Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
পথে দুর্ভোগ, পথে বাইক-মিছিলও

পক্ষপাত করছে পুলিশ, অভিযোগ বাঁকুড়ায়

রাস্তায় নেমে শাসক দলের বিরোধিতা। সঙ্গে পুলিশের অতিসক্রিয়তা। জোড়া চেষ্টার পরেও বৃহস্পতিবার সাধারণ ধর্মঘটের প্রভাব ভালই পড়ল বাঁকুড়া জেলায়। বামেদের ডাকা বন্‌ধে অবশ্য বাম নেতা-কর্মীদেরই সে ভাবে বাঁকুড়ার পথে নামতে দেখা গেল না। বরং সেই ধমর্ঘট সমর্থন জানাতে গিয়ে পথে নেমে পুলিশের হাতে আটক হলেন বিজেপি নেতারা! প্রতিবাদে থানা ঘেরাও, পথ অবরোধে নামলেন বিজেপি কর্মীরা।

কখন আসবে বাস? বাঁকুড়ায় বৃহস্পতিবার অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

কখন আসবে বাস? বাঁকুড়ায় বৃহস্পতিবার অভিজিৎ সিংহের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাঁকুড়া শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০২:২৬
Share: Save:

রাস্তায় নেমে শাসক দলের বিরোধিতা। সঙ্গে পুলিশের অতিসক্রিয়তা। জোড়া চেষ্টার পরেও বৃহস্পতিবার সাধারণ ধর্মঘটের প্রভাব ভালই পড়ল বাঁকুড়া জেলায়। বামেদের ডাকা বন্‌ধে অবশ্য বাম নেতা-কর্মীদেরই সে ভাবে বাঁকুড়ার পথে নামতে দেখা গেল না। বরং সেই ধমর্ঘট সমর্থন জানাতে গিয়ে পথে নেমে পুলিশের হাতে আটক হলেন বিজেপি নেতারা! প্রতিবাদে থানা ঘেরাও, পথ অবরোধে নামলেন বিজেপি কর্মীরা। সদ্য পুরভোটে বাঁকুড়া শহরে দু’টি আসন পেয়ে কিছুটা চাঙ্গা বিজেপি-র শক্তি প্রদর্শন এবং শাসক দলের প্রতিরোধের চেষ্টায় কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও দিনভর উত্তেজনা রইল জেলা সদরে। মাঝখান থেকে চরম নাকাল হয়েছেন সাধারণ মানুষ।

এ দিন সকাল থেকেই বাঁকুড়া শহরের চেহারা ছিল পরিচিত বন্‌ধের দিনের মতই। অধিকাংশ দোকানই ছিল বন্ধ। রাস্তায় গাড়ি চলাচল কার্যত করেনি। পথচারীদের দেখাও মেলেনি বিশেষ একটা। জেলায় ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বেসরকারি বাস একেবারেই চলেনি। কিছু এসবিএসটিসি বাসই ছিল ভরসা। যদিও বাসে যাত্রী সংখ্যা তেমন ছিল না। পরিবহণ ব্যবস্থায় বন্‌ধের প্রভাব পড়ায় প্রয়োজনীয় কাজে বের হয়ে বহু মানুষই নাকাল হয়েছেন। প্রভাব পড়েছে সব্জি বাজারগুলিতেও। বাঁকুড়া শহরের প্রায় সব ক’টি বাজারেই এ দিন বিক্রেতাদের দেখা বিশেষ মেলেনি।

এ দিন সকালে বন্‌ধের সমর্থনে মিছিল করে মাচানতলা মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন বিজেপি কর্মীরা। নেতৃত্বে ছিলেন দলের রাজ্য সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার, রাজ্য সম্পাদক মনীষা চট্টোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি জয়ন্ত মণ্ডল, সহ সভাপতি জীবন চক্রবর্তী-সহ অনেকে। সেই সময় মাচানতলা মোড়েই বন্‌ধের বিরুদ্ধে পথসভা করছিল তৃণমূল। বিজেপি-র মিছিলকে ওই সভার দিকে আসতে দেখে পথ আটকায় পুলিশ। মিছিলে উপস্থিত জনা ৪৮ জন বিজেপি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করে প্রিজন ভ্যানে তুলে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। অভিযোগ, সে সময় বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে তৃণমূলের মঞ্চ থেকেই কটূক্তি করা হয়। ও দিকে, পুলিশ বিজেপি নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার দাবিতে থানার সামনেই অবরোধে নামেন শতাধিক বিজেপি কর্মী। পুলিশি হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠলেও তাঁরা থানার ভিতরে ঢুকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পুলিশ নেতাদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ ওঠে। যদিও এ দিন বিকেল পর্যন্ত সুভাষবাবু-সহ ধৃত বিজেপি নেতাদের থানাতেই বসিয়ে রাখে পুলিশ। পরে তাঁরা থানা থেকেই জামিন পান।

বন্‌ধ ডেকেও কেন রাস্তায় নামেনি বামেরা, জানতে চাওয়া হলে সিপিএমের বাঁকুড়া জোনাল কমিটির সম্পাদক প্রতীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা খুব সকালে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে মিছিল করেছি। বন্‌ধ সর্বাত্মক ভাবে সফল হয়েছে দেখে আর রাস্তায় নামিনি।’’ সুভাষবাবু এ জন্য বামেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা বলেছেন। তাঁর দাবি, “বামেরা দুর্বল হয়ে গিয়েছে। তাই রাস্তায় নামতে পারেনি। এ দিন মানুষ টের পেয়েছে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রয়েছে একমাত্র বিজেপি-র।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, “আমরা শান্তিপূর্ণ মিছিল করছিলাম। অথচ বিনা অনুমতিতে মাইক বাজিয়ে পথসভা করে আমাদের উপরে হামলার প্ররোচনা দিচ্ছিল তৃণমূল। পুলিশ এই সব দেখেও ওদের কিছু করল না। কিন্তু, আমাদের আটক করে থানায় নিয়ে এল।’’ প্রতীপবাবুরও অভিযোগ, “বুধবার পুলিশের তরফে বলে দেওয়া হয়েছিল বনধের সমর্থন বা বিরোধিতা করার জন্য কোনও রাজনৈতিক দলকেই মাইকের অনুমতি দেওয়া যাবে না। তার পরেও তৃণমূল কী করে মাইক বাজিয়ে পথসভা করল? আসলে পুলিশ নিরপেক্ষ নয়।’’ তৃণমূলের শহর কমিটির সভাপতি সিন্টু রজকের অবশ্য দাবি, পুলিশের কাছ থেকে মাইক বাজিয়ে সভা করার ছাড়পত্র তাঁরা নিয়েছেন।

এবিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার নীলকান্ত সুধীর কুমার অবশ্য স্পষ্টই বলেন, “আমরা বলেছিলাম, বন্্ধের বিরোধিতা করে প্রচারে মাইক ব্যবহার করা যাবে। পক্ষে প্রচারে নয়।’’ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কাতেই বিজেপি নেতা-কমর্মীদের ধরা হয়েছিল বলেও পুলিশ সুপারের দাবি।

তবে, বন্‌ধের কোনও প্রভাব পড়েনি সরকারি অফিস-কাছারিতে। ডাকঘর থেকে জেলাশাসকের অফিস, সর্বত্রই কর্মীদের উপস্থিত স্বভাবিক ছিল। স্কুল-কলেজও বন্ধ ছিল না। তবে পড়ুয়াদের উপস্থিতি কমই ছিল অন্য দিনের তুলনায়। জেলার কোনও প্রান্ত থেকেই জোর করে বাস আটকানো বা দোকান বন্ধ করার জন্য চাপ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বহু মানুষকেই হয়রানির মধ্যে পড়তে হয়েছে। পুরুলিয়ার হুড়া থেকে বাঁকুড়া মেডিক্যালে চিকিৎসা করাতে এসেছিলেন ন’মাসের অন্তঃসত্ত্বা অঞ্জনা মণ্ডল। সঙ্গে স্বামী গোপে। ফেরার সময় বাঁকুড়ার গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে দীর্ঘক্ষণ ধরে চড়া রোদে তাঁরা বাসের জন্য অপেক্ষা করেছেন। গোপেবাবু বলেন, “রুটিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্যই হাসপাতালে এসেছিলাম। ভোরে আসার সময় একটা এসবিএসটিসি বাস পেয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেড় ঘণ্টা ধরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। বাস পাচ্ছি না।’’ ব্যবসার কাজে বাঁকুড়ায় এসে বাড়ি ফেরার বাসের জন্য একই ভাবে বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে দেখা গেল পুরুলিয়ার বাসিন্দা পঞ্চানন মাহাতোকে।

খাতড়া মহকুমাতেও বন্‌ধের প্রভাব পড়েছে। খাতড়া শহরে বেশির ভাগ দোকানই দিনভর ছিল বন্ধ। জেলার জঙ্গলমহল সিমলাপাল, রাইপুর, সারেঙ্গা ও রানিবাঁধে মিশ্র প্রভাব দেখা গিয়েছে। তবে ছবিটা একেবারেই আলাদা ছিল বিষ্ণুপুর শহরে। সেখানে বন্‌ধের প্রভাব দেখা যায়নি বললেই চলে। বাজার, দোকানপাট খোলা ছিল দিনভর। একমাত্র বিষ্ণুপুর বাসস্ট্যান্ডের চিত্রটাই একটু আলাদা ছিল। যাত্রীদের ভিড়ও তুলনামূলক কম ছিল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE