Advertisement
১৬ মে ২০২৪

পদে ফিরেও স্বস্তি নেই প্রধানের

অনাস্থার তলবি সভায় হেরেও আদালতের নির্দেশে ফের পদ ফেরত পেতে চলেছেন সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান উজ্জ্বল সিংহ।

উজ্জ্বল সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

উজ্জ্বল সিংহ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৬ ০২:১৭
Share: Save:

অনাস্থার তলবি সভায় হেরেও আদালতের নির্দেশে ফের পদ ফেরত পেতে চলেছেন সিউড়ি ১ ব্লকের কড়িধ্যা পঞ্চায়েতের প্রাক্তন তৃণমূল প্রধান উজ্জ্বল সিংহ। আজ, মঙ্গলবার তিনি ফের প্রধান হিসাবে পঞ্চায়েতে যোগ দিতে চলেছেন।

উজ্জ্বলবাবুর আইনজীবী অনিন্দ্য বসু বলেন, ‘‘অনাস্থা আনার পদ্ধতিতে ত্রুটির উল্লেখ করে ১৯ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের দুই বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার ও সিদ্বার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই রায় দিয়েছেন।’’ আদালতের নির্দেশের কথা মেনে নিয়েছেন বিডিও (সিউড়ি ১) মহম্মদ বদরুজ্জোহা। তিনি জানান, আদালতের রায়ের পরেই উজ্জ্বলবাবু পদে বসতে পারতেন। কিন্তু নির্দেশের কপি না পাওয়ায় তিনি তা করতে চাননি। বিডিও জানান, সম্প্রতি সেই নির্দেশের কপি এসে পৌঁছেছে।

তবে বিডিও জানিয়েছেন, আগের অনাস্থার পুরো প্রক্রিয়াটি বাতিল করলেও ফের অনাস্থা আনা নিয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি আদালত। সেই পথেই হাঁটতে চলেছেন বর্তমান পঞ্চায়েত প্রধান প্রবীর ধর।

উজ্জ্বল সিংহ ও প্রবীর ধর— তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর লড়াই কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে এলাকায় পরিচিত। ১৫ জুন পঞ্চায়েত প্রধান উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন প্রবীরবাবু সহ তৃণমূলের তিন পঞ্চায়েত সদস্য। তাঁদের সঙ্গে হাত মেলান বিজেপি ও কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী আরও চার সদস্য। যুগ্ম বিডিও মণিমিত্রা মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে তলবি সভা হয় ২৭ জুন। সেখানে পনেরো সদস্যের ওই পঞ্চায়েতের ন’জন সদস্যই উজ্জ্বলবাবুর বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ায় তিনি পদচ্যুত হন। ১৬ অগস্ট প্রধান হিসাবে শপথ নেন প্রবীর ধর।

কিন্তু অনাস্থায় পদ্ধতিগত ত্রুটির অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হন উজ্জ্বলবাবু। তাঁর আইনজীবী অনিন্দ্যবাবু বলেন, ‘‘অনাস্থা আনতে হলে চিঠিতে বাধ্যতামূলক ভাবে রাজনৈতিক পরিচয় উল্লেখ করতে হয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রে সেটি হয়নি। ঠিক মতো যাচাই না করেই তলবি সভা ডাকা হয়েছিল। তাই সেটি বাতিল করা হয়েছে।’’ তিনি জানান, অ্যাডিশনাল গভর্মেন্ট প্লিডার তপন মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই এই রায় দিয়েছে আদালত।

স্থানীয় সূত্রের দাবি, কড়িধ্যা পঞ্চায়েতে গোষ্ঠী কোন্দল বহু দিনের। প্রথম থেকেই তা বারে বারে প্রকাশ্যে এসেছে। গত নির্বাচনে ওই পঞ্চায়েতের ১৫টি আসনের মধ্যে তিনটি করে পায় বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস। একটি আসন পেয়েছিলেন নির্দল প্রার্থী। বাকি ৫টি আসনেই জয়ী হয়েছিলেন তৃণমূলের প্রার্থীরা। ভোটের পরেই জয়ী নির্দল সদস্য তৃণমূলে যোগ দেন।

কিন্তু তৃণমূল শিবিরে দু’টি মেরু দেখা যায়। দুই শিবিরে ভাগ হয়ে যান তিন জন করে সদস্য। বিরোধী কয়েক জন সদস্যের সমর্থন পাওয়ায় উজ্জ্বলবাবু প্রধান হন বটে, কিন্তু তলে তলে লড়াইটা জারি থেকেছে বরাবর। পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, এর আগেও এক বার অনাস্থা এনেছিল প্রবীরবাবুর গোষ্ঠী। কিন্তু পাল্লা ভারি থাকায় সে যাত্রা উজ্জ্বলবাবুই পদে থেকে যান।

সম্প্রতি সেই চাকা ঘুরে গিয়েছে বলে তৃণমূল সূত্রের দাবি। এখন হাওয়া উজ্জ্বলবাবুর বিপক্ষে। এলাকার তৃণমূল কর্মীদের একাংশের দাবি, উজ্জ্বলবাবুর মাথা থেকে দলে হাতও অনেকটাই সরে গিয়েছে। উন্নয়নের কাজ ঠিক মতো করতে না পারা, প্রকল্পের টাকা খরচ না হওয়ায় ফেরত চলে যাওয়া— এমন নানা অভিযোগ তো ছিলই, সম্প্রতি তার সঙ্গে যোগ হয়েছে বিধানসভা নির্বাচনে ঠিক ভাবে মাঠে না নামার নালিশ। তৃণমূল সূত্রের খবর, দলীয় স্তরে তদন্তে সেই অভিযোগ মান্যতাও পেয়েছে। তারপর থেকেই উজ্জ্বলবাবুকে পদ থেকে সরানোর চেষ্টা শুরু হয়।

ফলে পদ ফিরে পেলেও উজ্জ্বলবাবু তা আদৌ কত দিন ধরে রাখতে পারবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। উজ্জ্বল-ঘনিষ্ঠ নেতা কর্মীদের একাংশ মানছেন, পরিস্থিতি অনুকূল নয়। ফের অনাস্থার পথ খোলা থাকায় সেটিকেই হাতিয়ার করতে চলেছেন উজ্জ্বলবাবুর বিরোধীরা। আপাতত ক্ষমতায় থাকা প্রবীরবাবু বলেন, ‘‘খুব তাড়াতাড়িই আমরা ফের অনাস্থা আনব। ন’জন সদস্য আগেই আমার সঙ্গে ছিলেন। এখন রয়েছেন এগারো জন। উজ্জ্বলবাবুর অপসারণ আপাতত একটু বাড়তি সময়ের অপেক্ষা।’’

তবে হাল ছাড়তে নারাজ উজ্জ্বলবাবুও। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দশে ক্ষমতায় ফিরেছি। সমস্যা হলে ফের আদালতের দরজা তো খোলাই রয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ujjwal Singha Panchayat Pradhan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE