Advertisement
০৫ মে ২০২৪
হুড়ায় কলেজ ভোট

মনোনয়ন তোলার প্রথম দিনেই অশান্তি

বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত করতে হবে, সম্প্রতি জেলায় কর্মিসভা করতে এসে দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এমনই বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

লোহার রড হাতে কলেজের ভিতরে বহিরাগতরা। সোমবার প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।

লোহার রড হাতে কলেজের ভিতরে বহিরাগতরা। সোমবার প্রদীপ মাহাতোর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হুড়া শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:১৮
Share: Save:

বিভিন্ন কলেজের ছাত্র সংসদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ভাবে অনুষ্ঠিত করতে হবে, সম্প্রতি জেলায় কর্মিসভা করতে এসে দলের ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীদের এমনই বার্তা দিয়ে গিয়েছিলেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষামন্ত্রী হিসাবে প্রশাসনের প্রতিও তাঁর একই বার্তা ছিল।

সেই বার্তা ছাত্র সংগঠনের নিচুতলায় কতটা পৌঁছেছে, সোমবার সে প্রশ্ন উঠে গেল হুড়া ব্লকের লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজে। ছাত্র সংসদের নির্বাচন উপলক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রথম দিনই ওই কলেজে অশান্তি ছড়াল। তাতে নাম জড়াল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের। হামলার অভিযোগ তুলে জাতীয় সড়ক অবরোধ করল কলেজের ছাত্র সংসদ দখলে রাখা অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)।

শেষবার (২০১৪) ওই কলেজের ভোটে ছাত্র সংসদ দখল করেছিল এবিভিপি। পুরুলিয়া জেলায় সেটাই ছিল কলেজে গেরুয়া শিবিরের প্রথম জয়। আগামী ২৩ ডিসেম্বর জেলার কলেজগুলিতে ছাত্র সংসদের নির্বাচন হবে বলে বিভিন্ন কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে এই মর্মে সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই অনুযায়ী সোমবার থেকে মনোনয়নপত্র দেওয়া শুরু করেছিলেন লালপুর মহাত্মা গাঁধী কলেজ কর্তৃপক্ষ। কলেজ সূত্রের খবর, মনোনয়ন তোলাকে কেন্দ্র করে এ দিন এবিভিপি এবং টিএমসিপি কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় ঝামেলা বাধে। এ দিন কলেজের গেটের ঠিক বাইরে পুরুলিয়া-বাঁকুড়া ৬০-এ জাতীয় সড়কের উল্টো দিকে শিবির করেছিল টিএমসিপি। ঢিল ছোড়া দূরত্বে শিবির ছিল এবিভিপি-র। সকাল থেকেই দুই শিবির থেকে একে অপরের দিকে টুকরো মন্তব্য ছুড়তে শুরু করায় উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়। শেষবার নির্বাচনে ঝামেলার ঘটনা মাথায় রেখে পুলিশও মোতায়েন ছিল।

তাতেও গোলমাল এড়ানো যায়নি। পুলিশের সামনেই দু’পক্ষের কর্মী সমর্থকদেরই লাঠি-সোটা, রড হাতে দু পক্ষের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের একে অপরের দিকে পাথর ছুড়তেও দেখা যায়। পুলিশের সামনেই টিএমসিপি তাদের কর্মী-সমর্থকেরা মারধর করেছে অথচ পুলিশ হাত গুটিয়ে বসে থেকেছে, এই অভিযোগ তুলে এবিভিপি কলেজের সামনে অবরোধ করে। তার জেরে কিছুটা যানজট হয়। পুলিশ অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই অবরোধকারীদের হঠিয়ে দেয়।

এবিভিপি-র অভিযোগ, প্রথম দিনেই টিএমসিপি-র ছেলেরা তাদের সদস্যদের হুমকি দিয়ে মনোনয়নপত্র ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে। এবিভিপি-র তরফে এই নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা আবদুল আলিম আনসারির অভিযোগ, ‘‘পুলিশের সামনেই কলেজের আগের বারের সাধারণ সম্পাদককে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে টিএমসিপি-র কর্মীরা। পুলিশের সামনে আমাদের কর্মীর হাত থেকে ব্যাগও ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, হুমকির জেরে তাঁদের এক কর্মী মনোনয়নপত্র তুলেও ভয়ে তা ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে টিএমসিপি-র পাল্টা দাবি, এবিভিপি এ দিন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে গোলমাল পাকিয়েছে। সংগঠনের জেলা সভাপতি নিরঞ্জন মাহাতো বলেন, ‘‘এবিভিপি জেনেই গিয়েছে, যে এ বার ওদের হার নিশ্চিত। তাই মনোনয়নপত্র তোলার প্রথম দিন থেকেই গণ্ডগোল পাকাতে শুরু করেছে।’’ কলেজ পরিচালন সমিতির সভাপতি নরেন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ভোট পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এ দিন মনোনয়ন তোলাকে ঘিরে বাইরে ঝামেলা হয়েছে বলে শুনেছি। তবে ৮১টি মনোনয়নপত্র ছাত্রছাত্রীরা তুলেছে। জমা পড়েছে ৬টি।’’

প্রথম দিনেই অশান্তির পরে কলেজ কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশঙ্কায়। অধ্যক্ষ শান্তি কুণ্ডু বলেন, ‘‘মনোনয়ন তোলার প্রথম দিনই যে রকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হল, তা অব্যাহত থাকলে কী ভাবে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে, জানি না। আমরা আজ, মঙ্গলবার জেলাশাসকের কাছে যাব। তিনি যা বলবেন, সেই মোতাবকে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’’ বুধবার ফের মনোনয়ন তোলার দিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Unrest Nomination Date
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE