Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
জৈষ্ঠ্যের আঁচে পুড়ছে লালমাটি

পারদ ছুঁলো ৪৩, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আর্দ্রতাও

প্রথম দিন ৩৮.২। দ্বিতীয় দিন ৪৪.২। শনিবারই তা দাঁড়াল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে! গত তিন দিনে বীরভূমে তাপমাত্রার হাল এমনই। যে বেগে তাপমাত্রার পারদ চড়ছে, তার সঙ্গে একমাত্র পাল্লা দিতে পারে ক্রিস গেইল বা এবি ডেভিলিয়ার্সের টি-২০ ব্যাটিংই। তফাত একটাই ক্রিকেটে এবি বা গেইলের তাণ্ডবে দর্শকেরা আনন্দ পান। অসহায় বোধ করেন বোলারেরা। কিন্তু, এই তীব্র দাবদাহের দাপটে প্রাণান্তকর অবস্থা আপামোর জেলাবাসীর।

স্বস্তির জল। শনিবার দুবরাজপুরে গরম দুপুরে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

স্বস্তির জল। শনিবার দুবরাজপুরে গরম দুপুরে ছবিটি তুলেছেন দয়াল সেনগুপ্ত।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০২:৩১
Share: Save:

প্রথম দিন ৩৮.২। দ্বিতীয় দিন ৪৪.২। শনিবারই তা দাঁড়াল ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে!
গত তিন দিনে বীরভূমে তাপমাত্রার হাল এমনই। যে বেগে তাপমাত্রার পারদ চড়ছে, তার সঙ্গে একমাত্র পাল্লা দিতে পারে ক্রিস গেইল বা এবি ডেভিলিয়ার্সের টি-২০ ব্যাটিংই। তফাত একটাই ক্রিকেটে এবি বা গেইলের তাণ্ডবে দর্শকেরা আনন্দ পান। অসহায় বোধ করেন বোলারেরা। কিন্তু, এই তীব্র দাবদাহের দাপটে প্রাণান্তকর অবস্থা আপামোর জেলাবাসীর। শীঘ্রই তাপমাত্রা কমে যে স্বস্তি আসবে, আবহাওয়া দফতর অনন্ত এখনও পর্যন্ত তেমন ইঙ্গিত দিচ্ছে না। শ্রীনিকেতন আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার শুক্রবারের থেকে তাপমাত্রা কম ছিল ঠিকই। কিন্তু, এ দিনই আপেক্ষিক আর্দ্রতা আগের দিনের তুলনায় অনেক বেশি হওয়ায় কষ্ট বেড়েছে। এ দিনই আবার লাভপুরে মাঠের কাজে গিয়ে গরমে সানস্ট্রোক হয়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সকাল ৮টা বাজতে না বাজতেই সূর্যের চোখ রাঙানি শুরু। সকাল ১০টার পর থেকেই তা অসহ্য হতে শুরু করছে। বিকাল ৪টের আগে পর্যন্ত পরিস্থিতি একই থাকছে। বাস্তব ছবিটা হল ১১টার পর থেকেই বাজার হাট, পথঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। নিতান্ত প্রয়োজন না হলে কেউ-ই বাড়ির বাইরে বের হতে চাইছেন না। যাঁরা এর পরেও প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন তাঁদের অনেকেই। রোদ চশমা এবং প্রয়োজনীয় পোশাকে শরীর ঢেকে তবেই বাইরে যাচ্ছেন। সারা দিন ধরে থাকা প্রচণ্ড তাপে একে বারে সেদ্ধ হওয়ার উপক্রম। মুখ থেকে শুধু ‘উফ! বাপরে কী সাংঘাতিক!’—এই শব্দগুলো বেরিয়ে আসছে আহরহ। রাতেও ঘুম হচ্ছে না। পাখার হাওয়া যেন গায়েই লাগছে না। ঘামে ভিজে বিছানার চাদর গায়ে চিটিয়ে যাচ্ছে। আর বাড়ছে প্রখর তাপে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনাও।

সিউড়ি, রামপুরহাট ও বোলপুর মহকুমা হাসপাতাল সুপারেরা অন্তত তেমটাই জানাচ্ছেন। অতিরিক্ত তাপের কারণে ডিহাইড্রেশন, পেশীতে টান কিংবা ব্যাথা, জ্বর, বমি বা ডায়েরিয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে অতিরিক্ত সংখ্যায় রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। রামপুরহাটের দুই চিকিৎসক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় ও আনন্দ মণ্ডলের দাবি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া রোগীও ভর্তি হয়েছেন। তবে সিউড়ি, রামপুরহাটও বোলপুরের হাসপাতালের সুপার শোভন দে, আলি মোর্তজা, অমিত মজুমদারেরা বলছেন, ‘‘এখনও হিটস্ট্রোকে কেউ মারা যাননি।’’ এই পরিস্থিতিতে চিকিৎসকদের পরামর্শ— রোদ এড়িয়ে চলুন। একটানা রোদে কাজ নয়। রোদে গেলেও শরীর ঢাকা সুতির পোশাক, ছাতা, রোদ চশমা ব্যবহার করুন। সহজপাচ্য হালকা খাবার খান। অবশ্যই বাইরে যেখানে সেখানে ঠান্ডা পানীয়, শরবত, কাটা ফল খাবেন না। বেশি করে জল খান এবং সেই জল বাড়ি থেকে সঙ্গে নিলেই ভাল।

গরমে নাভিশ্বাস উঠলেও এ বার দক্ষিণবঙ্গে গরমটা দিন কয়েক আগেও সে ভাবে পড়েনি। এর আগে যখনই তাপমাত্রা বেড়েছে দফায় দফায় কালবৈশাখী কিংবা বৃষ্টিতে তার প্রলেপ পড়েছে। তাপমাত্রা কখনও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ায়নি। আপেক্ষিক আর্দ্রতাও সহনশীল অবস্থায় ছিল। সেটাই হঠাৎ বদলে যেতে শুরু করে বুধবারের পর থেকে। তার প্রভাব পড়েছে জনজীবনেও। জেলার কিছু মাঠে বোরো ধান তোলা ছাড়া মাঠে এখন ব্যস্ততা তুলনায় কম। অধিকাংশ স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি পড়ে গিয়েছে। মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশের জন্য যে সব স্কুল ছুটি দেয়নি সেগুলির অধিকাংশই এ দিন ছুটি দিয়েছে। শনিবার হওয়ায় সরকারি বিভিন্ন অফিসে এমনিতেই ছুটি। তাই যতটা সম্ভব গনগনে রোদ থেকে নিজেদের বাঁচানো যায়— জেলার সর্বত্রই এক ছবি। জেলা সদর সিউড়ি থেকে বোলপুর, রামপুরহাট বা দুবরাজপুর, সাঁইথিয়ার মতো শহরগুলিতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

হুড়ার পালগাঁ গ্রামে।

এ দিকে, রবিবার জামাইষষ্ঠী। সেই জামাইষষ্ঠীর আগের দিন ফল, সব্জি, মিষ্টির দোকানে কেনাকাটার যে হিড়িক থাকে, প্রখর তাপ সেখানেও থাবা বসিয়েছে। অনেকেই খুব সকাল সকাল বাজার সেরেছেন কিংবা সন্ধ্যায় সারবেন বলে ঠিক করেছেন। জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে অন্য মেয়েদের মতো বোলপুরের বাপের বাড়িতে এসেছেন রাণু মণ্ডল। তিনি বললেন, ‘‘আমার স্বামী রবিবার সকালে আসবেন। দিদি-জামাইবাবুদেরও আসার কথা। মা-বাবার বয়স হয়েছে। এই গরমে বাজার কী করে করবেন! খারাপ লাগছে।’’

প্রতি বারই মুর্শিদাবাদ থেকে আম নিয়ে এসে রামপুরহাটে বিক্রি করেন বেশ কিছু বিক্রেতা। সকালে রামপুরহাটে পৌঁছে অপেক্ষা। কখন শেষ হয় পসরা। তার পরে ফিরে যাওয়া। এমনই দুই আম বিক্রেতা রুপু শেখ, রবিউল শেখরা বলছেন, ‘‘জামাইষষ্ঠীর আগে এই সময়ে সকালের মধ্যেই আম বিক্রি হয়ে যায়। কিন্তু, এ বার হয়নি। যা গরম পড়েছে, খুব কষ্ট পাচ্ছি!’’ দুবরাজপুর বাজারে সব্জি বিক্রি করতে আসা অনন্ত মণ্ডল, রামপুরহাটের সব্জি বিক্রেতা মকিব আলি, সিউড়ি বাজারে মাছ বিক্রেতা শুভাশিস ধীবর, সকলেই বলছেন, ‘‘শুধু মনে হচ্ছে, কত তাড়াতাড়ি বেচাকেনা শেষ করে বাড়ি ফিরব!’’

তবে, সকলেই যে বাড়িতে বা ছায়ায় থাকার সুযোগ পাচ্ছেন এমনটা নয়। বোলপুরে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব সামলানো পুলিশ কর্মী এবং সিভিক ভলান্টিয়ার্সদের যেমন করুণ অবস্থা। দুপুরে বোলপুর স্টেশনে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ঢুকলেই বোলপুর চৌরাস্তা মোড়ে তীব্র যানজট লেগে যায়। এই চড়া দুপুরে দাঁড়িয়ে সেটা সামলাতেই হিমশিম অবস্থা তাঁদের। যাঁরা পেট ও পেশার টানে বাইরে যেতে বাধ্য, তাঁদের আর উপায় কী!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birbhum Temperature humidity suri Rampurhat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE