Advertisement
E-Paper

মাছ চোর সন্দেহে গণপ্রহার, মৃত্যু গঙ্গাজলঘাটিতে

মাছ চোর সন্দেহে গণপ্রহারে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে গঙ্গাজলঘাটি থানার পাকতোড় গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত আকাল ধীবর (৪৫) মেজিয়া থানার নামোমেজিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৫২
বাঁকুড়ার মর্গে নিহত আকাল ধীবরের দেহ।—নিজস্ব চিত্র

বাঁকুড়ার মর্গে নিহত আকাল ধীবরের দেহ।—নিজস্ব চিত্র

মাছ চোর সন্দেহে গণপ্রহারে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। সোমবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে গঙ্গাজলঘাটি থানার পাকতোড় গ্রামে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত আকাল ধীবর (৪৫) মেজিয়া থানার নামোমেজিয়া গ্রামের বাসিন্দা।

বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘পুলিশই ৩০৪ ধারায় একটি অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ মৃতের পরিবারও আলাদা করে খুনের অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, আকালের বিরুদ্ধে প্রাথমিক ভাবে কোনও থানায় অপরাধ-মূলক কাজের অভিযোগ নেই।

পাকতোড় গ্রামে বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, রবিবার গভীর রাতে কয়েকজন লোক তাঁদের গ্রামের নতুনবাঁধে মাছ চুরি করতে আসে। তারা জালের ফাঁদ ফেলে পুকুরের আশপাশে লুকিয়ে ছিল। পরে ভোর-রাতে পাতা ফাঁদ তুলতে গেলে সেই সময়ে পুকুরে পাহারা দিতে আসা লোকজনের নজরে তারা পড়ে যায়। তারা হাঁকডাক শুরু করলে সঙ্গীরা পালালেও আকাল ধরা পড়ে যায়। এরপরেই শুরু হয় গণপিটুনি। মারধরের সময় আকালের কাছ থেকে তাঁর পরিচয় বের করেছিলেন বাসিন্দারা। বেধড়ক মারধরে সেখানেই লুটিয়ে পড়েন আকাল।

পরে পাকতোড়েরই কয়েকজন গ্রামবাসী গঙ্গাজলঘাটি থানায় খবর দেন। পুলিশ সেখানে গিয়ে আকালকে অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার করে অমরকানন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। চিকিৎসকেরা তাঁকে পরীক্ষা করে মৃত বলে জানান। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ৩০৪ ধারায় একটি অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

পরে খবর পেয়ে গঙ্গাজলঘাটি থানায় আসেন নিহতের পরিজনেরা। সোমবার দুপুর নাগাদ পুলিশ কর্মী-সহ নামোমেজিয়া গ্রামের কয়েকজন ও নিহতের ছেলে দেহটি ময়নাতদন্ত করাতে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজের মর্গে আসেন। সেখানেই আকালের পড়শি বিশ্বনাথ ধীবর জানান, দামোদরের তীরে তাঁদের গ্রাম। আকাল প্রতিদিন দামোদর নদে মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করেই সংসার চালাতেন বলেই সবাই জানতেন। মাঝে মধ্যে মজুরির বিনিময়ে অন্যের পুকুরে মাছও ধরতেন। তাঁর রোজগারের উপরেই নির্ভরশীল স্ত্রী জ্যোৎস্না, ছেলে বলরাম ও মেয়ে মল্লিকা। তাঁর কথায়, ‘‘আকাল মাছচুরি করতে গিয়েছিল বলে আমাদের বিশ্বাস হচ্ছে না।’’

বলরাম এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে। সে বলে, ‘‘রবিবার সন্ধ্যায় বাবা রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে বেরিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছে কিছু জানায়নি। শুধু বলেছিল, সোমবার সকালে ফিরবে। কিন্তু সোমবার সকালে মেজিয়া থানা মারফৎ খবর পাই, বাবা আর নেই। আমরা সবাই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। বাড়ির সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ি।’’ তার আশঙ্কা, আকাল ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগেরে। তাই এরপরে কী ভাবে সংসার চলবে, কী ভাবেই বা দুই ভাই-বোনের পড়াশোনা চলবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছে ওই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। তার কথায়, ‘‘যারা এ ভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে আমার বাবাকে মেরে ফেলল, তাদের শাস্তির দাবিতে অবশ্যই পুলিশ-প্রশাসনের দ্বারে যাব।’’

তৃণমূলের গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জীতেন গড়াই বলেন, ‘‘খুব মর্মান্তিক ঘটনা। এ ভাবে আইন হাতে তুলে নিয়ে কাউকে মেরে ফেলা ঠিক নয়। আমরা পুলিশকে অনুরোধ করব ঘটনার সঠিক তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি দেওয়া হোক।’’

Suspected thief Death Lynch
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy