Advertisement
২৬ অক্টোবর ২০২৪
Lok Sabha Election 2024

মন বোঝার নির্দেশ

দলের অন্দরের খবর, শুরুতে শহরে প্রচারে দলীয় পুর প্রতিনিধিদের একাংশকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। দেওয়াল লেখাও তেমন হয়নি।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

প্রশান্ত পাল 
পুরুলিয়া শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ০৮:২৩
Share: Save:

বিপর্যয়ের কারণ খুঁজতে পুরুলিয়া শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের মানুষের সঙ্গে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। পুরুলিয়ার পুরপ্রধান তৃণমূলের নবেন্দু মাহালি বলেন, ‘‘শহরে দলের ভরাডুবির কারণ অনুসন্ধান করা হবে। এ ব্যাপারে দলীয় পুরপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে তৃণমূল শহরে ৩টি ওয়ার্ডে এগিয়ে থাকলেও এ বার কমে ২টি হয়েছে। শহরের ২৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে বাকি ২০টি বিজেপি ও একটিতে কংগ্রেস এগিয়ে। এ বার শহরের ১১৩টি বুথের ৯৮টিতে বিজেপি, ১২টিতে তৃণমূল এবং ৩টিতে কংগ্রেস। সার্বিক ভাবে শহরে তৃণমূলের থেকে ২১ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। ঘটনা হল, ২০১৬-র বিধানসভা, ২০১৯-র লোকসভা কিংবা ২০২১-র বিধানসভা— বারবার এই শহরে এগিয়ে থেকেছে বিজেপি। অথচ পুরভোটে তৃণমূলের একচেটিয়া দাপট থাকছে! কিন্তু এ বার নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্যে জোর দেওয়ার পরেও এই বিপর্যয়, মানতে পারছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

দলের অন্দরের খবর, শুরুতে শহরে প্রচারে দলীয় পুর প্রতিনিধিদের একাংশকে মাঠে নামতে দেখা যায়নি। দেওয়াল লেখাও তেমন হয়নি। যা নিয়ে শহরের এক নেতা দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মিসভায় সরব হয়েছিলেন। তবে ওয়ার্ডে ‘লিড’ না থাকলে পদ খোয়াতে হবে বলে অভিষেক সতর্ক করার পরে ‘নিষ্ক্রিয়’ অংশ প্রচারে ঝাঁপান। যদিও ফল প্রকাশের পরে বিপর্যয়ের দায় মাথায় নিয়ে শহর তৃণমূল সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া প্রদীপকুমার ডাগার দাবি, ‘‘আমাদের সমস্ত পুরপ্রতিনিধি, শহরের নেতৃত্ব, কর্মীরা দলীয় প্রার্থীকে জেতানোর জন্য আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করেছেন। আমি বিশ্বাস করি না, পুরসভার কাজের নিরিখে এই ফল হয়েছে। তাহলে শুধু সংখ্যালঘু দু’টি ওয়ার্ডে কেন আমরা জিতব? শহরে মেরুকরণের ভোট হয়েছে এ বার।’’

সমাজ মাধ্যমে দায় স্বীকার করেছেন পুরপ্রধান নবেন্দুও। তিনি বলেন, ‘‘পুরসভার কাজে যদি ত্রুটি বিচ্যুতি থাকে, পুরপ্রধান হিসেবে আমাকে তার দায় স্বীকার করতেই হবে। তবে বিভিন্ন জায়গা থেকে যা তথ্য মিলেছে, তাতে এই বিপর্যয় পরিষেবা কেন্দ্রিক নয় বলেই মনে হচ্ছে। পুরবাসীর কাছে কেন্দ্রের ভোট, মোদীর ভোট, ধর্মের ভোট— এই ভাবনা কাজ করেছে।’’ তাঁর দাবি, রাজ্যের অন্য শহরের তুলনায় পুরুলিয়ার বিষয়টা খানিকটা ভিন্ন। এখানে রামনবমীর মিছিলে উন্মাদনা থাকে। রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে ঘরে ঘরে প্রদীপ জ্বালানো, কাঁসর-ঘণ্টা বাজানো, অন্নকূট, যাগযজ্ঞ হয়েছে। তাতে ভোটে হিন্দুত্ব এখানে অনেকখানি প্রভাব ফেলেছে।

পুরপ্রধানের আক্ষেপ, ‘‘এত কাজ করেও যদি মানুষ অসন্তুষ্ট হন, তাহলে আমাদের কী করণীয়? বিজেপি যদি কিছু কাজ না করে, মাঠে না নেমে, ধর্মের ভিত্তিতে শুধু রামমন্দির দেখিয়ে বা সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করে বক্তৃতা দিয়ে ভোট পেয়ে যায়, তাহলে পরিষেবার কি কোনও মূল্য নেই?’’

পাল্টা বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রঙ্গা বলেন, ‘‘পুরসভার পদক্ষেপগুলি সবই লোক দেখানো। জলের সমস্যা কি মেটাতে পেরেছে? আবর্জনা সাফাই নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। পুর প্রতিনিধিদের একাংশের বিরুদ্ধে পরিষেবা দেওয়ার প্রশ্নে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ। সুযোগ পেয়ে মানুষ জবাব দিয়েছেন। তৃণমূল জনভিত্তি হারিয়েছে।’’

অভিযোগ উড়িয়ে পুরপ্রধান নবেন্দু বলেন, ‘‘আমাদের সাংগঠনিক কোনও ত্রুটি বিচ্যুতি হলে খুঁজে বের করব। ইতিমধ্যেই আমরা দলীয় পুর প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তাঁদের বলেছি, পরিষেবা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নাগরিকদের
কোন বক্তব্য রয়েছে কি না
তা জানতে সরাসরি কথা বলুন। সমস্যা কোথায় সেটা খুঁজে বের করুন।’’
(চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Lok Sabha Election 2024 TMC purulia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE