লড়াকু: রাইহান। নিজস্ব চিত্র
জন্ম থেকেই দুর্বল তিনি। পা দু’টি ছোট। ১৮ বছরে উচ্চতা ৩ ফুট। জীবনের পথে অবশ্য সেই বাধার কাছে হার মানেননি আব্দুল রাইহান। অদম্য জেদ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন। মনের জোরেই তিনি এ বার বসেছেন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায়। নলহাটি থানার অনন্তনগর গ্রামে বাড়ি আব্দুলের। তিনি বলছেন, ‘‘শিক্ষার পথে আরও এগিয়ে যেতে চাই।’’
পরিজনদের কোলেই বড় হয়েছেন রাইহান। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিকের গণ্ডি পেরিয়ে শীতলগ্রাম হাইস্কুল থেকে ২০১৭ সালে দ্বিতীয় বিভাগে মাধ্যমিক পাশ করেন। এ বার তিনি পরীক্ষা দিচ্ছেন উজিরপুর হাইস্কুল থেকে।
তাঁর আত্মীয়ের জানান, হাতে জোর পান না রাইহান। দ্রুত লিখতে পারেন না। মাধ্যমিকের মতো উচ্চ মাধ্যমিকেও তা-ই তাঁর ভরসা ‘রাইটার’। পরীক্ষা দিতে তিনি গ্রাম থেকে ৬-৭ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে যান প্রসাদপুর রামরঞ্জন উচ্চ বিদ্যালয়ে। রাইহানের অদম্য জেদের সঙ্গী কখনও স্কুলছুট বন্ধু সুলতান, কখনও সহপাঠী হ্যাপি, কাইফ। তারাই পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেয় রাইহানকে।
রাইহানের বাবা আবদুল্লা শেখ নিজের সামান্য জমিতে চাষ ছাড়া অন্যের মাঠে ভাগচাষ করেন। সংসারের বোঝা টানতে মাঝেমধ্যে ধান-চালের কারবারও করেন। অভাবের সঙ্গে লড়েই বড় মেয়ে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে আবদুল আলাল মালদহে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। লড়ছেন রাইহানও। তিনি বলেন, ‘‘পড়াশোনা ছাড়া আমার কী আছে। এত দিন অন্যদের সাহায্যে বড় হয়েছি। এ বার পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হতে চাই।’’
মা রৌশনেরা বিবি জানান, ছোট থেকেই চলতে ফিরতে অসুবিধা হতো রাইহানের। পড়াশোনার আগ্রহ দেখে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোলে করে নিয়ে যেতেন। পরে পরিজন, সহপাঠী, বন্ধুরা তাঁকে শীতলগ্রাম হাইস্কুলে নিয়ে গিয়েছে।
রাইহানের দাদা আব্দুল আলাল বলেন, ‘‘ভাইকে কোলে, কখনও পিঠে স্কুলে নিয়ে গিয়েছি। ভাই পড়তে চায়। আমরাও ওর পাশে রয়েছি। ওর সব ইচ্ছা যেন পূরণ হয়।’’ উজিরপুর হাইস্কুলের টিচার ইন-চার্জ জাকির হোসেন বলেন, ‘‘মনের জোরেই প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে এগিয়ে চলেছে রাইহান। স্কুলের তরফ থেকে যতটুকু সাহায্য করার করা হয়েছে।’’
অশক্ত শরীরেও রাইহানের অদম্য জেদ এবং পড়াশোরা উপরে আগ্রহের কথা জেনে সমাজকল্যাণ দফতরের জেলা আধিকারিক পাপিয়া হালদার চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এমন মানসিকতা অন্যদের মনের জোর বাড়াবে। সমাজে এগিয়ে চলতে সাহায্য করবে। ওই যুবকের পাশে কী ভাবে আমরা দাঁড়াতে পারি তা দেখব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy