেই। অথচ সংস্কৃত বিষয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তার উপরে সম্প্রতি সরকারের নির্দেশ মেনে শিক্ষক না থাকায় ওই স্কুলে সংস্কৃত নিয়ে আর পড়ানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সোনাগাড়া (রাইপুর) শেষ আপডেট: ১৬ জুলাই ২০১৬ ০২:২৯
Share: Save:

স্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষক নেই। অথচ সংস্কৃত বিষয়ে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। তার উপরে সম্প্রতি সরকারের নির্দেশ মেনে শিক্ষক না থাকায় ওই স্কুলে সংস্কৃত নিয়ে আর পড়ানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক। এই ঘোষণায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে সংস্কৃত বিষয় নিয়ে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে। ওই ঘটনা-সহ স্কুলের নানা সমস্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাইপুর ব্লকের শালকু সোরেন স্মৃতি বিদ্যাপীঠে বিক্ষোভ দেখাল পড়ুয়ারা। ক্লাস বয়কটও করা হয়। স্কুলের স্টাফ রুমে তালাও দেয় পড়ুয়ারা। তার জেরে দিনভর বন্ধ থাকে পঠনপাঠন।

রাইপুর ব্লকের সোনাগাড়া পঞ্চায়েতের ভাদলী খুট্টামডি এলাকায় অবস্থিত শালকু সোরেন বিদ্যাপীঠ। পড়ুয়ার সংখ্যা সাড়ে ছ’শো। মাসড়া, অসুরগেড়িয়া, ভাদলী, খুট্টামডি, লোহামেড়্যা, বামুনগোড়া, সদানন্দপুর, কুলডিহা, ঝারি, ভাদলী, খুট্টামডি, খয়েরডুংরি-সহ আশেপাশের ১৫-১৬টি গ্রামের ছেলেমেয়েরা এই স্কুলে পড়াশোনা করে।

এলাকার বাসিন্দা বিশ্বজিৎ নাগ, তারকনাথ নাগ বলেন, “চলতি শিক্ষাবর্ষে কলাবিভাগে এই স্কুলের একাদশ শ্রেণিতে ৪৬ জন ভর্তি হয়েছে। তাদের অনেকের বিষয় সংস্কৃত। ক’দিন আগে প্রধানশিক্ষক জানিয়েছেন, যে স্কুলে সংস্কৃত বিষয়ে স্থায়ী শিক্ষক না থাকায় ওই বিষয় নিয়ে একাদশ শ্রেণিতে আর পড়া যাবে না। পড়ুয়াদের সংস্কৃতের বদলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিতে হবে। না হলে অন্য স্কুলে যেতে হবে। ভর্তির পর ক্লাস চালু হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় বিষয় পাল্টালে সমস্যায় পড়বে পড়ুয়ারা।’’

একাদশ শ্রেণির ছাত্রী শম্পা নাগ, সুস্মিতা মাহাতো, রিয়া দাস বলে, “সংস্কৃতে বেশি নম্বর পাওয়া যায়। তাই কলাবিভাগে সংস্কৃত বিষয় নিয়ে ভর্তি হয়েছি। এখন প্রধান শিক্ষক স্কুলে থাকতে হলে সংস্কৃতের বদলে রাষ্ট্রবিঞ্জান বিষয় নিয়ে পড়তে বলছেন। তা না হলে মটগোদা, মণ্ডলকুলি বা রাইপুরের স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।’’ তাদের ক্ষোভ, গ্রাম থেকে এই স্কুল অনেক কাছে। আর অন্য স্কুলগুলো কমবেশি ৮-১০ কিলোমিটারের বেশি দূরে। ফলে তাঁরা উভয় সঙ্কটে পড়েছে।

পড়ুয়াদের আরও অভিযোগ, স্কুলে পানীয় জলেরও সমস্যা রয়েছে। খেলার মাঠও নেই। পাঁচিল নেই, নেই লাইব্রেরি, সাইকেল স্ট্যান্ডও। দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী পূজা কর্মকার, সনকা মাহাতোর দাবি, স্কুলের নলকূপ থেকে ফ্লোরাইড মিশ্রিত জল ওঠে। মুখে দেওয়া যায় না। বিদ্যুৎ থাকলেও কোনও ক্লাসরুমেই সংযোগ দেওয়া হয়নি। এত সমস্যা থাকলেও প্রশাসনের কোনও নজরই নেই।

পড়ুয়াদের সঙ্গে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন স্থানীয় কয়েকজন অভিভাবকও। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষকদের কয়েকজন গাছতলায় চেয়ার পেতে বসেছিলেন। স্টাফরুমে তালা ঝুলছে। প্রধান শিক্ষক শুকলাল হেমব্রম কয়েকজন সহশিক্ষককে নিয়ে তাঁর অফিসের বাইরে চেয়ারে বসে ছিলেন। পড়ুয়াদের তোলা সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন প্রধানশিক্ষকও।

শালকু সোরেন স্মৃতি বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, “সরকারি নির্দেশে বলা হয়েছে, যে সব বিষয়ে স্থায়ী শিক্ষক নেই সেখানে ওই বিষয়ে ছাত্র ভর্তি করা যাবে না। ৯ জুলাই ওই নির্দেশ হাতে পেয়ে ১১ জুলাই মিটিং

করে পড়ুয়া ও অভিভাবকদের তা জানিয়ে দিই। এ ক্ষেত্রে স্কুলের কোনও ত্রুটি নেই।’’

রাইপুরের বিডিও দীপঙ্কর দাস বলেন, “ওই স্কুলের সমস্যার কথা জানি। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা মিটিয়ে ক্লাস চালু করার চেষ্টা চলছে।” পড়ুয়ারা অবশ্য তাদের

দাবি থেকে সরে আসবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

sanskrit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE