Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ বার ভাঙচুর রামপুরহাট হাসপাতালে

পড়শি মুর্শিদাবাদ থেকে নলহাটিতে বিয়ে বাড়িতে এসে হঠাৎ-ই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তরুণীটি। হাসপাতালে ভর্তির আধ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। আর তার পরেই খেপে উঠলেন মৃতের আত্মীয়-পরিজন।

ক্ষোভ। হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

ক্ষোভ। হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রামপুরহাট শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৭ ০২:০০
Share: Save:

পড়শি মুর্শিদাবাদ থেকে নলহাটিতে বিয়ে বাড়িতে এসে হঠাৎ-ই অসুস্থ হয়ে পড়েছিল তরুণীটি। হাসপাতালে ভর্তির আধ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়। আর তার পরেই খেপে উঠলেন মৃতের আত্মীয়-পরিজন। হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঢুকে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ উঠল তাঁদের বিরুদ্ধে। এমনকী, সুপার ও অন্যান্য কর্মীদের শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করার অভিযোগও উঠেছে।

বৃহস্পতিবার দুপুরের ওই ঘটনায় চার মাসের মধ্যেই ফের শিরোনামে রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতাল। ঘটনায় কোনও পক্ষই এখনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। খবর পেয়ে তিনটি থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে যান এসডিপিও (রামপুরহাট)। তবে, ভাঙচুরের ঘটনায় পুলিশ কাউকে আটক বা গ্রেফতারও করেনি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গাফিলতির অভিযোগ মানেননি।

হাসপাতাল ও পরিবার সূত্রের খবর, মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর থানার চাঁওয়াপাড়ার তরুণী পমি বিবি এ দিন এক বোনের বিয়ে উপলক্ষে বীরভূমের নলহাটি থানার পাইকপাড়া গ্রামে এসেছিলেন। সেখানে হঠাৎ-ই বছর চব্বিশের ওই তরুণী পেট ব্যথা ও বমির উপসর্গ নিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিজনরা তাঁকে নিয়ে দুপুর ১টা ২৩ মিনিট নাগাদ রামপুরহাট হাসপাতালে ভর্তি করেন। জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুপ্রিয় দাস পমিকে পরীক্ষা করেন। তাঁর দাবি, পমির ‘সেরিব্রোভাসকুলার অ্যাক্সিডেন্ট’ বা ‘ব্রেন স্ট্রোক’ (মস্তিষ্কে স্বাভাবিক রক্ত সঞ্চালন বাধাপ্রাপ্ত হওয়া) হয়েছিল। হাসপাতাল সুপার সুবোধকুমার মণ্ডলের দাবি, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের পরে মহিলা বিভাগে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ইঞ্জেকশন, ওষুধ ও অক্সিজেন দিয়ে ওই রোগীর চিকিৎসা শুরু করা হয়েছিল। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে পমি মারা যান।

তার পরেই ক্ষুব্ধ রোগীর পরিজন ভাঙচুর করেন বলে অভিযোগ। সুপার জানান, রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন মহিলা বিভাগে নার্সদের ঘরে ঢুকে ইঞ্জেকশন, স্যালাইন বোতল, স্পিরিটের বোতল ভাঙচুর করে। মহিলা বিভাগ ছাড়াও জরুরি বিভাগ, ড্রেসিং রুম ও রোগী সহায়তা কেন্দ্রেও ভাঙচুর চালানো হয়। সুবোধবাবুর অভিযোগ, ‘‘রোগীর পরিজন আমাকে এবং কর্তব্যরত নার্স-কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। শারীরিক ভাবে নিগ্রহও করা হয়।’’

পরিজনেরা অবশ্য ভাঙচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁদের দাবি, তাঁরা নন, ভাঙচুরে বাইরের লোকেরা জড়িত। পমির মাসতুতো দাদা শহিদুল আলির অভিযোগ, বোনকে ভর্তি করার পরে মহিলা বিভাগে কোনও চিকিৎসক ছিলেন না। রোগী যন্ত্রণায় কাতর হলেও নার্সেরা ইঞ্জেকশন দিতে দেরি করেন। দেওয়ার কথা বললে নার্সেরা তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। এমনকী, পমিকে অক্সিজেন দিতেও দেরি করা হয় বলে অভিযোগ। শহিদুলের দাবি, ‘‘বারবার রোগীর যন্ত্রণার কথা বলা হলেও মহিলা বিভাগের চিকিৎসক অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় গুরুত্ব দেননি। উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবেই জ্বলজ্যান্ত বোনকে আমরা হারালাম।’’

ঘটনার পরে হাসপাতালে অরিন্দমবাবুর দেখা মেলেনি। মোবাইল বেজে গেলেও তিনি ফোন ধরেননি। সুবোধবাবু বলেন, ‘‘চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ এ দিকে, গোটা ঘটনায় ফের প্রশ্নের মুখে হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাসচারেক আগেও একের পর এক চিকিৎসক নিগ্রহ, নিরাপত্তা কর্মীদের হেনস্থার ঘটনায় শিরোনামে ছিল এই হাসপাতাল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Rampurhat hospital Vandalism
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE