Advertisement
১৭ মে ২০২৪
অন্তঃসত্ত্বা-সহ মারা গেলেন দু’জন, তদন্তের নির্দেশ মহকুমাশাসকের

মৃত বধূ, নড়ল টনক

আদিবাসী অধ্যুষিত ২৫টি পরিবারের গ্রাম টুসুলিয়ামে গত কয়েক দিন ধরেই বমি, পায়খানা ও পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভুগছেন বাসিন্দারা। অনেকে নিতুড়িয়ার হারমাড্ডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হন। সেখানেই আত্মীয়ের দেখাশোনা করতে গিয়ে এক যুবতীর মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার।

মুখোমুখি: গ্রামে গিয়ে কথা বলছেন প্রশাসনের কর্তারা। রবিবার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের টুসুলিয়ামে। নিজস্ব চিত্র

মুখোমুখি: গ্রামে গিয়ে কথা বলছেন প্রশাসনের কর্তারা। রবিবার রঘুনাথপুর ১ ব্লকের টুসুলিয়ামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথপুর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৭ ০১:৫০
Share: Save:

আগেই গ্রামের দু’জনের মৃত্যু হয়েছে পেটের রোগে। কিন্তু এ বার এক অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যুর পরে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। শনিবার রাতে যখন বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের টুসুলিয়ামের অন্তঃসত্ত্বা অতিকা মুর্মু মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়লেন, সেই সময়েই তাঁর গ্রামে প্রথম পৌঁছল প্রশাসনের জলের গাড়ি। অথচ গত কয়েকদিন ধরে বাসিন্দারা দূষিত হয়েছে জেনেও সেই এক মাত্র নলকূপের জল খেতে বাধ্য হচ্ছিলেন। তাই রবিবার ওই গ্রামে গিয়ে মহকুমাশাসক (রঘুনাথপুর) দেবময় চট্টোপাধ্যায় ওই রোগ ছড়ানোর জন্য ব্লক স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা কী ছিল, সেই বিষয়গুলি খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘রোগের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে আরও আগেই সর্তক থাকা প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্য দফতর ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের।”

আদিবাসী অধ্যুষিত ২৫টি পরিবারের গ্রাম টুসুলিয়ামে গত কয়েক দিন ধরেই বমি, পায়খানা ও পেটের যন্ত্রণা নিয়ে ভুগছেন বাসিন্দারা। অনেকে নিতুড়িয়ার হারমাড্ডি ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হন। সেখানেই আত্মীয়ের দেখাশোনা করতে গিয়ে এক যুবতীর মৃত্যু হয় বৃহস্পতিবার। তাঁর মৃত্যু পেটের রোগের কারণ বলে জানালেও শনিবার সকালে গ্রামে এক প্রৌঢ় একই উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেও স্বাস্থ্য আধিকারিক দাবি করেন, তিনি বয়সজনিত কারণে মারা গিয়েছেন। যদিও সেই ব্যক্তি প্রৌঢ়। এরপরেই বাসিন্দারা স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ তোলেন। বিরোধীরা ধাপাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে তির ছোড়েন।

মহকুমাশাসক এ দিন ওই গ্রামে যাওয়ার পরে ওই গ্রামের একমাত্র চালু থাকা দূষিত জলের নলকূপটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। শনিবার রাত থেকেই ওই গ্রামে জলের গাড়ি পাঠাচ্ছে প্রশাসন। দেড়শো জনসংখ্যার গ্রাম টুসুলিয়ামে বর্তমানে ১১-১২ জন বাসিন্দা পেটের রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ভর্তি বলে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

গ্রামবাসী বাবলু সোরেন, গোপাল হেমব্রম, দেবেন হেমব্রমদের ক্ষোভ, ‘‘দীর্ঘ দিন ধরে গ্রামের তিনটি নলকূপের মধ্যে দু’টি বিকল হয়ে পড়ে থাকলেও প্রশাসন সেগুলি মেরামত করেনি। ওই দূষিত জলই বাধ্য হয়ে খেতে হয়েছে।’’ তবে শনিবার রাত থেকে গ্রামে পাঁচ হাজার লিটারের জলের গাড়ি পাঠিয়েছে প্রশাসন। মহকুমাশাসক জানান, আরেকটি জলের ট্যাঙ্কার পাঠানো হচ্ছে গ্রামে। কোনও অবস্থাতেই যাতে গ্রামের বাসিন্দারা ওই নলকূপের জল না খান, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। বিকল নলকূপগুলি মেরামতির তোড়জোড় শুরু করেছে প্রশাসন। তবে সেগুলি সারানোর পরে জলের গুণগত মান পরীক্ষা করার পরেই গ্রামবাসীদের সেই জল ব্যবহার করতে বলা হবে।

তবে গ্রামে আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, সর্বোপরি স্বাস্থ্য কর্মীরা থাকা সত্ত্বেও এক অন্তঃসত্ত্বাকে ডায়েরিয়াতে আক্রান্ত হয়ে একেবারে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হতে হল, সেই প্রশ্ন উঠছে। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, যে অবস্থায় ওই প্রসূতি হাসপাতালে এসেছিলেন, তাতে স্পষ্ট বেশ কয়েকদিন আগেই তিনি ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। সময়ে তাঁকে ভর্তি করা হলে সুস্থ করার সম্ভাবনা থাকত।

তবে রঘুনাথপুর ১ ব্লকের স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্য সরকারের দাবি, অতিকা মুর্মু নামের ওই প্রসূতি আন্ত্রিকে আক্রান্ত হয়েছেন খবর পাওয়ার পরেই তাঁর সাথে স্বাস্থ্যকর্মী দেখা করে প্রাথমিক ওষুধ দিয়ে হাসপাতালে রাঠাতে বলেছিলেন। তাঁর আরও দাবি, ‘‘বৃহস্পতিবার জানা গিয়েছিল ওই প্রসূতি ডায়েরিয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন। সে দিনই তাঁকে হাসপাতালে যেতে বলা হয়। পরের দিন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসক দেখিয়েছিলেন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি করে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে।’’

ডায়েরিয়া ছড়িয়েছে খবর পাওয়ার পরেও স্বাস্থ্য দফতর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দেরি করেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ মানতে চাননি বিএমওএইচ। তিনি দাবি করেন, ‘‘মঙ্গলবার আমাদের কাছে টুসুলিয়াম গ্রামে পেটের রোগ ছড়ানোর খবর এসেছিল। সে দিন থেকেই গ্রামে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়িবাড়ি ঘুরে ওষুধ-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিচ্ছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Purulia Death রঘুনাথপুর
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE