জলকষ্টে জেরবার জেলা। গ্রামে গ্রামে অনেক নলকূপ অকেজো হয়েছে প়়ড়েছে। প্রতিদিন ক্ষোভ বাড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন এলাকায়। কিন্তু এই সঙ্কটের দায় নেবে কে? বিষয়টি নিয়ে বিরোধীরা তোপ দাগছেন শাসকদলের দিকে। আর শাসক দলের জনপ্রতিনিধিরা দুষছেন নির্বাচন কমিশনকে। তাঁদের দাবি, কমিশনের কড়াকড়িতেই জলের সমস্যা বাড়ছে। সঙ্কট মেটাতে তাঁরা কোমর বেঁধে তৈরি, কিন্তু নির্বাচনী বিধিনিষেধের জন্য হাত পা বাঁধা।
বিষয়টির হেস্তনেস্ত করার জন্য এ বার সরাসরি নির্বাচন কমিশনের দারস্থ হলেন বাঁকুড়া জেলা পরিষদরে সভাধিপতি অরূপ চক্রবর্তী। তাঁর দাবি, নির্বাচনী বিধিনিষেধে ছাড় চেয়ে জেলাশাসকের মাধ্যমে চিঠি দিয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কোনও ফল না মেলায়, শনিবার সরাসরি কমিশনে ইমেল করে করে একশো দিনের কাজ-সহ জেলা পরিষদের বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চালু করার জন্য ছাড়পত্র চান তিনি। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু বলেন, “কমিশনের কাছে প্রশাসনিক ভাবেও কয়েক’টি কাজের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর পাইনি।”
জেলার সব ক’টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ পর্ব মিটে গিয়েছে চলতি মাসের ৪ এবং ১১ তারিখের মধ্যে। কিন্তু ১৯ মে ফলাফল ঘোষণার পরে আরও দশ দিন পর্যন্ত খাতায় কলমে নির্বাচনী বিধিনিষেধ জারি থাকবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।
অরূপবাবু বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। জলকষ্টে ভুগছে একের পর এক গ্রাম। অথচ আমরা কিছু করতে পারছি না।’’ তিনি জানান, বেশ কিছু গ্রামে একশো দিনের কাজ প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ হয়ে রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের খাতে কয়েক কোটি টাকা জেলা পরিষদে জমা পড়ে রয়েছে। দ্রুত খরচ না করতে পারলে সেই টাকা ফেরত চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনও কাজ শুরু করা যাচ্ছে না।
তবে, অরূপবাবুর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে তাঁকে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না জেলা পরিষদের বিরোধী সদস্যরা। তাঁদের মন্তব্য, ‘‘বিভিন্ন প্রকল্পের সরকারি সমস্ত বরাদ্দ কি এই ক’দিনে খরচ করার জন্য বসে ছিলেন সভাধিপতি? সারা বছর ঠিক ভাবে কাজ না করে এখন নির্বাচনী বিধি নিষেধের বাহানায় সেটার থেকে মানুষের চোখ ঘোরানোর চেষ্টা করছেন উনি।’’
সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য তথা জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দাবি, জেলা পরিষদের গাফিলতির জন্য জেলার বাসিন্দাদের খেসারত দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘গরমের মধ্যে যে নির্বাচন হবে, তা তো জানাই ছিল। আর শীতের শেষেই বোঝা গিয়েছিল ভয়ানক জলসঙ্কট আসতে চলেছে। তবুও টনক নড়েনি সভাধিপতির। গ্রামেগঞ্জে জলের সমস্যা মেটাতে আগে থেকে উদ্যোগী হননি সভাধিপতি। এখন মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশনের দোহাই দিয়ে মুখ রক্ষা করার চেষ্টা করছেন।’’
বস্তুত, জেলায় তীব্র জলসঙ্কটে সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্ন এবং সমালোচনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে জনপ্রতিনিধিদের। তীব্র গরমে বাঁকুড়ার বহু গ্রামে জলকষ্ট শুরু হয়েছে। কোথাও জলস্তর নেমে যাওয়ায় নলকূপে জল উঠছে না। কোথাও আবার নলকূপ পুরোপুরি অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। গঙ্গাজলঘাটি পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি জিতেন গরাই জানান, জল সমস্যা মেটানোর দাবিতে গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতির দফতরে প্রতিদিন দরবার করছেন বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দারা।
ছাতনা ব্লকের শালডিহা গ্রামপঞ্চায়েত প্রধান টেলু কর জানান, প্রতিদিন দল বেঁধে বিভিন্ন গ্রামের মানুষ পঞ্চায়েতে এসে নতুন নলকূপ তৈরি বা খারাপ নলকূপ সারাইয়ের দাবি তুলছেন। কাজ না হওয়ায় তাঁরা পঞ্চায়েত প্রধানকে দফতরের তালা লাগিয়ে বন্দি করে রাখার হুমকিও দিচ্ছেন। তাঁর দাবি, ‘‘ভোটের আগেই বেশ কয়েকটি গ্রামে নলকূপ বসানোর জন্য টাকা বরাদ্দ করে পঞ্চায়েত ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছে। কিন্তু তার পরেই ভোট ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় কাজ শুরু করা যায়নি।’’
শাঁখের করাতের মত অবস্থায় পড়ে টেলুবাবুও হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন খোদ কমিশনকে। তিনি জানান, এর পরেও যদি নির্বাচন কমিশন কোনও উচ্চবাচ্য না করে, তাহলে বাস ভাড়া করে বাসিন্দাদের নিয়ে সোজা চলে যাবেন কমিশনের দফতরে। সেখানে হাঁড়ি কলসি নিয়ে জলের জন্য তাঁরা ধর্নায় বসবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy