Advertisement
E-Paper

ছাত্রীদের নাটক লেখার পরামর্শ

স্কুলের পাঠে ইতি টেনে পরিবারের লোকেরা মেয়েটির বিয়ে ঠিক করেছিল। সেই বিয়ে রুখে দেওয়া নিয়েই নাটক তৈরি করেছিল বোরোর আঁকরো হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যেরা।

সমীর দত্ত

শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:০৬

স্কুলের পাঠে ইতি টেনে পরিবারের লোকেরা মেয়েটির বিয়ে ঠিক করেছিল। সেই বিয়ে রুখে দেওয়া নিয়েই নাটক তৈরি করেছিল বোরোর আঁকরো হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যেরা। ইউনিসেফের প্রতিনিধিরা সেই নাটক দেখে প্রশ্ন তুললেন, যার বিয়ে ঠিক হয়েছে, সেই মেয়েটির মুখেই কেন কোনও সংলাপ দেওয়া হয়নি? নাটকের কুশীলব ছাত্রীদের নিজেদের বিয়ে ঠিক হলে তারাও কি একই রকম ভাবে চুপচাপ থাকত?

বাল্যবিবাহ রোখা থেকে সমাজ সচেতনতার বিভিন্ন কাজ করে আসছে মানবাজার ২ ব্লকের বসন্তপুর আদিবাসী হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা। তারা কী ভাবে কাজ করছে, কোনও বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে কি না, এ সব জানতেই বৃহস্পতিবার ইউনিসেফের ওই দল এসেছিল। সেখানে আঁকরো হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যরা তাঁদের সামনে ‘নারী জাগরণ’ নামে একটি একাঙ্ক নাটক প্রদর্শন করে।

বাল্যবিবাহ রোধ, পথ সচেতনতা, স্কুলছুটদের ফেরানো, শৌচাগার তৈরি, শিশুশ্রম রোধ— এই সব বার্তা নাটকের মধ্যে ছিল। কিন্তু নাটকে যে নাবালিকার বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার মুখে কোনও সংলাপ কেন দেওয়া হয়নি তা জানতে চান ইউনিসেফের প্রতিনিধি কাঠমান্ডুর বাসিন্দা ন্যাশাল ফোল। দিল্লির বাসিন্দা ইউনিসেফের নয়না চৌধুরী বলেন, ‘‘নাটকের বিষয়বস্তু ভাল। মেয়েরাও ভাল অভিনয় করেছে। কিন্তু নাটকে যে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে নিয়ে এত কাণ্ড, তার মুখে কেন সংলাপ দেওয়া হবে না? সে কি পণ্য সামগ্রী?’’ বসন্তপুর আদিবাসী হাইস্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য অঞ্জলি মাহাতো, পল্লবী মণ্ডল, রোজিনা পরভিনদের দিকে তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন— ‘‘তোমাদের যদি এ ভাবে বিয়ে দেওয়ার চেষ্ট হতো, কী করতে তখন? চুপ করে থাকতে?’’ সমস্বরে রব ওঠে— ‘‘আমরা প্রতিবাদ করতাম। বলতাম, লেখাপড়ার পালা না চুকলে বিয়ে করব না।’’ নাটকে শব্দের ব্যবহারে যাতে মহিলাদের অসম্মান না করা হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন দলের সদস্য ক্রিশ্চিনা এডিয়ের, স্বপ্নদীপা। শ্রীলঙ্কার বাসিন্দা ইউনিসেফের মিস ধ্বাওয়ারকা শ্রীরামও নাটকে উপস্থিত বাড়ির মহিলাদের কথাবার্তার মধ্যেও আত্মমর্যাদা বোধের পরিচয় রাখতে বলেন।

ছাত্রীদের সঙ্গে বিদেশি প্রতিনিধিদের মধ্যে কথাবার্তায় দোভাষীর কাজ করছিলেন নয়না এবং স্বপ্নদীপা। নয়না মনে করেন, ‘‘আসলে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের জন্যই এ ধরনের সংলাপ নাটকে স্থান পেয়েছে।’’ কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্যদের প্রতি প্রতিনিধি দলের পরামর্শ— ‘‘এরপর থেকে তোমরা নিজেদের মতো করে নাটক লিখবে।’’

কোন কোন কন্যাশ্রী সদস্যের বাড়িতে শৌচাগার রয়েছে, হাত তুলে জানতে চায় প্রতিনিধি দল। অনেকেই হাত তোলে। উপস্থিত থাকা মানবাজার ২ জয়েন্ট বিডিও সন্দীপ প্রামাণিক, বিএমওএইচ কৌশিক ঢালি, সিডিপিও অশোক মণ্ডল, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বড়উরমা সমাজ কল্যাণ সমিতির কর্তাদের প্রতি তাদের পরামর্শ, ‘‘স্থানীয় স্তরে যে সব সমস্যা মেটানো সম্ভব, মেয়েদের সঙ্গে কথা বলে সেগুলি দ্রুত নিস্পত্তি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

বসন্তপুর আদিবাসী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অজয় মাহাতো জানান, তাঁদের স্কুলে কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য সংখ্যা এখন বেড়ে ৭৭ জন। তিনি বলেন, ‘‘ইউনিসেফের প্রতিনিধিদের পরামর্শ মেনে আগামী দিনে ক্লাবের সদস্যেরা আরও এগিয়ে যাবে। সেই সঙ্গে নিজেদের চারপাশের মানুষদের ভাবনাতেও পরিবর্তন নিয়ে আসবে।’’

Students Drama UNICEF
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy