Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Mahalaya 2023

ঘর ভরা রেডিয়ো, রোজ শোনেন হিন্দোল

যা কিছু পুরনো সে-সব জমানোই নেশা হিন্দোলের। শুধু রেডিয়ো নয়, পুরনো গ্রামোফোন, রেকর্ড প্লেয়ার, টেপ রেকর্ডার, প্রজেক্টর, পুরনো ক্যামেরা, সাদা কালো টিভি, পুরনো কাঠের আসবাব থেকে সামান্য লণ্ঠন —কী নেই তালিকায়!

সংগ্রহের রেডিয়োর সঙ্গে হিন্দোল রায়। সিউড়িতে বৃহস্পতিবার।

সংগ্রহের রেডিয়োর সঙ্গে হিন্দোল রায়। সিউড়িতে বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।

দয়াল সেনগুপ্ত 
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৩১
Share: Save:

সারা বছর অনাদরে ঘরের এক কোণে পড়ে থাকলেও মহালয়ার দিন কদর বাড়ে রেডিয়োর। যতই প্রযুক্তিগত উন্নতি হোক, মহালয়ায় ভোরে রেডিয়োয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কণ্ঠে ‘আশ্বিনের শারদ প্রাতে…’ না শুনলে কেমন যেন পানসে লাগে বাঙালির।

কাল, শনিবার মহালয়া। ঝুলো ঝেড়ে প্রিয় সেই রেডিয়োটি ঠিক করে নেওয়া বা ব্যাটারি বদলে ফেলায় ব্যস্ত বহু পরিবার। সেখানেই ব্যতিক্রম সিউড়ির কলেজপাড়ার বাসিন্দা হিন্দোল রায়। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের ঠিকাদার, মধ্য পঞ্চাশের হিন্দোল রায়ের পরিপাটি ঘরে ঢুকলেই অবাক হতে হয়। সযত্নে সাজানো একের পর এক রেডিয়ো। কী নেই সংগ্রহে! একাধিক ভাল্ভ রেডিয়ো, বিশাল মাপের কাঠের বাক্সে ভরা রেডিয়ো থেকে হ্যান্ড ট্রানজিস্টার। প্রতিটি সচল। মহালয়ার ভোরে সেগুলির একটিতে বাজবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণের চণ্ডীপাঠ।

যা কিছু পুরনো সে-সব জমানোই নেশা হিন্দোলের। শুধু রেডিয়ো নয়, পুরনো গ্রামোফোন, রেকর্ড প্লেয়ার, টেপ রেকর্ডার, প্রজেক্টর, পুরনো ক্যামেরা, সাদা কালো টিভি, পুরনো কাঠের আসবাব থেকে সামান্য লণ্ঠন —কী নেই তালিকায়! হিন্দোল বলছেন, ‘‘পুরনো হলেই কি সব ফেলে দিতে হবে। যে জিনিসটি আমাকে এক সময় আনন্দ দিয়েছে, তাকে অনাদরে পড়ে থাকতে দেখলে ভীষণ কষ্ট হয়। তা হলে তো বৃদ্ধ বাবা-মাকেও বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসতে হয়। তাই পুরনো এবং অনাদরে পড়ে রয়েছে বা ফেলে দেওয়া হয়েছে দেখতে পেলেই আমি সংগ্রহ করি। সেটিকে ব্যবহারযোগ্য করে তুলি। এই কাজ মনের খোরাক জোগায়।’’

হিন্দোলের শখকে সমর্থন করেন স্ত্রী শ্রেয়সী রায়, মেয়ে পৌলমী। আর কাকুকে এ ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য আছেন ভাইপো সৌরভ। শ্রেয়সী জানান, কাজের সূত্রে হিন্দোলকে অনেক জায়গায় ঘুরতে হয়। যেখানেই এমন কিছু দেখলেই বাড়ি নিয়ে আসেন। শ্রেয়সীর কথায়, ‘‘ওঁর ভাললাগার প্রতি পূর্ণ সমর্থন আছে। একটাই সমস্যা। এত পরিমাণ জিনিসপত্রের ভিড়ে বাড়ি মাঝে মধ্যে অগোছালো হয়ে যায়।’’ সমস্যা এড়াতে একটি নতুন ঘর তৈরি করাচ্ছেন হিন্দোল।

এত সংখ্যক রেডিয়োর মধ্যে কোনটিতে মহালয়া শুনবেন? বৃহস্পতিবার বাড়িতে গিয়ে কৌতূহলবশত এ প্রশ্ন করতেই হিন্দোল বললেন, ‘‘যে কোনওটায় শোনা যায়। আমি রোজ শুনি। গান বাজাই গ্রামোফোনে।’’ পরিবারের সদস্যরা জানালেন, মহালয়ার ভোরে তাঁরা টিভিতে কখনও চোখ রাখেন না। রোডিয়োতেই শোনেন, এক সঙ্গে। গমগম করে পাড়া। তবে শেষ করে শোনা হয় না হিন্দোলের। মহালয়ার ভোরে পিতৃ তর্পণে বেরিয়ে যান তিনি। এমন এক বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে আসতেই কানে এল, গ্রামোফোনে বাজছে মান্না দে-র বিখ্যাত গান, ‘... নিশি ফুরালে কেহ চায় না আমায়, জানি গো আর’। মনে হল, পুরনোর প্রতি হিন্দোলের যে আবেগ, তাতে বেলোয়াড়ি ঝাড়ের সম্মান ক্ষুণ্ণ হওয়ার কারণ নেই। যেমন বাঙালির মননে কখনও পুরনো হবে না মহালয়ার ভোরে আদি এবং অকৃত্রিম মহাষিসুরমর্দিনী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mahalaya 2023 Durga Puja 2023 Radio
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE