Advertisement
E-Paper

দেওয়ালে শান্তিরাম, জামিন নেপালের

আজ দু’জনার দু’টি পথ দু’টি দিকে গিয়েছে বেঁকে। কিন্তু, ক’বছর আগেও তাঁরা ছিলেন এক নৌকায়। এক জনকে ভোটে জেতাতে অন্য জন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মাঠে।

প্রশান্ত পাল

শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৬ ০২:১৪
জামিন পাওয়ার পরে নেপালবাবু। পুরুলিয়ায় সৈনিক স্কুলের দেওয়ালে শান্তিরামবাবুর সমর্থনে প্রচার।—সুজিত মাহাতো

জামিন পাওয়ার পরে নেপালবাবু। পুরুলিয়ায় সৈনিক স্কুলের দেওয়ালে শান্তিরামবাবুর সমর্থনে প্রচার।—সুজিত মাহাতো

আজ দু’জনার দু’টি পথ দু’টি দিকে গিয়েছে বেঁকে। কিন্তু, ক’বছর আগেও তাঁরা ছিলেন এক নৌকায়। এক জনকে ভোটে জেতাতে অন্য জন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মাঠে।

রাজনীতির ময়দানে আজ তাঁরাই পরস্পরের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী। এখন তাঁরা একে অন্যকে হারাতে মরিয়া। তাঁদের এক জন পুরুলিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি নেপাল মাহাতো। অন্য জন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো।

বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে বুধবার পুরুলিয়া আদালতের একটি ঘটনা কংগ্রেসের অনেকের মনেই উস্কে দিয়েছে নেপাল-শান্তিরামের এক সঙ্গে কংগ্রেসে থাকার স্মৃতি। এ দিন আদালতে আত্মসমর্পণ করে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দু’টি মামলায় জামিন পেয়েছেন নেপালবাবু। ওই মামলা দু’টি হয়েছিল ২০০৯ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস প্রার্থী শান্তিরামবাবুর নির্বাচনী প্রচারকে ঘিরে। শান্তিরামবাবু প্রথম থেকেই কংগ্রেসি ঘরানার মানুষ। দলের জেলা সভাপতি নেপালবাবুর সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন দল করেছেন। চার বার তিনি কংগ্রেসের টিকিটে জয়পুরের বিধায়ক হয়েছেন। ২০১১ সালে তিনি তৃণমূলের প্রথমবারের বিধায়ক হন বলরামপুর কেন্দ্র থেকে। ২০০৯ সালে তিনি পুরুলিয়া কেন্দ্র থেকে কংগ্রেসের প্রতীকে লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে সরকারি দেওয়ালে ভোটের প্রচারেই বিধিভঙ্গ হয় বলে অভিযোগ। নেপালবাবু আইনজীবী বিশ্বরূপ পট্টনায়ক জানান, যে দুটি মামলায় এ দিন নেপালবাবু জামিন পেয়েছেন, সেই দু’টি মামলা ছিল সরকারি দেওয়ালে শান্তিরামবাবুর পক্ষে দেওয়াল লিখন সংক্রান্ত। একটি বন দফতর, অন্যটি ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দেওয়াল লিখন। দু’টির ক্ষেত্রেই জেলা কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে মামলা হয়েছিল নেপালবাবুর বিরুদ্ধে। এ দিন নেপালবাবু কর্মীদের নিয়ে পুরুলিয়া জেলা আদালতে হাজির হয়ে অতিরিক্ত দায়রা বিচারক প্রত্যয় চৌধুরীর এজলাসে আত্মসমর্পণ করেন।

২০০৯ সালের ওই লোকসভা নির্বাচনের পরেই শান্তিরামবাবু কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। ঘটনা হল, নেপালবাবু ও শান্তিরামবাবু এখন জেলায় দুই দলের কাণ্ডারী হলেও তাঁদের সে ভাবে বিরোধ করতে কখনও দেখা যায়নি। বরং কয়েকমাস আগে কুড়মিদের একটি সভায় তাঁদের দু’জনকে একমঞ্চে দেখা গিয়েছিল।

আদালত থেকে বেরিয়ে এ দিন নেপালবাবু বলেন, ‘‘সে সময় জেলা কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে এ রকম মোট ১০টি মামলায় আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, পরবর্তী কালে কমিশন এই মামলাগুলি তুলে নেওয়ার জন্য একটি নির্দেশ জারি করেছিল। তাঁরা পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে সরকারি দেওয়ালে লিখন সংক্রান্ত মামলাগুলি তুলে নেওয়ার আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন তা তোলেনি।

জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘সরকারি দেওয়ালে কোনও দলের প্রার্থীর বিজ্ঞাপন লেখা হলে সরকারি বিধি মোতাবেকই মামলা হবে। সরকারি দেওয়ালে কোনও প্রার্থীর সমর্থনে দেওয়াল লিখন রয়েছে তা দেখা গেলে বা অভিযোগ এলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীকে ৭২ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। তার মধ্যে মুছে না ফেললে অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করা হয়। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে।’’ তিনি জানান, কমিশন বলেছে এ সংক্রান্ত যা মামলা রয়েছে তার চূড়ান্ত নিস্পত্তি করতে হবে।

শান্তিরামবাবু অবশ্য বলছেন, ‘‘সে সময়ে ভোটের প্রচারে নেপালদা ও আমি দু’জনেই নেমেছিলাম। তবে সরকারি দেওয়ালে ভোটের প্রচার করা হলে বিধিভঙ্গ হয়। সে ক্ষেত্রে আইনের নির্দেশ মানতেই হবে।’’

ঘটনাচক্রে এ দিনই পুরুলিয়া সৈনিক স্কুলের দেওয়ালে শান্তিরামবাবুর নামেই দেওয়াল লিখন দেখা গিয়েছে। সরকারি ওই স্কুলের দেওয়ালে ভোটের প্রচার লেখায় এ বার তৃণমূলের জেলা সভাপতি হিসেবে শান্তিরামবাবুর নামেই নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেস কর্মীরা।

তাঁদের কটাক্ষ, এ বার আর নেপালদা শান্তিরামবাবুর হয়ে মামলায় জড়াবেন না। ওঁনাকেই মামলা সামলাতে হবে। শান্তিরামবাবু বলেন, ‘‘পুরুলিয়ার বাইরে রয়েছি। কী হয়েছে জানি না। সরকারি দেওয়ালে ভোটের প্রচার লেখা হয়ে থাকলে অবশ্যই তা মুছে দেওয়া হবে।’’

election campaign assembly election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy