Advertisement
E-Paper

হাতি ফেরাতে হিমসিম বনকর্মীরা

তিন রেসিডেন্ট হাতিকে লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলে ফেরাতে, সোমবার সন্ধে থেকে মঙ্গলবার ভোর রাত পর্যন্ত কার্যত হিমশিম খেল জেলা বন দফতর। তবে হাতিদের আসা যাওয়ার পথে ফসল নষ্ট, দুটি বাড়ি ভাঙা, ধান খাওয়া ছাড়া বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৫৪
পাহাড়পুরের জঙ্গলে দাঁতাল। নিজস্ব চিত্র।

পাহাড়পুরের জঙ্গলে দাঁতাল। নিজস্ব চিত্র।

তিন রেসিডেন্ট হাতিকে লোকালয় থেকে দূরে জঙ্গলে ফেরাতে, সোমবার সন্ধে থেকে মঙ্গলবার ভোর রাত পর্যন্ত কার্যত হিমশিম খেল জেলা বন দফতর। তবে হাতিদের আসা যাওয়ার পথে ফসল নষ্ট, দুটি বাড়ি ভাঙা, ধান খাওয়া ছাড়া বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির কোনও খবর নেই। বনদফতর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার ভোরের আলো ফোটার আগে বোলপুর থেকে আমোদপুর এলাকায় হাতিটি চলে যায়। বনদফতর সূত্রের খবর, হাতির দলটি সম্ভবত বাঁকুড়ার জঙ্গল থেকে এসেছে। পাড়ুই হয়ে এ দিন ভোরে প্রথমে আমোদপুরের জুঁইথা গ্রামের জঙ্গলে ঢোকে। বেলায় লোকজনের তাড়া খেয়ে সেখান থেকে কিছুটা দূরে পাহাড়পুরের জঙ্গলে আশ্রয় নেয়। তখনই দু-তিনটি জমির আলু ও গম নষ্ট করে।

বন দফতর, পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অজয় নদ পার হয়ে বর্ধমানের জঙ্গল থেকে রবিবার রাতে ইলামবাজারের চোপাহাড়ি জঙ্গলে ঢুকে এক দাঁতাল-সহ তিনটি হাতি। ওই থানার সাহেব ডাঙা–এতাপুর, উষারডিহি হয়ে বেনেডাঙাল উঠেছে ওই তিন হাতি। চৌপাহাড়ি আসার পথে এতাপুরের এক বাসিন্দারা রান্নার ঘর ভাঙে। মুর্গাবনির এক বাসিন্দার ধানের গোলা ভেঙে কিছু ধান খায় তারা। ইলামবাজার বিট থেকে খবর পেয়ে, হুলা পার্টি, স্থানীয় পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অজয় নদ পার করে বর্ধমান জঙ্গলে ফেরানোর চেষ্টা করেন বোলপুরের রেঞ্জার নির্মল চন্দ্র বৈদ্য।

জানা যাচ্ছে, সোমবার সন্ধেয় অজয় নদে আর নামতে চায়নি হাতিগুলি। মুখ ঘুরিয়ে তারা সোজা হাঁটা দেয় বোলপুরের দিকে। শান্তিনিকেতন থানার বাহাদুরপুর গেটে এসে থামে তারা। এবং সোজা সেখান থেকে মহিদাপুরে ঢুকে পড়ে। কেন্দ্রডাঙ্গালের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম, শেখ রবিউল, এনামুল হক, লালু মল্লিক, কাংলা দাস, বাপন দাস ও বল্লভপুরের বাসিন্দা বিনোদ বিহারীরা জানান, রাত এগারোটা নাগাদ ডাঙাপাড়া মোড়ে হাজির তিনটে হাতি। সাড়ে এগারোটা নাগাদ কেন্দ্রডাঙালের সাদি চৌধুরী মাইক থেকে গ্রামে হাতি আসার কথা ঘোষণা করেন। সেই মতো বাসিন্দারা গ্রামের ভিতরে হাতি যাতে না ঢোকে তার জন্য তৈরি হন। কিন্তু কিছু করে ওঠার আগেই হাতি ঢুকে পড়ে। পিছনে বনদফতের গাড়ি, পুলিশ ভ্যান।

বাসিন্দারা টায়ার জ্বালিয়ে, পটকা ফুটিয়ে ভাগানোর চেষ্টা করেন। ভোরের দিকে হাতিটি তিনটি আমোদপুরের জুঁইথা গ্রামের জঙ্গলে ঢোকে। বোলপুরের রেঞ্জার নির্মল চন্দ্র বৈদ্য বলেন, ‘‘ভোরের আলো ফোটার আগে আমোদপুর-পাহাড়পুর লাগোয়া পুরন্দরপুর বিটে জুঁইথা জঙ্গলে রয়েছে। জেলার ডিএফও কল্যাণ রাই, এডিএফও দিগন নাথ-সহ অনেকেই ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছেন।’’

এ দিকে সাত সকালে ঘুম ভাঙতেই গ্রামে হাতি আসার খবরে চমকে ওঠেন সাঁইথিয়ার আমোদপুর এলাকার জুঁইথা, পাহাড়পুর গ্রামের মানুষ।

স্থানীয়দের দাবি, মঙ্গলবার সকালে গ্রামের কেউ কেউ নদীর ধারে গিয়ে নদীর পশ্চিম পাড়ে তিনটি দাঁতাল দেখে ভয়ে পালিয়ে আসেন। তাঁদের কাছ থেকে খবর পেয়ে গ্রামের অনেকেই হাতি দেখতে ভিড় করেন। অনেকে ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ছুটে যান। খবর পেয়ে পুলিশ ও বনদফতরের কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সাঁইথিয়ার রেঞ্জার পিনাকী চক্রবর্তী, এডিও বিজন কুমার নাথ, ডিএফও কল্যান রায় চলে আসেন। তার আগেই অবশ্য আলু ও গমের দু’তিনটি জমির ফসল নষ্ট করে হাতির দল।

জুঁইথা গ্রামের বাসিন্দা স্বাধীন মণ্ডল বলেন, ‘‘হাতি হাতি রব শুনে শীত ঘুম ছেড়ে লাফিয়ে উঠি। ওই কাকভোরে গ্রাম ও আশপাশ গ্রামের অনেকেই হাতি দেখতে ভিড় করেছেন।’’ একই অভিজ্ঞতার কথা জানান, উজ্জ্বল মাল, বিকাশ মণ্ডল, গৃহবধূ টুসি মণ্ডলরা। বনদফতরের কর্মীদের দাবি, ‘‘খাবারের সন্ধানে সম্ভবত দলছুট হয়ে তিনটি দাঁতাল এই এলাকায় চলে আসে।’’ ডিএফও বলেন, ‘‘হাতিগুলি জুঁইথা জঙ্গল হয়ে পাহাড়পুরের জঙ্গলে ঢোকে। হুলা পার্টি তৈরি থাকা সত্বেও দিনের বেলায় প্রচুর লোকজন থাকায় হাতি তাড়ানো সম্ভব নয়। সন্ধের পর ইলামবাজার এলাকা পার করে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’’ এ দিন রাতের দিকে অবশ্য হাতি ফের মুখ ফেরায় সাঁইথিয়া শহরের দিকে।

Elephants Forest Department
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy