পুর-এলাকায় দু’জন আক্রান্তের সন্ধান মিলতেই রবিবার বিকেল থেকেই ডেঙ্গি মোকাবিলায় পথে নামল পুরুলিয়া পুরসভা। সোমবার থেকে মাইক নিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডে সচেতনতা প্রচার এবং মশা মারার ওষুধ স্প্রে করা শুরু হয়েছে বলে পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে।
নিম্নচাপের বৃষ্টি কাটিয়ে সবে রোদের দেখা মিলেছে। স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা বলছেন, এই পরিবেশই ডেঙ্গির মশার বংশ বিস্তারের জন্য আদর্শ। জেলার উপ-মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গুরুদাস পাত্র বলেন, ‘‘ডেঙ্গির বাহক এডিস মশা ডিম পাড়ে পরিস্কার জমা জলে। তাই আমরা সব সময় বলছি, কোথাও যেন জমা জল না থাকে।’’
পুরসভা জানিয়েছে, দু’টি ফগিং মেশিন কাজ করছে। কিন্তু শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের জন্য মাত্র দু’টি যন্ত্র যথেষ্ট নয় বলে মেনে নিচ্ছেন শাসকদলের কাউন্সিলররাই। পুরপ্রধান সামিমদাদ খান বলেন, ‘‘আমি ছুটিতে ছিলাম। সোমবারই কাজে যোগ দিয়েছি। শুনলাম জেলাশাসক আমাদের জন্য আরও চারটি ফগিং মেশিন বরাদ্দ করেছেন। সেগুলি যাতে দ্রুত আসে তার জন্য তদ্বির করব।’’
তাঁর দাবি, আগে থেকে সতর্ক থাকায় এত দিন ডেঙ্গি ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হয়েছিল। পথে নামা হয়েছে। সাধারণ মানুষ সচেতন হলে সব ঠিক থাকবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার বিকেলে ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে পুরসভা একটি বৈঠকও করে। সেখানে শহররের বেশির ভাগ কাউন্সিলরই উপস্থিত ছিলেন। পুরপ্রধান মূলত পরিচ্ছন্নতার উপরেই জোর দেন বৈঠকে। সাফাই বিভাগকে এই পরিস্থিতিতে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কাজ করার নির্দেশ
দেন তিনি।
বৈঠক শেষে পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের নোডাল অফিসার সুমিত বক্সী জানান, যেহেতু জমা জলে মশার লার্ভা খুব তাড়াতাড়ি জন্মায় তাই লার্ভা ধ্বংস করতে যন্ত্র দিয়ে ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। এ ছাড়া ফগিং মেশিনের মাধ্যমে আরও এক ধরণের ওষুধ ছড়ানো হচ্ছে। প্রতিদিন চারটি করে ওয়ার্ডে ওই কাজ হবে। পাশাপাশি, মাইক নিয়ে এবং প্রচারপত্র ছাপিয়ে শহরবাসীকে সচেতন করা হবে।
জমা জল পরিস্কার করার জন্য বিশেষ অভিযান শুরু করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। সাফাই বিভাগ যা কাজ করে তার পাশাপাশি এই কাজ হবে। আগামী ২৮ অক্টোবর থেকে পুরসভার ৮১টি দল শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের প্রতিটি বাড়িতে ঘুরে সমীক্ষার কাজ শুরু করবে। কারও বাড়িতে জ্বর রয়েছে কি না, কোথাও জমা জল রয়েছে কি না ইত্যাদি
দেখা হবে।
শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে। রবিাবার ওই এলাকা পরিদর্শন করেছেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অনিলকুমার দত্ত। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘মূলত সচেতনতা প্রচারে সমস্ত কাউন্সিলরকেই বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলরেরাই সাফাইয়ের বিষয়টি দেখভাল করবেন।’’
ডেঙ্গির লক্ষণ
• হঠাৎ করে তীব্র জ্বর, মাথাব্যথা
• মাচোখের পিছন, পেশি, গাঁটে ব্যথা, খাবারে অরুচি, বমি ভাব, পেটে যন্ত্রণা, বুকে পিঠে হাতে ফুসকুড়ি, নাক মুখ বা মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ, গায়ে কালচে বা লাল চাকাচাকা দাগ।
• এই সমস্ত লক্ষণ দেখলে তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
• জ্বর বা ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন।
• নিজে থেকে অ্যাসপিরিন বা আইবুপ্রোফেন জাতীয় ব্যথা কমানোর ওষুধ খাবেন না।
• ডেঙ্গি নির্ণয়ের জন্য অ্যালাইজা পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করতে হয়।
• খেতে হবে প্রচুর জল আর তরল জাতীয় খাবার।
• অযথা আতঙ্কিত হবেন না।
সাবধানতা
• ডেঙ্গির বাহক মশা পরিষ্কার জলে জন্মায়। গবাদি পশু ও পোষা পাখির জলের পাত্র, ফেলে রাখা পুরনো টায়ার, ফুলের টব, ডিম ও ডাবের খোলা— কোথাও জল জমতে দেবেন না।
• চারপাশে জঞ্জাল বা ঝোপ রাখবেন না। নিয়মিত নর্দমা পরিষ্কার করুন।
• গা ঢাকা পোশাক পরুন।
• যখনই ঘুমোবেন, মশারি টাঙান।
• জ্বরে আক্রান্তকে সব সময় মশারির ভিতরে রাখুন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy