কড়া পাহারায় পুরুলিয়া মেডিক্যাল। নিজস্ব চিত্র
রোগী-মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধুন্ধুমার বাধল পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। গাফিলতির অভিযোগ তুলে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক ও নার্সকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে। সেই ঘটনায় গ্রেফতার হন মৃতের ছেলে-সহ দু’জন। সোমবার রাতের ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে ধৃতেরা হলেন মৃতের ছেলে কৃষ্ণেন্দু রায় ও তাঁর বন্ধু রাহুল রায়। মঙ্গলবার ধৃতদের পুরুলিয়া আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেলা হাজত হয়। তবে বাবার একমাত্র সন্তান হিসেবে বিচারক কৃষ্ণেন্দুকে দুপুর তিনটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত অন্ত্যেষ্টিতে উপস্থিত থাকতে অনুমতি দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন আসামি পক্ষের আইনজীবী শেখর বসু।
মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘খুবই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। চিকিতসকেরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিলেন। আইসিইউ-তে কোনও শয্যা ফাঁকা ছিল না বলে ট্রলিতে রেখেই চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে বাঁচানো যায়নি। তারপরে রোগীর সঙ্গে থাকা লোকজনদের একাংশের প্রথমে নার্স ও পরে এক চিকিৎসকে নিগ্রহ করেন।’’
হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত সোমবার রাত প্রায় সাড়ে দশটা নাগাদ। পুরুলিয়া শহরের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের হুচুকপাড়ার বাসিন্দা সত্তরোর্ধ্ব প্রণব রায়কে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিজনেরা। তাঁর পরিজনদের দাবি, জরুরি বিভাগ থেকে মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে রোগীকে ভর্তি করা হলেও বেশ কিছুক্ষণ চিকিৎসা করা হয়নি। তাঁর অবস্থার অবনতি হলে পরিজনেরা হইচই পাকালে দ্রুত আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছু পরেই প্রণববাবুর মৃত্যু হয়। সেই সময়ে গোলমাল বাধলেও পুলিশ দ্রুত পৌঁছনোয় পরিস্থিতি তখনকার মতো নিয়ন্ত্রণেই থাকে। তখনই এক নার্সকে নিগ্রহের অভিযোগ ওঠে।
নতুন করে গোলমাল বাধে আরও আধ ঘণ্টা পরে, রাত প্রায় সাড়ে ১২টা নাগাদ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মৃতের ছেলে কৃষ্ণেন্দু রায় ও আরও কয়েকজন সরাসরি জরুরি বিভাগে ঢুকে চিকিৎসক সুমন্ত দাসের উপরে চড়াও হন। সুমন্তবাবুর দাবি, রোগীকে যখন আনা হয়, তখন তিনি প্রায় সংজ্ঞাহীন। তাঁর রক্তচাপ অত্যন্ত বেশি ছিল। ভাল করে শ্বাসও নিতে পারছিলেন না। আইসিইউ-তে নিয়ে গিয়েও বাঁচানো যায়নি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘মৃত্যুর কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ এক জন জামা ধরে টুল তুলে আমাকে মারার চেষ্টা করেন। কোনওরকমে সরে গিয়ে রক্ষা পাই। পরে জানতে পারি, সেই মৃতের ছেলে। কর্তৃপক্ষকে গোটা ঘটনাটি জানিয়েছি।’’ বাকি রাত পুলিশি পাহারায় ছিল হাসপাতাল।
কলকাতার এনআরএসের ডাক্তারকে মারধরের পরে এই ঘটনাটিকে কোনও ভাবেই হালকা করে দেখতে রাজি নয় প্রশাসন। মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালের সুপার শ্যামাপ্রসাদ মিত্র মৃতের ছেলে-সহ দু’জনের বিরুদ্ধে পুরুলিয়া সদর থানায় ডাক্তার ও নার্সের উপরে হামলার অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ অভিযুক্ত দু’জনকেই গ্রেফতার করে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ‘ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিকেয়ার সার্ভিস পার্সন অ্যান্ড মেডিকেয়ার সার্ভিস ইন্সস্টিটিউশন (প্রিভেনশন অফ ভায়োলেন্স অ্যান্ড ড্যামেজ টু প্রোপার্টি) অ্যাক্ট ২০০৯ ধারায় মামলা রুজু করেছে পুলিশ। পাশাপাশি শ্লীলতাহানি, মারধরের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে।
মৃতের এক মাত্র ছেলেকে গ্রেফতার করায় কী ভাবে অন্ত্যেষ্টি হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এ দিন সকালে হাসপাতালে গিয়ে কিছু লোকজন বিক্ষোভ দেখান। মৃতের পড়শি দুলাল সরকারের দাবি, ‘‘সরকারি হাসপাতালের গাফিলতিতে মৃত্যু হল। আর পুলিশে কি না মৃতের ছেলের নামেই অভিযোগ দায়ের করা হল!’’ স্থানীয় কাউন্সিলর বিভাসরঞ্জন দাসের দাবি, ‘‘চোখের সামনে বাবার মৃত্যুর পরে কৃষ্ণেন্দু মাথা ঠান্ডা রাখতে পারেননি। উত্তেজনার বশে কোনও ঘটনা ঘটে গিয়ে থাকতে পারে। কিন্তু তিনি ক্ষমা চাইতে রাজি ছিলেন।’’ যদিও চিকিৎসা নিয়ে গাফিলতির অভিযোগ এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতের পরিবারের তরফে জানায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy