একেবারে শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্তটা হয়। একনিষ্ঠ কর্মীরা বলছেন, ‘‘দল যদি জেতে ওই মাস্টারস্ট্রোকেই জিতবে!’’
সাঁইথিয়া কেন্দ্রে কার প্রার্থী থাকবে তা নিয়ে বাম-কংগ্রেসের দড়ি টানাটানি চলেছিল একেবারে শেষ লগ্ন পর্যন্ত। দু’টি দলের তরফেই প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছিল। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিনেও প্রচার করেছিলেন সিপিএম প্রার্থী ধীরেন বাগদি এবং কংগ্রেস প্রার্থী মদনচন্দ্র ঢুলি। শেষ প্রহরে কংগ্রেস নেতৃত্ব ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে আসার কথা জানায়। জোটের তরফে প্রার্থী থেকে যান বিদায়ী বিধায়ক ধীরেন বাগদি-ই। বাম-কংগ্রেসের নিচু তলার কর্মীদের মতে, ‘‘জেতার জন্যে ওই সিদ্ধান্তই একেবারে মাস্টারস্ট্রোক।’’
বাম-কংগ্রেসের বোঝাপড়ায় জট দেখে অনেক আগেভাগে মাঠে নেমে পড়েছিলেন তৃণমূল প্রার্থী নীলাবতী সাহা। লোকসভার অঙ্ককে মাথায় রেখে প্রচার শুরু করেছিলেন বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহাও। পিয়াদেবী আবার সাঁইথিয়া পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলরও বটে। জোটের জট কাটতেই জোর প্রচারে নেমেছেন ধীরেনবাবুও। চৈত্রের আগুনে রোদকে উপেক্ষা করে প্রচারে বেরিয়ে তিন জনেই বলছেন— ‘‘জিতছি আমিই।’’
অনেকের মত, সংগঠন এবং প্রচারে কিছুটা এগিয়ে নীলাবতীদেবী। বিরোধী দলগুলির প্রার্থী ঘোষণার আগেভাগেই নাম ঘোষণার সুবাদে শহরের ১৬টি ওয়ার্ড ও ১৮টি পঞ্চায়েতের প্রায় প্রতিটিতে প্রচার সেরে ফেলেছেন তিনি। ১৮টি পঞ্চায়েত ও একটি পুরসভা নিয়ে গঠিত সাঁইথিয়া বিধানসভা। সাঁইথিয়া পুরসভা-সহ এলাকার ছটি, মহম্মদবাজার ও সিউড়ির (২) ছ’টি করে মোট ১৮টি পঞ্চায়েত নিয়ে এই কেন্দ্র। তথ্য বলছে, ১৮টি পঞ্চায়েতের মধ্যে ১৫টি পঞ্চায়েত ও সাঁইথিয়া পুরসভা শাসক দলের দখলে। সিপিএমের হাতে কেবল মহম্মদবাজারের ভুতুড়া, আঙ্গারগড়িয়া। অন্য দিকে, সাঁইথিয়ার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে বিজেপি-র দখলে মাত্র একটি।
জেলা রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, ‘‘এরপরেও নীলাবতীদেবীর জেতাটা কিন্তু সহজ হবে না।’’ কেন? তাঁরা টেনে আনছেন, লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটের অঙ্ক। গত লোকসভা ভোটে এই কেন্দ্রে তৃণমূল ৮৪,০০৮, সিপিএম ৫১,৭৫৮, বিজেপি ৪০,৭৭২ এবং কংগ্রেস ৫,৭৯০টি ভোট পায়। তৃণমূল বৃহত্তম শক্তি হলেও ঠিক তার পরেই ছিল সিপিএম। ব্যবধান তিরিশ হাজারের কিছু বেশি। এ বারের বিধানসভা ভোটে বাম-কংগ্রেসের সমঝোতা হয়েছে। সেই হিসেবে কংগ্রেসের ভোট যদি পুরোটাই সিপিএমের ইভিএমে পৌঁছয় তাতেও ব্যবধান থাকছে কম করে পঁচিশ হাজার। এখানে এসে অনেকেরই অনুমান, বিজেপি-র চল্লিশ হাজারেও বেশি ভোটের অধিকাংশই এ বার জোটের অনুকূলে আসতে পারে।
এই কেন্দ্রে গতবার জিতেছিল বামেরাই। তৃণমূলের ভরা বাজারেই এই কেন্দ্রে বামেরা ৪৬.৯১ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সে বার কংগ্রেস, তৃণমূলের মোট ভোটের শতাংশ ছিল ৪৪.২৯। এ বার কংগ্রেসের ভোট সেই শতাংশ থেকে বাদ পড়বে। ফলে তা চিন্তায় রাখছে শাসক শিবিরকে। এ দিকে, গত পাঁচ বছরে এলাকায় তৃণমূলের সংগঠন বেড়েছে। বেড়েছে প্রভাবও। সেই হিসেবে জোর লড়াই রয়েছে বীরভূমের এই কেন্দ্রেও।
তবে সিপিএম প্রার্থীর জন্যেও কাঁটা বিছানো পথ। কেমন? এই বিধানসভা কেন্দ্রের অনেকেরই মত, গত কয়েক দশক ধরে এই আসনে বামেরা ক্ষমতায় থাকলেও সে ভাবে উন্নয়ন হয়নি। তৃণমূল প্রার্থী নীলাবতীদেবীর দাবি, ‘‘প্রচারে গিয়ে তো সিপিএমের অনুন্নয়নের কথাই সবচেয়ে বেশি করে শুনছি। কী রাস্তাঘাট, কী নিকাশি কোনও কাজই করেনি সিপিএম। পিছিয়ে রয়েছি শিক্ষা-স্বাস্থ্যেও। অথচ এই আসন থেকে দীর্ঘ দিন ধরে জিতে আসছে সিপিএম।’’ এ দিকে বিজেপি-র পিয়াদেবীও আশাবাদী জেতার বিষয়ে। তিনি বলছেন, ‘‘এলাকার মানুষ সিপিএম ও তৃণমূলকে হাড়ে হাড়ে চিনে গিয়েছে। সিপিএম ক্ষমতায় থাকার সময়ে কাজ করেনি।’’
দীর্ঘ দিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ধীরেনবাবু এ সবে পাত্তা দিচ্ছেন না। দু’বারের বিধায়কের মন্তব্য, ‘‘রাজ্যের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছিলেন। তাই পরিবর্তন হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ বছরেই মানুষ বুঝে গিয়েছেন এই সরকার দুর্নীতি, মিথ্যাচারে ভরা। চরম স্বৈরাচারীও। আর এ রাজ্যে বিজেপির কোনও স্থান নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy