উদ্ধার: বাঁকুড়া থানায় বাজেয়াপ্ত করা সিলিন্ডার। নিজস্ব চিত্র
শহর জুড়ে প্রকাশ্যেই রমরম করে চলছিল বেআইনি ভাবে রান্নার গ্যাস বিক্রি। দীর্ঘ দিনের সেই ছবিটা এক ঝটকায় বদলে গেল জেলা এনফোর্সমেন্ট শাখার (ডিইবি) এক দিনের অভিযানে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাঁকুড়া শহরের শাঁখারিপাড়া এলাকায় তিনটি অবৈধ গ্যাস বিক্রির দোকানে অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেফতার করেছে ডিইবি। উদ্ধার হয়েছে ৫৭টি সরকারি ভর্তুকি মূল্যের গ্যাস ভর্তি ‘ডোমেস্টিক’ সংযোগের সিলিন্ডার।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি এলপিজি কোম্পানির ১৮টি ফাঁকা ডোমেস্টিক সিলিন্ডার এবং একটি বানিজ্যক সিলিন্ডার উদ্ধার হয়েছে ওই দোকানগুলি থেকে। সেই সঙ্গে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে অনেক ছোট গ্যাস সিলিন্ডার, গ্যাস রিফিলিং যন্ত্র। উদ্ধার হওয়া গ্যাস সিলিন্ডারগুলি রাখা হয়েছে বাঁকুড়া সদর থানা চত্বরে। পুলিশের দাবি, খুবই সতর্কতা নিয়ে সেগুলি রাখা হয়েছে। আদালতের নির্দেশ পেলে সেগুলির পরবর্তী বন্দোবস্ত করা হবে।
অবৈধ ভাবে জ্বালানি গ্যাস বিক্রি করার অভিযোগে ধৃত শাঁখারিপাড়ার বাসিন্দা জয়দেব দত্ত, বুদ্ধদেব দত্ত ও পিন্টু রক্ষিতকে শুক্রবার বাঁকুড়া আদালতে তোলা হলে তাঁদের পাঁচ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ হয়। বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, “সম্পূর্ণ অবৈধ ভাবে ওই ব্যবসা চলছিল। খবর পেয়ে ডিইবি গিয়ে হাতে নাতে পাকড়াও করেছে।”
ঘটনা হল, বাঁকুড়া শহরে অবৈধ গ্যাসের কারবার দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। শহরের অলিগলি, এমনকী প্রকাশ্য রাজপথের পাশেও অনেকেই গ্যাস বিক্রির দোকান খুলে রমরমিয়ে ব্যবসা করেন। শহরে নতুন এসে অনেকেই ওই দোকানগুলি থেকে দু’কিলো বা পাঁচ কিলোর ছোট সিলিন্ডার কিনে তাতে গ্যাস ভরে চালান। প্রতি কিলোগ্রাম গ্যাসের দাম পড়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা। ব্যবসায়ীদের অনেকেই সরকারি ডোমেস্টিক সিলিন্ডার থেকে ওই ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে বিক্রি করেন। শহরের বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, পরিবারের অনেকের নামে ভর্তুকির গ্যাসের সংযোগ নিয়ে তা থেকে এই কারবার চালান ওই ব্যবসায়ীরা। অনেক ক্ষেত্রে গ্যাসের ডিলারদের একাংশের সঙ্গে ওই ব্যবসায়ীদের যোগসাজশের অভিযোগও ওঠে।
ডিইবি-র ধরপাকড়ের পরে শুক্রবার শহরের এ রকমের গ্যাসের প্রায় সমস্ত দোকানই বন্ধ ছিল। বহু ব্যবসায়ী ভয়ে বাড়ি ছেড়ে চলেও গিয়েছেন। তবে, কেবল বাঁকুড়া শহরই নয়, জেলা জুড়েই এই অবৈধ ব্যবসার রমরমা দেখা যায় বলে অভিযোগ। গ্যাস ভরতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটে। জেলার বিষ্ণুপুর, খাতড়ার মতন মহকুমা শহরেও প্রকাশ্যে বেআইনি ভাবে গ্যাস রিফিল করে বিক্রি করতে দেখা যায়। সেই ব্যাপারে এ বারে কী পদক্ষেপ হয় সে দিকে তাকিয়ে রয়েছেন অনেকে।
পুলিশ সুপার বলেন, “এই অবৈধ কারবারের জেরে যে কোনও সময়ে বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। বেআইনি গ্যাস বিক্রির ব্যবসা রুখতে আমরা জেলা জুড়েই অভিযান চালাব।” এই কারবারে গ্যাসের ডিলারদের যোগসাজশ থাকলে সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy